Why do trucks say Horn Ok Please: ভারতীয় রাস্তায় চলাচলকারী প্রায় প্রতিটি ট্রাকের পিছনে একটি বাক্য লেখা থাকে যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে – “Horn Ok Please”।
এই বাক্যটি এতটাই জনপ্রিয় যে এর উপর একটি বলিউড চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু আইনত এই বাক্য লেখা বাধ্যতামূলক নয় এবং এর কোনো অফিসিয়াল তাৎপর্যও নেই। তবুও বেশিরভাগ ট্রাকের পিছনে এটি অবশ্যই লেখা থাকে”Horn Ok Please” এর অর্থ হল ট্রাক ওভারটেক করার আগে হর্ন বাজানোর অনুরোধ। অতীতে অনেক ট্রাকে সাইড মিরর থাকত না, ফলে পিছনের গাড়ি দেখা যেত না। তাই পিছনের গাড়িকে হর্ন বাজিয়ে সতর্ক করার জন্য এই বাক্যটি লেখা হত।
White Colour on Tree: গাছের গায়ে সাদা রং দেখলেন? জানুন এর পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল কারণ
এই প্রথার উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। একটি জনপ্রিয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডিজেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। তখন ট্রাকে কেরোসিন পরিবহন করা হত, যা অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ। অন্য গাড়িকে সতর্ক করার জন্য ট্রাকের পিছনে “On Kerosene” লেখা হত, যা পরে সংক্ষেপে “OK” হয়ে যায়। আরেকটি তত্ত্ব অনুসারে, টাটা গ্রুপের একটি মার্কেটিং কৌশলের অংশ হিসেবে এই বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছিল। টাটা তখন “OK” নামে একটি সস্তা সাবান বাজারে এনেছিল। সেই সাবানের প্রচারের জন্য ট্রাকের পিছনে “OK” লেখা হত বলে মনে করা হয়।
অতীতে ভারতের বেশিরভাগ হাইওয়ে একমুখী ছিল। যখন কোনো গাড়ি ওভারটেক করতে চাইত, তখন হর্ন বাজাত। ট্রাক চালক তখন সামনের ট্রাফিক দেখে “OK” শব্দের উপরে থাকা একটি বাল্ব জ্বালিয়ে দিত, যা পিছনের গাড়িকে ওভারটেক করার সংকেত দিত। কিছু মতে, “OK” আসলে “OTK” (Overtake) থেকে এসেছে। ট্রাকের প্যানেলের আকৃতির কারণে “T” অক্ষরটি “K” এর মতো দেখাত, তাই পরে এটি “OK” হয়ে যায়।বর্তমানে অধিকাংশ ট্রাকে সাইড মিরর থাকলেও এই প্রথা চলতে থাকে। এটি এখন ভারতীয় রাস্তার সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ট্রাকগুলি প্রায়ই রঙিন শিল্পকর্ম, ধর্মীয় প্রতীক এবং ব্যক্তিগত বার্তা দিয়ে সাজানো হয়, যা তাদেরকে অনন্য চলমান ক্যানভাসে পরিণত করে।
ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়ার মাস্টারকী: ১০টি অব্যর্থ কৌশল
“Horn Ok Please” বাক্যটি ভারতীয় রাস্তার বর্ণময় সংস্কৃতির একটি স্থায়ী প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটি নিরাপত্তা সতর্কতা হিসেবে শুরু হয়ে থাকুক বা মার্কেটিং কৌশল হিসেবে, বাক্যটি রাস্তায় যোগাযোগের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। আজও এটি ভারতের অনন্য ড্রাইভিং ঐতিহ্যের একটি পরিচিত ও নস্টালজিক স্মারক হিসেবে বিদ্যমান। তবে এই প্রথা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্র সরকার বাণিজ্যিক যানবাহনের পিছনে “Horn Ok Please” লেখা নিষিদ্ধ করে।
তাদের যুক্তি ছিল যে এটি অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানোর প্রবণতা বাড়িয়ে শব্দ দূষণের কারণ হচ্ছে। যদিও এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা কঠিন হয়েছিল। ট্রাক চালক ও জনসাধারণের প্রতিবাদের মুখে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। “Horn Ok Please” ভারতীয় ট্রাকিং সম্প্রদায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হয়।এই বাক্যটি শুধু রাস্তায়ই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারতীয় পপ কালচারেরও একটি অংশ হয়ে উঠেছে। এর উপর অনেক গান, চলচ্চিত্র এবং নাটক তৈরি হয়েছে। এটি ভারতীয় ফোক আর্টের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবেও বিবেচিত হয়।
সারাংশে বলা যায়, “Horn Ok Please” শুধু একটি সাধারণ বাক্য নয়, এটি ভারতীয় রাস্তার সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত প্রতীক। এর পিছনে থাকা গল্পগুলি ভারতের বিবর্তনশীল পরিবহন ব্যবস্থা এবং সামাজিক পরিবর্তনের একটি আকর্ষণীয় চিত্র তুলে ধরে। যদিও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবুও এটি ভারতীয় রাস্তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে টিকে থাকবে বলে মনে করা হয়।