ময়েশ্চারাইজার প্রতিদিন কয়বার ব্যবহার করা উচিত? জানুন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ!

ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার একটি অপরিহার্য উপাদান, কিন্তু প্রতিদিন কতবার এটি ব্যবহার করা উচিত তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভুগেন। জাপানের টোকিওয়া ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুষ্ক ত্বকের…

Ishita Ganguly

 

ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার একটি অপরিহার্য উপাদান, কিন্তু প্রতিদিন কতবার এটি ব্যবহার করা উচিত তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভুগেন। জাপানের টোকিওয়া ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য দিনে দুইবার ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ সবচেয়ে কার্যকর। এই গবেষণা অনুসারে, স্নানের পর অবিলম্বে এবং সকালে ১.০ মিলিগ্রাম/সেমি² পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা সম্ভব হয়। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি (AAD) সুপারিশ করে যে, শুষ্ক ত্বকের সমস্যা সমাধানে দিনে একাধিকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, বিশেষ করে হাত ধোয়ার পর এবং ত্বক শুষ্ক মনে হলে।

ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগের ফ্রিকোয়েন্সি

বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি ভিন্ন হয়। ত্বকের ধরন অনুসারে সঠিক নিয়ম মেনে চললে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যায়।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

শুষ্ক ত্বকে প্রাকৃতিক তেলের অভাব থাকে এবং এটি খসখসে, আঁশযুক্ত এবং চুলকানিযুক্ত হতে পারে। এই ধরনের ত্বকের জন্য দিনে কমপক্ষে দুইবার, কখনো কখনো তিনবার পর্যন্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। জাপানি গবেষকদের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত ২৪ জন মহিলা অংশগ্রহণকারীর মধ্যে যারা দিনে দুইবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেছেন, তাদের স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম জলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিএনবিআই-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, এটোপিক ডার্মাটাইটিস এবং জেরোসিস (অত্যধিক শুষ্কতা) রোগীদের জন্য দিনে দুইবার প্রয়োগ অপরিহার্য।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

তৈলাক্ত ত্বকে সিবাম উৎপাদন বেশি হয়, যার ফলে মুখ চকচকে দেখায় এবং ব্রণের প্রবণতা থাকে। তবে এই ধরনের ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার প্রয়োজন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দিনে একবার বা দুইবার হালকা, জল-ভিত্তিক এবং নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ব্রণ এবং সিস্টের সমস্যা হতে পারে, তাই সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করা জরুরি।

এক মাসে দুইবার পিরিয়ড হওয়া কি স্বাভাবিক?

সংবেদনশীল ত্বকের জন্য

সংবেদনশীল ত্বক সহজেই জ্বালা, লালভাব এবং অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়। এই ধরনের ত্বকের জন্য সুগন্ধিমুক্ত এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক ময়েশ্চারাইজার দিনে দুইবার ব্যবহার করা উচিত। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি সুপারিশ করে যে, সংবেদনশীল ত্বকে “ফ্র্যাগ্রেন্স-ফ্রি” লেবেলযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা উচিত, “আনসেন্টেড” নয়, কারণ আনসেন্টেড পণ্যে রাসায়নিক থাকতে পারে যা ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করে।

মিশ্র ত্বকের জন্য

মিশ্র ত্বকে টি-জোন (কপাল, নাক এবং চিবুক) তৈলাক্ত থাকে এবং গাল শুষ্ক থাকে। এই ধরনের ত্বকের জন্য দিনে দুইবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, তবে বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ধরনের পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগের সর্বোত্তম সময়

ময়েশ্চারাইজার কখন প্রয়োগ করা হচ্ছে তা ফলাফলে বিশাল প্রভাব ফেলে। ডার্মাটোলজিস্টরা কিছু নির্দিষ্ট সময় চিহ্নিত করেছেন যখন ময়েশ্চারাইজার সবচেয়ে কার্যকর।

স্নানের পর অবিলম্বে

স্নানের পর অবিলম্বে, বিশেষত ৫ মিনিটের মধ্যে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা সবচেয়ে কার্যকর। ২০২১ সালের গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্নানের সময় প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজিং ফ্যাক্টর (NMF) এবং ইন্টারসেলুলার লিপিড স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম থেকে বেরিয়ে যায়, যার ফলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। স্নানের পর তাৎক্ষণিক ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করলে এপিডার্মিস থেকে পানির বাষ্পীভবন রোধ হয় এবং আর্দ্রতা সংরক্ষিত থাকে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির মতে, স্নানের পর ত্বক হালকাভাবে শুকিয়ে নিয়ে, ঘষে নয়, বরং চাপড়ে শুকানো উচিত এবং তারপর ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত।

সকালের রুটিনে

সকালে মুখ ধোয়ার পর এবং বাইরে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, সকালে হালকা এবং SPF সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক UV রশ্মি এবং পরিবেশগত চাপ থেকে সুরক্ষিত থাকে। দিনের বেলা ত্বক বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদানের সংস্পর্শে আসে, তাই সকালের ময়েশ্চারাইজিং একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করে।

