Hills shut down over bonus demand: দার্জিলিং পাহাড়ে চা শ্রমিকদের বোনাস দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ডাকা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্ধের বিরোধিতা করছেন তিনি এবং এই বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক চলছে।
দার্জিলিংয়ের ৮৭টি চা বাগানের প্রায় ৫৫,০০০ শ্রমিক বোনাসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা বেতনের ২০% হারে বোনাস চাইছেন। কিন্তু চা বাগান মালিকরা বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৮.৩৩% বোনাস দেওয়া সম্ভব।
গত কয়েক বছর ধরে দার্জিলিংয়ের চা শিল্প নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে পাহাড়ে ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে ধর্মঘট চলার ফলে চা উৎপাদন ৯ মিলিয়ন কেজি থেকে কমে ৬.৫ মিলিয়ন কেজিতে নেমে আসে। এর পাশাপাশি শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০% বেড়েছে। ফলে অধিকাংশ বাগানের অবস্থা খুবই খারাপ।
Rahul Dravid Returns 2.5 Crore Rupees: রাহুল দ্রাবিড়ের মহানুভবতা: ২.৫ কোটি টাকা ফেরালে
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের (DTA) প্রধান উপদেষ্টা সন্দীপ মুখার্জি বলেছেন, “দার্জিলিং চা শিল্প যে সংকটের মুখোমুখি, তা বিবেচনা করে ২০% হারে বোনাস দেওয়া অসম্ভব”।
অন্যদিকে, ট্রেড ইউনিয়নগুলো ২০% হারে বোনাসের দাবি থেকে সরে আসতে রাজি নয়। ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সমর্থিত হিল টেরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জে.বি. তামাং বলেছেন, কম হারে বোনাস মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন অংশে সম্পূর্ণ বন্ধ পালিত হয়েছে। চা শ্রমিকরা ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করেছেন ২০% বোনাসের দাবিতে।
এই পরিস্থিতিতে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA) এলাকার চা বাগানগুলোতে চলমান বোনাস বিরোধ নিষ্পত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, শ্রম দপ্তর একটি পরামর্শ জারি করতে পারে যেখানে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ১৬% হারে বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
দার্জিলিংয়ের চা শিল্পের সংকট দীর্ঘদিনের। গত এক দশকে উৎপাদন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। ২০১১ সালে যেখানে ১২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হতো, ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬.৮৭ মিলিয়ন কেজিতে।
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বি.কে. সারিয়া বলেছেন, “২০১৭ সালের ১০৭ দিনের বন্ধের প্রভাব এখনও আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চা গাছের পূর্ণ বৃদ্ধি পেতে ৭-৮ বছর লাগে। প্রধান মরসুমে অবহেলা চা গাছের স্বাস্থ্যকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোনো সরকারি সংস্থা এই সংকট কাটাতে আমাদের সাহায্য করেনি”।
আগে দার্জিলিং চায়ের ৭৫% রপ্তানি হতো। কিন্তু বন্ধ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারিয়া বলেছেন, “জাপান দশকের পর দশক ধরে আমাদের সেরা চা আমদানি করত। কিন্তু দার্জিলিং থেকে সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। অন্য আমদানিকারকরাও তাদের ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে এবং কেউ কেউ অন্য চায়ের দিকে ঝুঁকেছে”।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, দার্জিলিংয়ের অনেক চা বাগানে উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে পার্থক্য প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দক্ষ চা শ্রমিকরা। একজন চা শিল্প বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “যিনি দার্জিলিং চা শিল্পে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন এবং সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, তিনি হলেন সেই চা তোলা শ্রমিক যিনি প্রতিদিন সব আবহাওয়ায় তার নিপুণ হাতে পাতা তুলে বিশ্বের সেরা চা উৎপাদন করেছেন”।
চা শিল্পে বড় ধাক্কা: জানুয়ারি-জুলাই ‘২৪-এ উৎপাদন ১৩.৪% কমেছে
দার্জিলিংয়ের ৮৭টি চা বাগানে মোট প্রায় ৫৫,০০০ শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩২ টাকা। এছাড়া তারা বোনাস, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, আবাসন, জ্বালানি, প্রতিরক্ষামূলক পোশাক, কম্বল, ছাতা, এপ্রন, খাদ্যশস্য ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পান। শিল্প সূত্রে জানা গেছে, এসব সুবিধা মিলিয়ে একজন শ্রমিকের দৈনিক পারিশ্রমিক প্রায় ৩৫০ টাকা।
তবে ট্রিণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সভাপতি অলোক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, দার্জিলিংয়ের ১৫-২০টি বাগান বর্তমানে মজুরি ও বোনাস দিতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।
চক্রবর্তী আরও বলেছেন, “দার্জিলিং চা শ্রমিকদের বেশিরভাগ সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে। তারা অন্য সম্ভাবনার খোঁজে বাগান ছেড়ে চলে গেছে। গত ১৫০ বছরে চা বাগানের ভিতরের জনসংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু বাগানগুলো সম্প্রসারিত হয়নি… এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শ্রমিকদের প্রাপ্য অন্যান্য সুবিধার ওপরেও চাপ পড়েছে”।
এর ফলে অনুপস্থিতি বেড়েছে, যা উৎপাদন ও গুণমান কমিয়ে দিয়েছে। চক্রবর্তী বলেছেন, “এটা আবার লাভজনকতাকে প্রভাবিত করছে, যা শ্রমিকদের শিল্প থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এটা একটা দুষ্টচক্র যা থেকে শিল্প বেরিয়ে আসতে পারবে না যতক্ষণ না কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে একটি স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসে”।
দার্জিলিং চা ভারতের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) ট্যাগ পাওয়া পণ্য। কিন্তু এর মর্যাদা সত্ত্বেও দার্জিলিংয়ের ৮৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের অবস্থার গত কয়েক দশকে কোনো উন্নতি হয়নি।