বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটি চাঞ্চল্যকর দাবি তুলেছে। তারা বলছে যে, সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীতে হিন্দু সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ব্যাপকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। এই দাবি উঠে এসেছে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে।
গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার থেকে দেশের ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘুদের উপর কমপক্ষে ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের হিন্দুদের উপর বাড়ছে হামলা, উদ্বেগ প্রকাশ ছাত্রছাত্রীদের
এই পরিস্থিতিতে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে তারা বলেছে, “আমরা সুরক্ষা চাই কারণ আমাদের জীবন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। আমরা রাতে জেগে থাকছি, আমাদের বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছি। আমি আমার জীবনে এমন কিছু কখনও দেখিনি। আমরা দাবি করছি যে সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার করুক।”
পরিষদের একজন সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেছেন, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তিনি ইউনুসকে এই সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে হিংসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “যখন জনগণের বিজয় তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা দুঃখ ও ভারী হৃদয়ে লক্ষ্য করছি যে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব হিংসা চালিয়ে এই অর্জনকে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে।”
পরিষদের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেছেন, “সংখ্যালঘুদের আক্রমণকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যদি কোনো সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কারণে আক্রমণ করা হয়, তাও গ্রহণযোগ্য নয়। যে কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং লুটপাট করা বিচারের দিকে নিয়ে যাবে না।”
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য এখন অন্যদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি নিজেও একজন বন্ধুর বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার রবিবার (১১ আগস্ট, ২০২৪) জানিয়েছে যে তারা শেখ হাসিনার পতনের পর হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাগুলি সমাধানের জন্য কাজ করছে।
অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, “কিছু স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা হয়েছে।” মন্ত্রিসভা জানিয়েছে যে তারা “এই ধরনের জঘন্য হামলা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য প্রতিনিধি সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে অবিলম্বে বৈঠক করবে।”
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিবাদে নিহত প্রতিবাদীদের পরিবারকে “সহায়তা” দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তারা অশান্তিতে আহতদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অর্থ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপ-মুখপাত্র ফারহান হাক বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার মধ্যে যেকোনো জাতিগত ভিত্তিক হামলার বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, “আমরা যা স্পষ্ট করেছি তা হল, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যে সহিংসতা ঘটেছে তা বন্ধ করা হয়। নিশ্চয়ই, আমরা যেকোনো জাতিগত ভিত্তিক হামলা বা জাতিগত ভিত্তিক সহিংসতার প্ররোচনার বিরোধিতা করি।”
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটি অলাভজনক সংগঠন যা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি কোনো ধর্ম বা রাজনৈতিক দল বা সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয় এবং অর্থনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ, একটি ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সংগঠন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অন্তর্বর্তী সরকারকে তার নাগরিকদের ধর্ম ও জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে রক্ষা করার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।
যুব পরিষদের সচিব, যিনি নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন, বলেছেন, “যে কেউ ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের একটি সংখ্যালঘু কমিশন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তাদের সবাইকে জমির অধিকার দেওয়া উচিত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থাকা উচিত।”
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল এবং উদ্বেগজনক। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা রয়েছে যে তারা এই সমস্যাগুলি সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।