রাতে ঘুমানোর আগে

রাতে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ত্বক ঘুমের সময় নিজেকে পুনরুদ্ধার করে। ২০২৫ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাতে ঘন এবং পুষ্টিকর ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বক সারারাত আর্দ্রতা পায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুদ্ধার হয়। রাতের ময়েশ্চারাইজারে সাধারণত অ্যালোভেরা, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এবং সেরামাইড থাকে যা ত্বকের বাধা পুনর্নির্মাণে সাহায্য করে।

হাত ধোয়ার পর

প্রতিবার হাত ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত কারণ সাবান এবং জল ত্বকের প্রাকৃতিক তেল সরিয়ে ফেলে। এএডি সুপারিশ করে যে, একটি নন-গ্রিজি হ্যান্ড ক্রিম সবসময় সাথে রাখা এবং প্রতিটি হাত ধোয়ার পর লাগানো উচিত।

ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগের পরিমাণ এবং প্রযুক্তি

সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না।

প্রয়োগের পরিমাণ

জাপানি গবেষকদের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, কমপক্ষে ১.০ মিলিগ্রাম/সেমি² পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম জলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ০.৫ মিলিগ্রাম/সেমি² পরিমাণে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া যায়নি। ত্বকের শুষ্কতার মাত্রা এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী ২.০ মিলিগ্রাম/সেমি² পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি

ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগের সময় ত্বকে ঘষা উচিত নয়, বরং আলতো করে বৃত্তাকার গতিতে এবং উপরের দিকে মালিশ করা উচিত। ২০২৫ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অতিরিক্ত ঘষার ফলে ময়েশ্চারাইজারের জলীয় অংশ বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং ত্বকে ক্ষতি হতে পারে। চোখের আশেপাশে অ্যাপ্লিকেশনের জন্য দুর্বল কনিষ্ঠা এবং আংটি আঙুল ব্যবহার করা উচিত।

ময়েশ্চারাইজারের উপকারিতা: বৈজ্ঞানিক তথ্য

ময়েশ্চারাইজার শুধুমাত্র ত্বককে আর্দ্র রাখে না, বরং ত্বকের বাধা ফাংশন পুনরুদ্ধার করে এবং বিভিন্ন ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধ করে।

ত্বকের বাধা ফাংশন উন্নতি

ন্যাশনাল এক্সিমা অ্যাসোসিয়েশনের ২০২২ সালের একটি বৃহৎ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে এটোপিক ডার্মাটাইটিসের তীব্রতা হ্রাস পায়। এই গবেষণায় ৭৭টি প্রকাশিত গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ময়েশ্চারাইজার ত্বকের বাধা উন্নত করে, ত্বক থেকে পানির ক্ষয় হ্রাস করে এবং ফ্লেয়ার-আপের সংখ্যা কমায়।

স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম আর্দ্রতা বৃদ্ধি

২০২৫ সালের ডার্মাটোলজি টাইমসের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, ৪০ জন অংশগ্রহণকারীর উপর ৪ সপ্তাহ ধরে দিনে একবার ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করার পর ত্বকের আর্দ্রতা, শুষ্কতা, পৃষ্ঠের রুক্ষতা এবং সূক্ষ্ম রেখাগুলিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ৩ দিন পণ্য ব্যবহার না করার পরও আর্দ্রতা এবং ত্বকের গুণমান বজায় ছিল।

ডেসমোগ্লিন ১ লোকালাইজেশন উন্নতি

জাপানি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮ সপ্তাহ ধরে দিনে দুইবার ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করলে ডেসমোগ্লিন ১ লোকালাইজেশন স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। ডেসমোগ্লিন ১ হলো ডেসমোসোমের একটি উপাদান যা স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম কোষের আসঞ্জনে জড়িত এবং ত্বকের বাধা ফাংশনের সাথে সম্পর্কিত।

ময়েশ্চারাইজার নির্বাচনের গাইডলাইন

সঠিক ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপাদান যা খুঁজতে হবে

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি সুপারিশ করে যে, ময়েশ্চারাইজারে নিম্নলিখিত উপাদানগুলির এক বা একাধিক থাকা উচিত:

  • হায়ালুরোনিক অ্যাসিড: ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে

  • গ্লিসারিন: হিউমেক্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকে পানি আকর্ষণ করে

  • সেরামাইড: ত্বকের বাধা পুনর্নির্মাণ করে এবং আর্দ্রতার ক্ষতি রোধ করে

  • শিয়া বাটার: গভীর হাইড্রেশন প্রদান করে

  • পেট্রোলাটাম: অক্লুসিভ হিসেবে কাজ করে এবং পানির বাষ্পীভবন রোধ করে

  • ডাইমেথিকোন: ত্বককে মসৃণ করে এবং সুরক্ষা প্রদান করে

  • জোজোবা অয়েল এবং ল্যানোলিন: প্রাকৃতিক ইমোলিয়েন্ট

এড়িয়ে চলার উপাদান

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির মতে, শুষ্ক ত্বকের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানযুক্ত পণ্য এড়িয়ে চলা উচিত:

  • অ্যালকোহল (হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছাড়া): ত্বককে আরও শুষ্ক করে

  • সুগন্ধি: জ্বালা এবং অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে

  • রেটিনয়েডস: শুষ্ক ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা সৃষ্টি করতে পারে

লোশন, ক্রিম নাকি মলম?

