History of Indian postal system: ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। মৌর্য সাম্রাজ্যের সময় থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসনকাল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময় পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে India Post নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের বৃহত্তম ডাক নেটওয়ার্ক হিসেবে পরিগণিত।
ভারতে ডাক ব্যবস্থার ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের যেতে হবে প্রাচীন মৌর্য যুগে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ নাগাদ) একটি প্রাথমিক ডাক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। এই ব্যবস্থায় পায়রা ব্যবহার করে বার্তা আদান-প্রদান করা হত। মৌর্য সাম্রাজ্যের বিশাল এলাকা জুড়ে এই পদ্ধতিতে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হত।
পোস্ট অফিস টাইম ডিপোজিট: ২ লাখ টাকা সুদ কামানোর সুবর্ণ সুযোগ!
দিল্লি সুলতানি আমলে ডাক ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়। ১৩শ শতাব্দীতে কুতুবউদ্দিন আইবক একটি বার্তাবাহক পোস্ট সিস্টেম চালু করেন। পরবর্তীতে আলাউদ্দিন খিলজি ১২৯৬ সালে এই ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করেন, ঘোড়া ও পদাতিক বার্তাবাহক নিয়োগ করে।মুঘল আমলে ডাক ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়। সম্রাট আকবরের সময় থেকে “দাক-চৌকি” নামে একটি সুসংগঠিত ডাক ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট দূরত্বের পর পর চৌকি বা ডাক স্টেশন স্থাপন করা হত, যেখানে ঘোড়া ও বার্তাবাহক বদল করা হত।
ভারতে আধুনিক ডাক ব্যবস্থার সূচনা হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে। ১৭২৭ সালে কলকাতায় প্রথম ডাকঘর স্থাপিত হয়। এটি ছিল কোম্পানির নিজস্ব যোগাযোগের জন্য। তবে কিছু ঐতিহাসিকের মতে, ১৭৭২ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে দেশের প্রথম ডাকঘর স্থাপিত হয়েছিল।১৭৭৪ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস সর্বসাধারণের জন্য ডাক ব্যবস্থা চালু করেন। এই সময় থেকে সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট মাশুল দিয়ে চিঠিপত্র পাঠাতে পারতেন। ১৮৩৭ সালে ভারতীয় ডাকঘর আইন পাস হয়, যা ডাক ব্যবস্থাকে আইনি কাঠামো দেয়।
১৮৫৪ সালের ১লা অক্টোবর ভারতীয় ডাক বিভাগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। লর্ড ডালহৌসি তখন ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি ডাক ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করেন এবং India Post Office Act 1854 পাস করান। এই আইনের মাধ্যমে:
বিষয় | সংখ্যা |
---|---|
মোট ডাকঘর | ৭০০ |
পোস্ট অফিস | ৬৪৫ |
রিসিভিং হাউস | ৫৫ |
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতে মোট ডাকঘরের সংখ্যা ছিল ২৩,৩৪৪। স্বাধীনতার পর ডাক বিভাগ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। ২০১৬ সাল নাগাদ দেশে ডাকঘরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৫ লক্ষেরও বেশি, যার ৯০% গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত।
২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত India Post-এর অবস্থা:
বিষয় | সংখ্যা |
---|---|
মোট ডাকঘর | ১,৫৬,৪৩৪ |
গ্রামীণ ডাকঘর | ১,৪১,০৫৫ |
শহুরে ডাকঘর | ১৫,৩৭৯ |
প্রধান ডাকঘর | ৮১০ |
উপ-ডাকঘর | ২৪,৩১৩ |
গ্রামীণ ডাক সেবক ডাকঘর | ১,৩১,৩১১ |
বর্তমানে India Post শুধু চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিভিন্ন আর্থিক সেবাও প্রদান করে থাকে, যেমন:
ইন্টারনেট ও ই-মেইলের যুগে চিঠিপত্রের ব্যবহার কমে যাওয়ায় India Post-কে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে এই প্রতিষ্ঠান নিজেকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা করছে। ই-কমার্স ডেলিভারি, ডিজিটাল সেবা ইত্যাদির মাধ্যমে India Post নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার ইতিহাস দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিবর্তনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছে। ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে India Post নিজেকে কীভাবে প্রাসঙ্গিক রাখতে পারে, সেটাই হবে ভবিষ্যতের মূল লক্ষ্য।