India internet usage 2024 report: ২০২৪ সালের শুরুতে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৩৬.১৬ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬.৩৯%। এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে গত বছরের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৯২ মিলিয়ন, যা এক বছরেই প্রায় ২৪৪ মিলিয়ন বেড়েছে।ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তার, বিনামূল্যে ৫জি পরিষেবা, সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি স্মার্টফোন, মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ এবং সরকারের ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রচারের প্রচেষ্টা এর অন্যতম প্রধান কারণ।
বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারের হার দ্রুত বেড়েছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দেখা গেছে যে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৫০% এর বেশি গ্রামীণ এলাকা থেকে আসছে।ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শপিং এবং ভিডিও দেখা ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন কার্যক্রম হিসেবে উঠে এসেছে। এছাড়াও ভিডিও এবং অডিও OTT প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
ইন্টারনেট বন্ধে বিক্ষোভ দমন নয়, বরং অর্থনীতি ও মানবাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত।
ইন্টারনেট সংযোগের গতির ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। Ookla-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুতে ভারতে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ছিল ৯৪.৬২ Mbps এবং ফিক্সড ইন্টারনেটের গড় গতি ছিল ৫৮.৬২ Mbps। গত এক বছরে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ৪১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে ৪৬২ মিলিয়ন সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ছিল, যা মোট জনসংখ্যার ৩২.২%।
তবে গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৫ মিলিয়ন কমেছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ব্যবহারকারীরা এখন একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার পরিবর্তে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় ব্যয় করছেন।ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামীণ এলাকায় পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক কম। এছাড়াও বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার কম, যার কারণ হিসেবে ইন্টারনেট সাক্ষরতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯৬.৬% বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করে। এর মধ্যে ৯৪.৭% স্মার্টফোন ব্যবহারকারী, ৪.৭% ফিচার ফোন ব্যবহারকারী এবং ১৬.৫% ট্যাবলেট ব্যবহারকারী। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের এই প্রবণতা বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে স্মার্টফোনের ক্রমবর্ধমান সাশ্রয়ী মূল্য, মোবাইল ডেটা নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ এবং সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রচারাভিযান।
২০২৪ সালে ভারতের মোট ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের ৭৮.৬২% জেনারেট হয়েছে মোবাইল ফোন থেকে, ২০.৯৫% ল্যাপটপ/ডেস্কটপ থেকে এবং ০.৪৩% ট্যাবলেট থেক। গড়ে একজন ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট অনলাইনে সময় কাটায়, যার বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে।
ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন কার্যক্রমগুলি হল:
১. ভিডিও দেখা
২. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা
৩. অনলাইনে কেনাকাটা করা
৪. অনলাইন পেমেন্ট করা
মোবাইল ইন্টারনেটের বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, ই-কমার্স বিক্রয় বাড়িয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো সহজ করে তুলেছে।
ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটিতে ১ বিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ভারতকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজারে পরিণত করবে।তবে এই দ্রুত বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে দেখা গেছে যে ভারতের প্রায় ৩৩.৬১% জনসংখ্যা এখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করে না।
2024 সালে Facebook এখনও শীর্ষে – টপ 10 সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের তালিকা প্রকাশ
এছাড়াও গ্রামীণ ও শহুরে এলাকার মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন, সাইবার নিরাপত্তা, ডেটা গোপনীয়তা এবং ফেক নিউজের প্রসার ইত্যাদি বিষয়গুলি মোকাবেলা করতে হবে।সামগ্রিকভাবে, ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৩৬ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়া একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এটি দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের গতি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। তবে এই বৃদ্ধির সুফল যাতে সমাজের সকল স্তরে পৌঁছায় সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বিভাজন কমানো, সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতে পারে।