Historical Event in India on June 26: ভারতের ইতিহাসে ২৬ শে জুন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠেছে। এই দিনটি বিভিন্ন ঘটনা, ব্যক্তিত্ব ও সিদ্ধান্তের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। এখানে আমরা সেইসব ঘটনার কথা তুলে ধরছি যা ভারতের ইতিহাসে এই দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ২৬ শে জুন ভারতের ইতিহাসে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনেই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এর পটভূমিতে ছিলো রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং একটি বিচারিক রায়। ১২ জুন ১৯৭৫ সালে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ আনে এবং তার সংসদীয় আসন বাতিল করে। এই রায়ের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জরুরি অবস্থার সময় ভারতীয় সংবিধানের বহু মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখা হয়। সংবাদমাধ্যমে কঠোর সেন্সরশিপ আরোপিত হয় এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেফতার করা হয়। এই সময়ে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং এই পরিস্থিতি ২১ মাস ধরে চলতে থাকে, যা ২১ মার্চ ১৯৭৭ সালে শেষ হয়।
২৬ শে জুন, ১৯৩৫ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করে এবং দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যাংকটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ।
রিজার্ভ ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এছাড়া এটি বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৬৩ সালের ২৬ শে জুন, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৫০ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ তার জীবদ্দশায় শিক্ষা ও সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার নেতৃত্বে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভিত্তি স্থাপন হয় এবং তিনি দেশকে স্থিতিশীল পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
২৬ শে জুন, ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশাখাপত্তনম স্টীল প্ল্যান্টের(Visakhapatnam Steel Plant) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি ভারতের অন্যতম প্রধান স্টীল উৎপাদন কেন্দ্র এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশাখাপত্তনম স্টীল প্ল্যান্ট বর্তমানে ভারতের প্রধান স্টীল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির একটি। এটি ভারতের অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখে চলেছে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
২৬ শে জুন, ১৯৬৫ সালে ভারতের সীমানা সুরক্ষা বাহিনী (BSF) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধা-সামরিক বাহিনী এবং দেশের সীমানা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই বাহিনী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
BSF ভারতের সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার, অস্ত্র পাচার এবং অন্যান্য সীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া, এটি দেশের অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করে।
১৯৯৯ সালের ২৬ শে জুন, জাতীয় রূপান্তর জনতা দল (NTJD) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের একটি রাজনৈতিক দল, যা মূলত বিহার রাজ্যে সক্রিয়। দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে চন্দ্রশেখর। দলটি মূলত সামাজিক ন্যায় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।
NTJD বিহার এবং অন্যান্য রাজ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। দলটি দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে এবং বিভিন্ন সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করে।
২৬ শে জুন আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়। জাতিসংঘ এই দিনটি নির্ধারণ করেছে নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী নির্যাতন এবং অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সমর্থন জানানোর উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।
বিশ্বব্যাপী এই দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচি, সেমিনার, এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই দিনটিতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সমর্থনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
২৬ শে জুন ভারতের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী ভারতকে তার বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। জরুরি অবস্থার সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর যে চ্যালেঞ্জ এসেছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত আরও শক্তিশালী হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা এবং এর কার্যক্রম দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদের মত নেতার মৃত্যু দেশের জন্য একটি বড় ক্ষতি হলেও তার অবদান আজও স্মরণীয়।
২৬ শে জুন ভারতের ইতিহাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। জরুরি অবস্থা, রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদের মৃত্যু, এবং বিশাখাপত্তনম স্টীল প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন—এই সমস্ত ঘটনা ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এগুলি আমাদের দেশের রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
মন্তব্য করুন