Who is the Most Brutal Leader in History?: মানবতার ইতিহাসে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যাদের নাম শুনলেই মানুষের মনে ভয় ও ঘৃণার সঞ্চার হয়। তাদের নৃশংসতা ও অমানবিকতার কারণে এরা পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে পরিচিত। এই তালিকায় নাৎসি জার্মানির নেতা অ্যাডলফ হিটলার থেকে শুরু করে সোভিয়েত ইউনিয়নের জোসেফ স্টালিন, কম্বোডিয়ার পল পট, চীনের মাও সে তুং প্রমুখ নাম রয়েছে।
ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস মানুষদের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারের নাম সবার আগে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে গণহত্যা করেছিলেন। এছাড়া তার নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনী লক্ষ লক্ষ পোল্যান্ডবাসী, রোমা জনগোষ্ঠী, সমকামী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হত্যা করে। হিটলারের নীতির কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্টালিনও এই তালিকায় শীর্ষস্থানীয়। তার শাসনামলে প্রায় ২ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল।
পৃথিবীর নতুন ‘মিনি মুন’ 2024 PT5: কী এটি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
স্টালিনের নির্দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে গুলাগ শ্রমশিবিরে পাঠানো হয়, যেখানে অমানবিক পরিস্থিতিতে তাদের মৃত্যু হয়। এছাড়া ইউক্রেনে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন।কম্বোডিয়ার নেতা পল পট ছিলেন আরেক নৃশংস শাসক। মাত্র ৪ বছরের শাসনামলে তিনি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেন। তার খমের রুজ বাহিনী শিক্ষিত ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের নির্বিচারে হত্যা করে।চীনের কমিউনিস্ট নেতা মাও সে তুংও এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য। তার “গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড” ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে প্রায় ৪-৭ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া তিনি লক্ষ লক্ষ বিরোধী ব্যক্তিকে হত্যা করেন।ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ছিলেন আরেক নৃশংস শাসক। তিনি কুর্দি জনগোষ্ঠীর উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেন।
এছাড়া তার নির্দেশে লক্ষাধিক শিয়া মুসলমানকে হত্যা করা হয়।উগান্ডার ইদি আমিন ছিলেন আফ্রিকার সবচেয়ে নৃশংস শাসকদের একজন। তার ৮ বছরের শাসনামলে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়। তিনি এশীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেন এবং বিরোধীদের নির্মূল করেন।রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা ছিলেন প্রাচীন যুগের অন্যতম নৃশংস শাসক। তিনি নিজের খেয়াল-খুশি মতো মানুষকে হত্যা করতেন এবং নির্যাতন করতেন। এমনকি নিজের বোনদের সাথেও অবৈধ সম্পর্ক রাখতেন।মধ্যযুগের রুমানিয়ার শাসক ভ্লাদ দ্য ইমপেলার ছিলেন আরেক নৃশংস ব্যক্তি। তিনি হাজার হাজার মানুষকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করেন। এজন্য তাকে “ড্রাকুলা” নামেও ডাকা হতো।জাপানের সম্রাট হিরোহিতোর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি সেনাবাহিনী চীন ও কোরিয়ায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়। নানকিং গণহত্যায় প্রায় ৩ লক্ষ চীনা নাগরিককে হত্যা করা হয়।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং ও তার বংশধররা দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে শ্রমশিবিরে পাঠানো হয়েছে এবং দেশের জনগণকে চরম দারিদ্র্যে রাখা হয়েছে।রাশিয়ার ইভান দ্য টেরিবল ছিলেন মধ্যযুগের আরেক নৃশংস শাসক। তিনি নিজের পুত্রকেও হত্যা করেছিলেন। তার নির্দেশে হাজার হাজার মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খান ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস আক্রমণকারী। তার নেতৃত্বে মঙ্গোল বাহিনী এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ চালিয়ে কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করে।নাৎসি জার্মানির হাইনরিখ হিমলার ছিলেন এসএস বাহিনীর প্রধান। তিনি ইহুদি নিধনের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তার নির্দেশেই লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়।স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের প্রধান টমাস দে টরকুয়েমাদা ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম নৃশংস ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষকে ধর্মীয় অভিযোগে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
“মাটি নয়, বিচার চাই”: সোনাগাছির যৌনকর্মীদের অভিনব প্রতিবাদ আরজি কর কাণ্ডে
যুগোস্লাভিয়ার স্লোবোদান মিলোসেভিচ ছিলেন ১৯৯০ এর দশকের অন্যতম নৃশংস নেতা। তার নির্দেশে বসনিয়া ও কসোভোতে ব্যাপক জাতিগত নিধন চালানো হয়।রুয়ান্ডার হুতু চরমপন্থীরা ১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ দিনে প্রায় ৮ লক্ষ তুৎসি জনগোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা করে। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর অন্যতম দ্রুততম গণহত্যা।সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির দারফুর অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিলেন। তার নির্দেশে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়।নাৎসি জার্মানির ডাক্তার জোসেফ মেঙ্গেলে ছিলেন অত্যন্ত নৃশংস ব্যক্তি। তিনি আউশভিৎস শিবিরে বন্দিদের উপর নির্মম চিকিৎসা পরীক্ষা চালাতেন।
ইতালির ফ্যাসিবাদী নেতা বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন আরেক নৃশংস শাসক। তার নির্দেশে হাজার হাজার বিরোধীকে হত্যা করা হয় এবং ইথিওপিয়ায় গণহত্যা চালানো হয়।ইরানের আয়াতোল্লাহ খোমেইনি ছিলেন একনায়কতান্ত্রিক ধর্মীয় নেতা। তার শাসনামলে হাজার হাজার বিরোধীকে হত্যা করা হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।এই তালিকায় আরও অনেক নৃশংস ব্যক্তির নাম যোগ করা যায়। তবে উপরোক্ত ব্যক্তিরাই ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস মানুষ হিসেবে বিবেচিত হন। তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে এবং মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কের অধ্যায় রচিত হয়েছে।