উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব এবার আংশিক সময়ের শিক্ষকদের হাতে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ কি সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট? পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি থাকলে তার প্রভাব গভীর হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি আংশিক সময়ের শিক্ষকদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। সাধারণত, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অভিজ্ঞ শিক্ষকদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু এবার শিক্ষক সংকট এবং সময়ের চাপের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পর্ষদের দাবি, এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। তবে, এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
প্রতি বছর উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এত বিপুল সংখ্যক খাতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল্যায়ন করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের সংখ্যা এই কাজের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় পর্ষদকে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়েছে। আংশিক সময়ের শিক্ষকরা সাধারণত অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন এবং তাদের অনেকেরই দীর্ঘদিনের শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা নাও থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, তাদের উপর এত বড় দায়িত্ব দেওয়া কতটা যুক্তিসংগত, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে তামিলনাডুতে একই ধরনের পরিস্থিতিতে আংশিক শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছিল। সেখানে মূল্যায়নে ভুলের অভিযোগ উঠেছিল, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে এমন পরিস্থিতি এড়াতে পর্ষদ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, পর্ষদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিটি খাতা দু’বার চেক করা হবে এবং কোনো অসঙ্গতি দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরেকটি দিক থেকে বিষয়টি দেখলে, শিক্ষার্থীদের মনোভাবও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক মনে করছেন, আংশিক শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার অভাবে মূল্যায়নে ভুল হতে পারে। একজন অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে সারা বছর পরিশ্রম করেছে। যদি খাতা ঠিকমতো না দেখা হয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।” এই আশঙ্কা অমূলক নয়, কারণ উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরির ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।
শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করেন, আংশিক শিক্ষকদের নিয়োগের আগে তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, “খাতা দেখা শুধু নম্বর দেওয়ার কাজ নয়, এটা শিক্ষার্থীর পরিশ্রমকে সঠিকভাবে বিচার করার প্রক্রিয়া। এর জন্য অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ববোধ দরকার।” তিনি আরও যোগ করেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব, তবে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়।
শেষ পর্যন্ত, এই ব্যবস্থা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। পর্ষদের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায়বিচার করা। যদি মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা বজায় থাকে, তবে এই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু যদি ত্রুটি ধরা পড়ে, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সবাই এখন অপেক্ষায় আছে, দেখার জন্য যে এই নতুন পদক্ষেপ কী ফল দেয়।