Nobel Prize Money: নোবেল পুরস্কার কেবল একটি আর্থিক পুরস্কার নয়, এটি মেধা, মানবতা এবং বিশ্ব পরিবর্তনের স্বীকৃতির প্রতীক। ডিনামাইটের আবিষ্কারক এবং একজন সফল শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। তিনি তার বিপুল সম্পত্তি মানবজাতির কল্যাণে সেরা অবদানকারীদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন। সেই থেকেই সুইডেনের নোবেল ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার প্রদানের দায়িত্ব পালন করে আসছে। পুরস্কারের আর্থিক মূল্যের পাশাপাশি বিজয়ীরা একটি সোনার পদক এবং একটি হস্তনির্মিত ডিপ্লোমাও পান, যা তাদের কৃতিত্বের এক অসামান্য স্বীকৃতি।
পুরস্কারের অর্থের উৎস: আলফ্রেড নোবেলের উইল
নোবেল পুরস্কারের অর্থের মূল উৎস হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেল (১৮৩৩-১৮৯৬)। তিনি ছিলেন একজন সুইডিশ রসায়নবিদ, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবক। ডিনামাইটসহ ৩৫৫টি ভিন্ন ভিন্ন আবিষ্কারের পেটেন্ট ছিল তার। জীবনভর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। কিন্তু তার সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার, ডিনামাইট, যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ব্যবহৃত হতে দেখে তিনি গভীরভাবে অনুতপ্ত হন।
নিজের মৃত্যুর পর তিনি যেন একজন ‘ধ্বংসের ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচিত না হন, সেই চিন্তা তাকে তাড়িয়ে বেড়াত। তাই তিনি তার জীবনের শেষ পর্যায়ে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর, তিনি তার বিখ্যাত উইলটি স্বাক্ষর করেন। এই উইলে তিনি তার মোট সম্পত্তির ৯৪ শতাংশেরও বেশি, যা সেই সময়ে প্রায় ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার ছিল, একটি তহবিল গঠনের জন্য দান করে যান।
নোবেল ফাউন্ডেশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা ছিল যে এই তহবিলটি নিরাপদে বিনিয়োগ করা হবে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত বার্ষিক আয়কে পাঁচটি সমান ভাগে ভাগ করে আগের বছর যারা “মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপকার” করেছেন, তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এই পাঁচটি ক্ষেত্র হলো:
- পদার্থবিদ্যা (Physics)
- রসায়ন (Chemistry)
- শারীরবৃত্তি বা চিকিৎসাশাস্ত্র (Physiology or Medicine)
- সাহিত্য (Literature)
- শান্তি (Peace)
পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে, সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক Sveriges Riksbank আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে অর্থনীতিতে একটি ষষ্ঠ পুরস্কার স্থাপন করে, যা “The Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel” নামে পরিচিত। যদিও এটি নোবেলের মূল উইলের অংশ নয়, তবে এটি নোবেল পুরস্কারের সাথেই প্রদান করা হয় এবং এর আর্থিক মূল্যও নোবেল ফাউন্ডেশন নির্ধারণ করে।
পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ কেন পরিবর্তন হয়?
