Honor X9c full review: স্মার্টফোনের জগতে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে চলেছে Honor X9c 5G। আগামী ৭ জুলাই ভারতে এই ফোনটি লঞ্চ হওয়ার কথা রয়েছে, যা প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। বিশেষত মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার লক্ষ্যে Honor তাদের এই নতুন স্মার্টফোনটি নিয়ে এসেছে। এই ফোনের অসাধারণ ব্যাটারি লাইফ, উন্নত ক্যামেরা সিস্টেম এবং টেকসই ডিজাইন এটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
Honor X9c 5G শুধুমাত্র Amazon-এ একচেটিয়াভাবে পাওয়া যাবে এবং এর প্রত্যাশিত দাম প্রায় ২৭,৯৯০ টাকা। Qualcomm Snapdragon 6 Gen 1 প্রসেসর, ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং ৬৬০০ এমএএইচ ব্যাটারি সহ এই ফোনটি মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে একটি আকর্ষণীয় পছন্দ হয়ে উঠতে পারে।
Honor X9c 5G লঞ্চের তারিখ ও প্রাপ্যতা
Honor India আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে Honor X9c 5G আগামী ৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে ভারতে লঞ্চ হবে এবং ১২ জুলাই থেকে Amazon-এ বিক্রি শুরু হবে। এই স্মার্টফোনটি আন্তর্জাতিক বাজারে নভেম্বর ২০২৪ সালে প্রথম চালু হয়েছিল এবং এখন ভারতীয় ভোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
Amazon-এ ইতিমধ্যে একটি প্রমোশনাল পেজ চালু হয়েছে, যেখানে গ্রাহকরা ফোনটির বিভিন্ন ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে জানতে পারবেন। কোম্পানি জানিয়েছে যে এটি একচেটিয়াভাবে Amazon প্ল্যাটফর্মেই পাওয়া যাবে, যা অনলাইন শপিং করতে পছন্দ করেন এমন ক্রেতাদের জন্য সুবিধাজনক।
প্রত্যাশিত দাম ও ভ্যারিয়েন্ট
Honor X9c 5G এর ভারতীয় বাজারে প্রত্যাশিত দাম ২৭,৯৯০ টাকা। এই ফোনটি শুধুমাত্র একটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাবে – ৮জিবি RAM এবং ২৫৬জিবি স্টোরেজ সহ। এই দামে যে ফিচারগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা বিবেচনা করলে এটি মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে একটি প্রতিযোগিতামূলক দাম বলে মনে হচ্ছে।
কোম্পানি জানিয়েছে যে তারা ভারতে তাদের বিক্রয়োত্তর সেবা উন্নত করেছে এবং PSAV-এর সাথে সহযোগিতায় গ্রাহক সেবা প্রদান করবে। এটি ক্রেতাদের জন্য অতিরিক্ত আস্থার বিষয় হতে পারে।
ডিসপ্লে ও ডিজাইন ফিচার
Honor X9c 5G এ রয়েছে ৬.৭৮ ইঞ্চি কার্ভড AMOLED ডিসপ্লে যার রেজোলিউশন ১.৫K (১২২৪ x ২৭০০ পিক্সেল)। ডিসপ্লেটি ১২০Hz রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করে, যা গেমিং এবং ভিডিও দেখার সময় মসৃণ অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এর পিক ব্রাইটনেস ৪০০০ নিটস, যা সরাসরি সূর্যের আলোতেও স্ক্রীন স্পষ্ট দেখা যাবে।
ডিসপ্লেটিতে ৩৮৪০Hz PWM ডিমিং রেট রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। TÜV Rheinland থেকে Flicker-Free এবং Low Blue Light সার্টিফিকেশন পেয়েছে এই ডিসপ্লে, যা দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক।
ফোনটির ডিজাইনও বেশ আকর্ষণীয়। মাত্র ৭.৯৮ মিমি পুরুত্ব এবং ১৮৯ গ্রাম ওজন নিয়ে এটি একটি স্লিম এবং হালকা ডিভাইস। Titanium Black এবং Jade Cyan – এই দুটি রঙে পাওয়া যাবে, উভয়েই প্রিমিয়াম ম্যাট ফিনিশিং সহ।
পারফরমেন্স ও সফটওয়্যার
Honor X9c 5G এর হৃদয়ে রয়েছে Qualcomm Snapdragon 6 Gen 1 চিপসেট, যা ৪ ন্যানোমিটার প্রসেস নোডে তৈরি। এই প্রসেসর দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং মাঝারি পর্যায়ের গেমিংয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। ৮জিবি RAM এর পাশাপাশি ১২জিবি পর্যন্ত ভার্চুয়াল RAM সাপোর্ট রয়েছে, যা মাল্টিটাস্কিংয়ে সহায়ক।
সফটওয়্যারের দিক থেকে ফোনটি Android 15 ভিত্তিক MagicOS 9.0 নিয়ে আসবে। এতে রয়েছে Magic Portal ফিচার যা ক্রস-অ্যাপ ইন্টারঅ্যাকশনের জন্য এবং জেসচার-ভিত্তিক নেভিগেশন। AI অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে সিস্টেমটি ব্যবহারকারীর অভ্যাস অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেয়।
ক্যামেরা সিস্টেম
