জলাতঙ্ক: কুকুর কামড়ালে ২-৩ মাসের মধ্যেই প্রাণঘাতী রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে!

How long after dog bite rabies symptoms appear: কুকুর কামড়ালে সাধারণত ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে এই সময়কাল ১ সপ্তাহ থেকে ১ বছর…

Debolina Roy

 

How long after dog bite rabies symptoms appear: কুকুর কামড়ালে সাধারণত ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে এই সময়কাল ১ সপ্তাহ থেকে ১ বছর বা তারও বেশি হতে পারে। জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।

এই রোগের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৯,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়, যার ৯৫% ঘটে আফ্রিকা ও এশিয়ায়। জলাতঙ্কের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং ক্লান্তি। কামড়ের স্থানে চুলকানি বা অস্বাভাবিক অনুভূতি হতে পারে। পরবর্তীতে স্নায়বিক উপসর্গ দেখা দেয় যেমন:

  • উত্তেজনা বা আক্রমণাত্মক আচরণ
  • বিভ্রান্তি, অদ্ভুত চিন্তাভাবনা বা মতিভ্রম
  • পেশীর স্প্যাজম ও অস্বাভাবিক ভঙ্গি
  • খিঁচুনি
  • দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত
  • আলো, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
    মারাত্মক Mpox ভাইরাস: Clade 1b নিয়ে WHO-এর সতর্কতা

জলাতঙ্কের দুটি রূপ দেখা যায়:

১) উন্মত্ত জলাতঙ্ক: এতে রোগী অতিসক্রিয়, উত্তেজিত আচরণ করে, মতিভ্রম দেখা দেয় এবং জল ও বাতাসের ভয় (হাইড্রোফোবিয়া ও এয়ারোফোবিয়া) দেখা যায়। কয়েকদিনের মধ্যে হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে।

২) পক্ষাঘাতমূলক জলাতঙ্ক: এতে ধীরে ধীরে পেশী অবশ হয়ে যায়, কামড়ের স্থান থেকে শুরু হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কোমা ও মৃত্যু ঘটে।জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর এর কোনো চিকিৎসা নেই এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই মৃত্যু অনিবার্য।

তবে সময়মত টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কুকুর কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ করা উচিত।কুকুর কামড়ালে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া উচিত:

  • ক্ষতস্থান সাবান ও পানি দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • আয়োডিনযুক্ত বা এন্টি-ভাইরাল ওষুধ ক্ষতস্থানে লাগান।
  • দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • প্রয়োজনে টিটেনাস ও জলাতঙ্কের টিকা নিন।
  • যদি সম্ভব হয়, কামড়ানো কুকুরটিকে ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখুন।

জলাতঙ্কের টিকা দুই ধরনের হয়:

১) প্রতিষেধক টিকা: যারা জলাতঙ্কের ঝুঁকিতে আছেন তাদের জন্য।
২) কামড়ের পরের টিকা: কুকুর কামড়ানোর পর নেওয়া হয়।কামড়ের পরের টিকা সাধারণত ৫টি ডোজে দেওয়া হয় – ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮ দিনে। গুরুতর ক্ষেত্রে এর সাথে অ্যান্টি-রেবিজ সিরাম দেওয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কুকুরদের টিকাদান মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর ও কম খরচের উপায়। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে অনেক ছাড়া কুকুর রয়েছে, সেখানে মৌখিক টিকা ব্যবহার করে এসব কুকুরকে টিকা দেওয়া যেতে পারে। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকাদান কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হতো জলাতঙ্কে, কিন্তু বর্তমানে সেখানে বছরে ১০ জনেরও কম মৃত্যু হয়।
যক্ষা রোগের লক্ষণগুলি জানুন – এগুলি উপেক্ষা করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে!
তবে এখনও প্রতি বছর প্রায় ৪,০০০ প্রাণীর মধ্যে জলাতঙ্ক ধরা পড়ে যার ৯০% হয় বন্য প্রাণীদের মধ্যে। জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ, কিন্তু সময়মত সঠিক পদক্ষেপ নিলে এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। কুকুর কামড়ালে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি কুকুরদের নিয়মিত টিকাদান ও পথচারী কুকুর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলাতঙ্কের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।