নোবেল পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ নির্দিষ্ট নয় এবং এটি প্রতি বছর পরিবর্তিত হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো, পুরস্কারের অর্থ সরাসরি নোবেল ফাউন্ডেশনের বিনিয়োগের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভরশীল।
নোবেল ফাউন্ডেশনের ভূমিকা
আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুযায়ী, তার সম্পদ পরিচালনার জন্য ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ফাউন্ডেশনের মূল দায়িত্ব হলো:
- আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া মূলধনকে সুরক্ষিত রাখা এবং বৃদ্ধি করা।
- নিরাপদ এবং লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে তহবিল পরিচালনা করা।
- বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় থেকে পুরস্কারের অর্থ, প্রশাসনিক খরচ এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা।
শুরুতে, নোবেল ফাউন্ডেশনকে শুধুমাত্র “নিরাপদ” বিনিয়োগে, যেমন সরকারি বন্ড এবং রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে তহবিলের প্রকৃত মূল্য সময়ের সাথে সাথে কমতে শুরু করে। বিবিসি-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৫০-এর দশকের মধ্যে তহবিলের মূলধনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই হারিয়ে গিয়েছিল।
১৯৫৩ সালে, সুইডিশ সরকার ফাউন্ডেশনকে স্টক মার্কেট, রিয়েল এস্টেট এবং অন্যান্য বৈচিত্র্যময় খাতে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ফাউন্ডেশনের আর্থিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং তারা পুরস্কারের অর্থ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
আর্থিক মন্দা এবং এর প্রভাব
বিশ্ব অর্থনীতির উত্থান-পতনের সাথে নোবেল পুরস্কারের অর্থের পরিমাণও ওঠানামা করেছে।
- ২০০০-এর দশক: ২০০০ সালে পুরস্কারের অর্থ বাড়িয়ে ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার করা হয়েছিল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ডট-কম বাবল এবং পরবর্তী আর্থিক সংকটের কারণে ফাউন্ডেশনের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- ২০১২ সালের कटौती: ২০১১ সালের শেষে ফাউন্ডেশনের সম্পদের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, ২০১২ সালে পুরস্কারের অর্থ ২০% কমিয়ে ৮ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার করা হয়েছিল। ফাউন্ডেশনের তৎকালীন প্রধান লার্স হেইকেনস্টেন বলেছিলেন যে তহবিলের মূলধনকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত রাখার জন্য এই পদক্ষেপ ضروری ছিল।
- সাম্প্রতিক বৃদ্ধি: বিগত দশকে সফল বিনিয়োগ নীতির কারণে ফাউন্ডেশনের আর্থিক অবস্থা পুনরায় শক্তিশালী হয়েছে। ২০১৭ সালে পুরস্কারের অর্থ ৯ মিলিয়ন, ২০২০ সালে ১০ মিলিয়ন এবং ২০২৩ সালে তা বাড়িয়ে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার করা হয়েছে। নোবেল ফাউন্ডেশনের মতে, এই বৃদ্ধি তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রতিফলন।
বিগত বছরগুলিতে নোবেল পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ
নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্যের বিবর্তন বুঝতে নিচের টেবিলটি সহায়ক হবে। এখানে বিভিন্ন বছরের পুরস্কারের পরিমাণ সুইডিশ ক্রোনার (SEK) এবং তৎকালীন ভারতীয় রুপি (INR) ও মার্কিন ডলারে (USD) দেখানো হলো। (মুদ্রার বিনিময় হার সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়, তাই মানগুলি আনুমানিক)।
বছর (Year) | পরিমাণ (সুইডিশ ক্রোনার – SEK) | আনুমানিক ভারতীয় রুপি (INR) | আনুমানিক মার্কিন ডলার (USD) | গুরুত্বপূর্ণ তথ্য |
১৯০১ | ১,৫০,৭৮২ | প্রায় ১.২ লক্ষ | প্রায় ৪০,০০০ | প্রথম নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। |
১৯২৩ | ১,১৬,৫৩৪ | প্রায় ৯৫,০০০ | প্রায় ৩০,০০০ | মহামন্দার প্রভাবে মূল্য কমে যায়। |
১৯৮০ | ৮,৮০,০০০ | প্রায় ৮ লক্ষ | প্রায় ২,১০,০০০ | বিনিয়োগ নীতির পরিবর্তনের পর বৃদ্ধি শুরু। |
১৯৯১ | ৬ মিলিয়ন | প্রায় ২.৫ কোটি | প্রায় ৯,৫০,০০০ | পুরস্কারের ৯০তম বার্ষিকীতে বড় বৃদ্ধি। |
২০০১ | ১০ মিলিয়ন | প্রায় ৪.৫ কোটি | প্রায় ৯,৪০,০০০ | প্রথমবারের মতো ১০ মিলিয়ন SEK স্পর্শ করে। |
২০১২ | ৮ মিলিয়ন | প্রায় ৬ কোটি | প্রায় ১.২ মিলিয়ন | আর্থিক সংকটের কারণে অর্থ কমানো হয়। |
২০১৭ | ৯ মিলিয়ন | প্রায় ৭ কোটি | প্রায় ১.১ মিলিয়ন | আর্থিক অবস্থার উন্নতির পর পুনরায় বৃদ্ধি। |
২০২০ | ১০ মিলিয়ন | প্রায় ৮.৫ কোটি | প্রায় ১.১ মিলিয়ন | কোভিড-১৯ মহামারীর বছরেও বৃদ্ধি। |
২০২৩-২০২৪ | ১১ মিলিয়ন | প্রায় ৮.৫ কোটি | প্রায় ১ মিলিয়ন | বর্তমান সর্বোচ্চ পরিমাণ। |
সূত্র: নোবেল পুরস্কারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং ঐতিহাসিক বিনিময় হারের ডেটা।
একাধিক বিজয়ীর ক্ষেত্রে অর্থ কীভাবে ভাগ হয়?
