Kolkata’s first petrol pump: কলকাতার সিআর এভিনিউতে অবস্থিত জটাধারী দ এন্ড গ্র্যান্ডসন্স নামক পেট্রোল পাম্পটি ভারতের প্রাচীনতম জ্বালানি কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি এবং সম্ভবত কলকাতার প্রথম কার্বসাইড রিফিউলিং সুবিধা। ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পেট্রোল পাম্পটি বর্তমানে ৯২ বছর বয়সী এবং শহরের অন্য কোনও স্থানের তুলনায় পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।এই ঐতিহাসিক পেট্রোল পাম্পের বর্তমান মালিক কাঞ্চন দ জানিয়েছেন যে তাঁর পূর্বপুরুষরা ১৯২০-এর দশকে ক্যানিং স্ট্রিটে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পেট্রোল বিক্রি করতেন। সেই সময় তাঁদের পরিবারের বাজ বাজে একটি জমিদারি ছিল যেখানে তারা একটি তেল সংরক্ষণাগার স্থাপন করেছিলেন। সেখানে যুক্তরাজ্য থেকে সমুদ্রপথে আমদানি করা গ্যাসোলিন সংরক্ষণ করা হত।
ভারতে পেট্রোলিয়াম বিপ্লবের সময়, এশিয়াটিক পেট্রোলিয়াম (ইন্ডিয়া) বার্মা অয়েল কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে বার্মা-শেল অয়েল স্টোরেজ অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটিং কোম্পানি গঠন করার পর, দ পরিবারের পূর্বপুরুষ ১৯২৯ সালে এই পেট্রোল পাম্পটি নির্মাণ করেন। কাঞ্চন দ স্মরণ করেন যে ১৯৬৫ সালে, যখন তিনি প্রায় ১০ বছর বয়সী ছিলেন, তখন পেট্রোলের দাম ছিল প্রতি লিটারে ৯০ পয়সা। সেই সময় একগ্যালন বা ৫ লিটার পেট্রোলের জন্য কেউ ৫ টাকার নোট দিলে তারা ৫০ পয়সা ফেরত দিতেন।
বর্তমানে, কলকাতায় পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ১০২ টাকা ০৮ পয়সা এবং ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৯৩ টাকা ০২ পয়সা। এই মূল্যবৃদ্ধি শুধুমাত্র এই প্রাচীন পেট্রোল পাম্পকেই প্রভাবিত করেনি, বরং পশ্চিমবঙ্গের শতাধিক পেট্রোল পাম্প বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপের মুখোমুখি হয়েছে। জটাধারী দ এন্ড গ্র্যান্ডসন্স পেট্রোল পাম্পটি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আধুনিক করেছে। তারা একটি সার্ভিস স্টেশন এবং একটি বড় অফিস যুক্ত করেছিল, যা পরে ইন-অ্যান্ড-আউট স্টোর দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
বর্তমানে, তারা তাদের সামনের অংশ ১০০ ফুট পর্যন্ত বাড়িয়েছে যাতে গাড়িগুলি সহজে প্রবেশ ও বের হতে পারে।দ পরিবার বর্তমানে কলকাতায় তিনটি জ্বালানি কেন্দ্র পরিচালনা করে – সিআর এভিনিউতে প্রাচীনতম পাম্পটি ছাড়াও জেএম এভিনিউতে একটি এবং গড়িয়াহাটে আরেকটি। এছাড়াও, এই পরিবার তাদের যোড়াসাঁকোর বাড়িতে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপূজা আয়োজন করে আসছে ।তবে, গত এক বছরে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি কাঞ্চন দকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় আছি, কিন্তু এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। আগে লোকেরা আমাদের জ্বালানি কেন্দ্রে এসে তাদের ট্যাংক পূর্ণ করত। কিন্তু এখন তা নিয়মিত ঘটে না এবং যা একসময় লাভজনক ব্যবসা ছিল তা এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।”
তবে, এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, কাঞ্চন দ তাঁর পূর্বপুরুষদের শুরু করা এই ঐতিহ্য বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা এই ব্যবসা চালিয়ে যাব এবং আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তা করবে।”এই ৯২ বছর পুরনো পেট্রোল পাম্পটি শুধু একটি ব্যবসা নয়, এটি কলকাতার ইতিহাসের একটি জীবন্ত সাক্ষী। এটি দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্পের বিকাশ, শহরের পরিবর্তন এবং অর্থনীতির উত্থান-পতনের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পেট্রোলের দাম ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া – এই যাত্রা প্রত্যক্ষ করেছে এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০০টি পেট্রোল পাম্প বন্ধ হওয়ার মুখে রয়েছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেলেও পেট্রোল পাম্প মালিকদের কমিশন অপরিবর্তিত রয়েছে, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, জটাধারী দ এন্ড গ্র্যান্ডসন্স এর মতো প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য লড়াই করছে।এই পেট্রোল পাম্পের ইতিহাস শুধু একটি ব্যবসার গল্প নয়, এটি কলকাতার শহরায়ন, পরিবহন ব্যবস্থার বিকাশ এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি জীবন্ত দলিল। এটি দেখিয়ে দেয় কীভাবে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারে এবং সেই সাথে তার ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে।
কলকাতার ট্রাম: ১৫১ বছরের ঐতিহ্য শেষ, শুধু একটি রুটে চলবে ‘হেরিটেজ রাইড’
কলকাতার ট্রাম: ১৫১ বছরের ঐতিহ্য শেষ, শুধু একটি রুটে চলবে ‘হেরিটেজ রাইড’
যদিও বর্তমান পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং, তবুও জটাধারী দ এন্ড গ্র্যান্ডসন্স এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের সেবা অব্যাহত রেখেছে। এটি প্রমাণ করে যে ব্যবসায়িক সাফল্য শুধু অর্থনৈতিক লাভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্য বজায় রাখা, গ্রাহক সেবা এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা।কলকাতার এই প্রথম পেট্রোল পাম্পের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিটি ব্যবসা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব ইতিহাস বহন করে।
এই ইতিহাস শুধু সেই প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং সমগ্র শহরের, এমনকি দেশেরও ইতিহাসের একটি অংশ। এই ধরনের প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলি সংরক্ষণ করা এবং তাদের গল্প তুলে ধরা আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।শেষ পর্যন্ত, জটাধারী দ এন্ড গ্র্যান্ডসন্স এর গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে পরিবর্তন অনিবার্য, কিন্তু আমাদের শিকড়ের সাথে সংযোগ বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই পেট্রোল পাম্প কলকাতার অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং কোথায় যাচ্ছি।