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি সুপারিশ করে যে, মলম এবং ক্রিম লোশনের চেয়ে বেশি কার্যকর কারণ তারা ত্বকে বেশি আর্দ্রতা যোগ করে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম বা মলম বেছে নেওয়া উচিত।

বিশেষ পরিস্থিতিতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার

কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করতে হতে পারে।

শীতকালে

শীতকালে আর্দ্রতা কম থাকে এবং ঠান্ডা বাতাস ত্বককে শুষ্ক করে। এই সময়ে দিনে তিনবার পর্যন্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে এবং হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা উচিত।

এটোপিক ডার্মাটাইটিস এবং একজিমা

জাপানি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটোপিক ডার্মাটাইটিস রোগীদের জন্য দিনে কমপক্ষে দুইবার ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ অপরিহার্য। ন্যাশনাল এক্সিমা অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ময়েশ্চারাইজার স্কিন ব্যারিয়ার উন্নত করে, স্বাস্থ্যকর স্কিন মাইক্রোবায়োম সমর্থন করে এবং সম্ভবত ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে।

বয়স্কদের ত্বক

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক তার প্রাকৃতিক তেল এবং আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়। বয়স্কদের জন্য দিনে দুই থেকে তিনবার ঘন ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা উচিত।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করুন ৭ দিনে – বিশেষজ্ঞদের গোপন টিপস ফাঁস!

সাধারণ ভুল এবং তাদের সমাধান

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে কিছু সাধারণ ভুল রয়েছে যা এড়িয়ে চললে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ভুল সমস্যা সমাধান
শুকনো ত্বকে প্রয়োগ পানি লক করতে পারে না ভেজা ত্বকে প্রয়োগ করুন
অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার ব্রণ এবং সিস্ট সৃষ্টি করে সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করুন
ঘষে প্রয়োগ বাষ্পীভবন এবং ত্বকের ক্ষতি আলতোভাবে মালিশ করুন
SPF ছাড়া দিনে ব্যবহার UV রশ্মির ক্ষতি SPF সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
অনিয়মিত ব্যবহার ফলাফল পাওয়া যায় না দিনে নির্ধারিত সময়ে ব্যবহার করুন

কখন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির মতে, নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে:

  • সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও ত্বক শুষ্ক থাকলে

  • ত্বকে চুলকানি, ফাটল বা রক্তপাত হলে

  • ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগে জ্বালা, দংশন বা ব্যথা হলে

  • শুষ্ক ত্বকের কারণে দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হলে

এই লক্ষণগুলি এটোপিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস বা কিডনি রোগের মতো অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের অতিরিক্ত পরামর্শ

ডার্মাটোলজিস্টরা কিছু অতিরিক্ত টিপস দিয়েছেন যা ময়েশ্চারাইজারের কার্যকারিতা বাড়ায়:

  • স্নানের সময় ৫-১০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন এবং গরম নয়, হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন

  • স্নানের সময় বাথরুমের দরজা বন্ধ রাখুন যাতে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়

  • মৃদু, সুগন্ধিমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন

  • সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করতে SPF ৩০ বা তার বেশি সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

  • ঢিলেঢালা, সুতির কাপড় পরুন কারণ টাইট কাপড় ত্বকে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে

  • শীতকালে এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় গ্লাভস পরুন

উপসংহার

ময়েশ্চারাইজার প্রতিদিন কতবার ব্যবহার করা উচিত তা নির্ভর করে ত্বকের ধরন, পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত অবস্থার উপর। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, সাধারণ ত্বকের জন্য দিনে একবার থেকে দুইবার যথেষ্ট, কিন্তু শুষ্ক ত্বক বা চর্মরোগের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য দিনে কমপক্ষে দুইবার, বিশেষত স্নানের পর অবিলম্বে এবং সকালে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ অপরিহার্য। জাপানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ১.০ মিলিগ্রাম/সেমি² পরিমাণে দিনে দুইবার প্রয়োগ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং বাধা ফাংশন উন্নত করতে সবচেয়ে কার্যকর। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে সঠিক ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন, সঠিক সময়ে প্রয়োগ এবং নিয়মিত ব্যবহার নিশ্চিত করলে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যক্তির ত্বক অনন্য, তাই ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহারের পরিমাণ এবং ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করা প্রয়োজন এবং জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন