How-long-to-keep-plaster-cast-on-medical-guidelines: হাতের হাড় ভেঙে গেলে বা অন্য কোনো গুরুতর আঘাতের পর চিকিৎসকরা সাধারণত প্লাস্টার কাস্ট লাগান। এটি হাড়কে স্থির রেখে সুস্থ হতে সাহায্য করে। তবে কতদিন প্লাস্টার রাখতে হবে তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর।সাধারণত হাতের প্লাস্টার ৪-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত রাখতে হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ভর করে ভাঙ্গনের ধরন, অবস্থান এবং রোগীর বয়সের উপর।
শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে, তাই তাদের ৪-৬ সপ্তাহেই প্লাস্টার খোলা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৬-৮ সপ্তাহ লাগতে পারে।হাতের কব্জি বা আঙ্গুলের হাড় ভাঙলে সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহ প্লাস্টার রাখতে হয়। কনুইয়ের হাড় ভাঙলে ৬-৮ সপ্তাহ লাগতে পারে। বাহুর উপরের অংশের হাড় ভাঙলে ৮-১২ সপ্তাহ পর্যন্ত প্লাস্টার রাখতে হতে পারে।তবে এটা মনে রাখা জরুরি যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসক রোগীর অবস্থা দেখে সঠিক সময়সীমা নির্ধারণ করবেন। কারণ হাড় জোড়া লাগার প্রক্রিয়া প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা হয়।
পা ভাঙ্গা প্লাস্টার: কতদিন পর খুলবেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
প্লাস্টার রাখার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:
• প্লাস্টার যেন ভেজা না যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।ভেজা প্লাস্টার নরম হয়ে যায় এবং হাড়কে সঠিকভাবে স্থির রাখতে পারে না।
• প্লাস্টারের নিচে চুলকানি হলে কোনো ধারালো জিনিস ঢুকিয়ে চুলকানো উচিত নয়। এতে ত্বকে ক্ষত হতে পারে।
• প্লাস্টার লাগানোর প্রথম ২-৩ দিন হাত উঁচু করে রাখতে হবে। এতে ফুলে যাওয়া কমবে।
• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্লাস্টার খোলা বা কাটা উচিত নয়।
• প্লাস্টার লাগানো অবস্থায় হাতের আঙ্গুল নড়াচড়া করা ভালো। এতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে।
প্লাস্টার খোলার পর হাতের পেশী দুর্বল হয়ে যায়। তাই ধীরে ধীরে ব্যায়াম করে হাতকে সক্রিয় করতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ফিজিওথেরাপি নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
হাড় জোড়া লাগার প্রক্রিয়া তিনটি ধাপে হয়:
১. প্রদাহের ধাপ: এটি আঘাতের পর প্রথম ৭-১০ দিন চলে। এ সময় রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় এবং ক্ষতস্থানে রক্তের জমাট বাঁধে।
২. মেরামতের ধাপ: এটি ২-৩ সপ্তাহ চলে। এ সময় নরম ক্যালাস তৈরি হয় যা ভাঙা হাড়কে জুড়ে দেয়।
৩. পুনর্গঠনের ধাপ: এটি কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত চলতে পারে। এ সময় নরম ক্যালাস শক্ত হাড়ে পরিণত হয়।
হাড় দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
• পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
• ধূমপান ত্যাগ করা, কারণ এটি রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়।
• ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
• চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করা।
• পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ও স্ট্রেস এড়িয়ে চলা।
হাড় জোড়া লাগছে কি না বুঝবেন কীভাবে? জেনে নিন ১০টি লক্ষণ
তবে কিছু কারণে হাড় জোড়া লাগতে দেরি হতে পারে:
• বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাড় ধীরে জোড়া লাগে।
• অপুষ্টি বা ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে।
• ধূমপান বা মদ্যপান করলে।
• ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড সমস্যা থাকলে।
• স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে।
• অতিরিক্ত ওজন থাকলে।
যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাড় জোড়া না লাগে, তাহলে চিকিৎসক অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কারণ খুঁজে বের করবেন। প্রয়োজনে বোন গ্রাফটিং বা অন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।সুতরাং দেখা যাচ্ছে, হাতের প্লাস্টার কতদিন রাখতে হবে তা নির্ভর করে অনেক বিষয়ের উপর। সাধারণত ৪-৮ সপ্তাহ লাগলেও, প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং নিয়মিত ফলোআপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে হাড় সঠিকভাবে জোড়া লেগে হাত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।