Honor X9c 5G এর ক্যামেরা সিস্টেমটি বেশ চিত্তাকর্ষক। প্রধান ক্যামেরায় রয়েছে ১০৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর f/1.8 অ্যাপারচার সহ। এতে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) এবং ইলেকট্রনিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (EIS) দুটোই রয়েছে, যা কম্পনমুক্ত ছবি এবং ভিডিও তুলতে সাহায্য করবে।
ক্যামেরায় ৩x লসলেস জুম এবং বিভিন্ন AI ফিচার রয়েছে যেমন Motion Sensing, AI Eraser এবং High-Resolution মোড। দ্বিতীয় ক্যামেরা হিসেবে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল আল্ট্রাওয়াইড লেন্স। সেলফি ক্যামেরা ১৬ মেগাপিক্সেলের, যা পাঞ্চ হোল ডিজাইনে স্ক্রীনের মধ্যে অবস্থিত।
ভিডিও রেকর্ডিংয়ের জন্য 4K@30fps এবং 1080p@30fps সাপোর্ট রয়েছে। বিভিন্ন ক্যামেরা মোড যেমন প্যানোরামা, HDR এবং LED ফ্ল্যাশও উপস্থিত।
ব্যাটারি ও চার্জিং
Honor X9c 5G এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো এর ৬৬০০ এমএএইচ সিলিকন-কার্বন ব্যাটারি। এই বিশাল ব্যাটারি তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে বলে কোম্পানির দাবি। DXOMark টেস্টে এই ফোনটি ৮৯ ঘন্টার বেশি ব্যাটারি লাইফ দেখিয়েছে, যা ব্যাটারি পারফরমেন্সে শীর্ষস্থানীয়।
চার্জিংয়ের জন্য রয়েছে ০৬W SuperCharge সাপোর্ট। ৮০% চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় ৪২ মিনিট, আর মাত্র ৫ মিনিট চার্জেই প্রায় ৭ ঘন্টার ব্যাটারি লাইফ পাওয়া যায়। এক ক্লিকে টার্বো মোড চালু করা যায় অতি দ্রুত চার্জিংয়ের জন্য।
স্থায়িত্ব ও বিল্ড কোয়ালিটি
Honor X9c 5G এর স্থায়িত্ব নিয়ে কোম্পানি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ফোনটি SGS ড্রপ রেজিস্ট্যান্স সার্টিফিকেশন পেয়েছে এবং ২ মিটার উচ্চতা থেকে পড়ে গেলেও নিরাপদ থাকবে। IP65M রেটিং রয়েছে ধুলা এবং পানি প্রতিরোধের জন্য।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে এই ফোনটি -৩০°C থেকে +৫৫°C পর্যন্ত চরম তাপমাত্রায় কাজ করতে পারে। তিন স্তরের জল প্রতিরোধী কাঠামো রয়েছে যা ৩৬০ ডিগ্রি সুরক্ষা প্রদান করে। এমনকি ৩০০০ সাইকেল স্টিল উল পরীক্ষায়ও টিকে থাকে এর বডি।
সংযোগ ও অতিরিক্ত ফিচার
Honor X9c 5G এ রয়েছে সম্পূর্ণ 5G সাপোর্ট সহ সব ধরনের নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি। Wi-Fi 802.11 a/b/g/n/ac ডুয়াল ব্যান্ড, Bluetooth 5.1, NFC (মার্ক/অঞ্চল নির্ভর), এবং USB Type-C 2.0 পোর্ট রয়েছে।
বায়োমেট্রিক নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলক। অন্যান্য সেন্সরের মধ্যে রয়েছে অ্যাক্সিলেরোমিটার, জাইরোস্কোপ, প্রক্সিমিটি এবং কম্পাস সেন্সর।
স্পিকার সিস্টেমে রয়েছে স্টেরিও সেটআপ যা কোম্পানির দাবি অনুযায়ী তিনগুণ বেশি আওয়াজ করতে পারে। তবে ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক নেই এবং FM রেডিও সাপোর্টও নেই।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ
Honor X9c 5G এর দামের পরিসরে যে সব ফোন রয়েছে তাদের সাথে তুলনা করলে এর ব্যাটারি লাইফ এবং স্থায়িত্ব এর প্রধান সুবিধা। তবে Snapdragon 6 Gen 1 প্রসেসর কিছুটা পুরানো হওয়ায় গেমিং পারফরমেন্সে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
ক্যামেরার দিক থেকে ১০৮ মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর এবং OIS থাকা এই দামের পরিসরে ভালো। তবে আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা মাত্র ৫ মেগাপিক্সেলের, যা আরও ভালো হতে পারত।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
Honor X9c 5G মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে একটি আকর্ষণীয় অপশন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ এবং টেকসই ফোন খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে। ৬৬০০ এমএএইচ ব্যাটারি এবং ২ মিটার ড্রপ রেজিস্ট্যান্স এই ফোনের মূল শক্তি।
যদিও প্রসেসর তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী, তবুও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। ক্যামেরা সিস্টেমও বেশ প্রতিশ্রুতিশীল এবং ডিসপ্লের মান উন্নত।
Honor X9c 5G এর লঞ্চের সাথে সাথে ভারতীয় মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোন বাজারে একটি নতুন প্রতিযোগী যুক্ত হবে। যারা ব্যাটারি লাইফ এবং স্থায়িত্বকে প্রাধান্য দেন, তাদের জন্য এটি অবশ্যই বিবেচনার যোগ্য একটি বিকল্প। আগামী ৭ জুলাই লঞ্চের পর এর প্রকৃত পারফরমেন্স এবং বাজারে অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।