ঘুমানোর আগে রিল দেখার নেশা? জানেন কোন চরম বিপদের দিকে এগোচ্ছেন? গবেষণায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য

Social media addiction: আপনি কি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ঘন্টার পর ঘন্টা রিল দেখেন? সাবধান! এই অভ্যাসটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে,…

Debolina Roy

 

Social media addiction: আপনি কি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ঘন্টার পর ঘন্টা রিল দেখেন? সাবধান! এই অভ্যাসটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে দীর্ঘ সময় ধরে রিল দেখার ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।চীনের হেবেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৪,৩১৮ জন তরুণ ও মধ্যবয়সী মানুষের উপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। তাদের গবেষণার ফলাফল British Medical Journal (BMC)-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে রিল দেখলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ১.৮৬ গুণ বেড়ে যায়।

রিল দেখার নেশা: স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, রাতে দীর্ঘ সময় ধরে রিল দেখার ফলে শুধু উচ্চ রক্তচাপই নয়, আরও নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে:

  • ঘুমের মান খারাপ হয়ে যায়
  • শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়
  • দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে
  • মোটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে

বেঙ্গালুরুর বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ দীপক কৃষ্ণমূর্তি বলেছেন, “রিল দেখার নেশা শুধু সময় নষ্ট করে না, এটি তরুণ ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এখনই সময় এই অ্যাপগুলো আনইনস্টল করার।”

রাতে মোবাইল ব্যবহারের ৭টি ক্ষতিকর অভ্যাস: আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছেন কি?

গবেষণার ফলাফল: চাঞ্চল্যকর তথ্য

গবেষণায় যে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তা নিম্নরূপ:

রিল দেখার সময় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
৬ ঘন্টা ৩০ মিনিটের বেশি ১.৮৬ গুণ বেশি
৭ ঘন্টার বেশি ১.৮৬ গুণ বেশি
৮ ঘন্টার বেশি ১.৮৭ গুণ বেশি

এছাড়াও দেখা গেছে, যারা রাতে ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে রিল দেখেন, তাদের মধ্যে ৪৩.৬১% লোকের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। অন্যদিকে যারা ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিটের কম সময় রিল দেখেন, তাদের মধ্যে মাত্র ২৯.৩১% লোকের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।

রিল দেখার নেশা: কেন এত ক্ষতিকর?

রাতে দীর্ঘ সময় ধরে রিল দেখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

১. ঘুমের ব্যাঘাত

রাতে দীর্ঘ সময় ধরে রিল দেখলে ঘুমের সময় কমে যায়। এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে বেশি সময় ধরে রিল দেখলে ঘুমের মান খারাপ হয়ে যায়। এর ফলে দিনের বেলায় ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

২. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা

রিল দেখার সময় আমরা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকি। দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার ফলে রক্ত চলাচল কমে যায়, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। এছাড়া শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ফলে মোটা হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৩. মানসিক চাপ

রিলের মাধ্যমে আমরা প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন তথ্য গ্রহণ করি। এর ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। রাতের বেলায় এই চাপ আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সাথে বিষণ্নতা ও উদ্বেগের সম্পর্ক রয়েছে।

৪. নীল আলোর প্রভাব

স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করে। এই হরমোন আমাদের ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে রাতে রিল দেখার ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

কীভাবে রিল দেখার নেশা থেকে মুক্তি পাবেন?

রিল দেখার নেশা থেকে মুক্তি পেতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন:

  1. স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন: রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে থেকে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার বন্ধ করুন।
  2. নাইট মোড ব্যবহার করুন: যদি রাতে ডিভাইস ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে নাইট মোড বা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন।
  3. বিকল্প কার্যক্রম খুঁজুন: রিল দেখার পরিবর্তে বই পড়া, ধ্যান করা বা হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
  4. ঘুমের রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  5. অ্যাপ ব্যবহার সীমিত করুন: ফোনে স্ক্রিন টাইম লিমিট সেট করুন বা রিল দেখার অ্যাপগুলো আনইনস্টল করুন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ডাঃ প্রশান্ত গোয়েল, শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সাইকিয়াট্রি কনসালট্যান্ট বলেছেন, “অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের স্ক্রিন টাইম সীমিত করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের উপর নজর রাখা। স্কুলগুলোও মানসিক স্বাস্থ্য প্রচার এবং ডিজিটাল মিডিয়া বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার শেখানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।”ডাঃ জি.সি. খিলনানি, পি.এস.আর.আই. ইনস্টিটিউট অফ পালমোনারি, ক্রিটিকাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের চেয়ারম্যান বলেছেন, “শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য শৃঙ্খলা শেখানো জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি এতটাই ব্যাপক হয়ে উঠেছে যে, এখন সোশ্যাল মিডিয়া ডি-অ্যাডিকশন ক্লিনিক গড়ে উঠতে শুরু করেছে।”

বিল গেটসকে ধনী ও সফল হতে সাহায্য করেছিল যে ৩ টি অভ্যাস

রিল দেখার নেশা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ রক্তচাপসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে এই নেশা। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার এবং নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করার। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য রিল দেখার সময় কমিয়ে শারীরিক কার্যকলাপ ও সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো জরুরি।আমাদের সবার উচিত এই বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং নিজেদের পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও সচেতন করা। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।