অনেক সময় একটি পুরস্কার একাধিক ব্যক্তি বা সংস্থাকে যৌথভাবে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে পুরস্কারের অর্থ কীভাবে ভাগ হবে, তা নির্ধারণ করে পুরস্কার প্রদানকারী কমিটি। নোবেল পুরস্কারের নিয়মাবলী অনুযায়ী, একটি পুরস্কার সর্বোচ্চ তিনজন বিজয়ীর মধ্যে ভাগ করা যেতে পারে।
অর্থ ভাগাভাগির কয়েকটি সাধারণ নিয়ম হলো:
- সমান ভাগ: যদি দুজন বিজয়ী থাকেন, তবে অর্থ ৫০-৫০ ভাগে ভাগ হয়। যদি তিনজন থাকেন, তবে প্রত্যেকের জন্য ৩৩.৩৩% করে ভাগ করা হয়।
- অসমান ভাগ: অনেক সময় কমিটি মনে করে যে একজন বিজয়ীর অবদান অন্যদের চেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে অর্থ অসমানভাবেও ভাগ হতে পারে। যেমন, একজন বিজয়ীকে পুরস্কারের অর্ধেক (৫০%) এবং বাকি দুজনকে এক-চতুর্থাংশ (২৫% করে) দেওয়া হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার তিনজন বিজ্ঞানী পেয়েছিলেন। সিউকুরো মানাবে এবং ক্লাউস হাসেলমান পুরস্কারের অর্ধেক ভাগ করে নেন, এবং বাকি অর্ধেক দেওয়া হয় জর্জিও পারিসিকে।
শুধু টাকাই নয়, পুরস্কারের আরও অংশ
নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্য নিঃসন্দেহে বিশাল, তবে এর সাথে বিজয়ীরা আরও দুটি অমূল্য জিনিস পান যা তাদের অর্জনকে চিরস্থায়ী করে তোলে।
১. নোবেল পদক (The Nobel Medal)
প্রতিটি নোবেল পদক একটি অনন্য শিল্পকর্ম। এটি হাতে তৈরি করা হয় এবং এর নকশা অত্যন্ত সূক্ষ্ম।
- উপাদান: পদকটি ১৮ ক্যারেট পুনর্ব্যবহৃত সোনা দিয়ে তৈরি। আগে এটি ২৩ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি হতো, তবে বর্তমানে পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি করা হয়।
- নকশা: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র এবং সাহিত্যের পদকের সামনের অংশে আলফ্রেড নোবেলের একটি প্রতিকৃতি এবং তার জন্ম-মৃত্যুর সাল খোদাই করা থাকে। শান্তির জন্য নোবেল পদক এবং অর্থনীতি পুরস্কারের পদকের নকশা কিছুটা ভিন্ন। পদকের 뒷 অংশে বিজয়ীর নাম এবং পুরস্কার পাওয়ার কারণ খোদাই করা থাকে।
- ওজন ও আকার: প্রতিটি পদকের ওজন প্রায় ১৭৫ গ্রাম এবং ব্যাস ৬৬ মিলিমিটার।
২. নোবেল ডিপ্লোমা (The Nobel Diploma)
নোবেল ডিপ্লোমাটিও একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম। এটি কোনো সাধারণ সার্টিফিকেট নয়।
- স্বতন্ত্র নকশা: প্রতিটি বিজয়ীর জন্য সুইডেন এবং নরওয়ের সেরা শিল্পীদের দিয়ে একটি অনন্য ডিপ্লোমা ডিজাইন করানো হয়। ডিপ্লোমাটিতে বিজয়ীর নাম এবং তাদের অবদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ সুন্দর ক্যালিগ্রাফিতে লেখা থাকে।
- শৈল্পিক মূল্য: ডিপ্লোমাগুলো প্রায়শই বিজয়ীর গবেষণার বিষয়বস্তু বা সাহিত্যকর্মের সাথে সম্পর্কিত শৈল্পিক চিত্র দিয়ে সজ্জিত থাকে। এর ফলে প্রতিটি ডিপ্লোমা নিজস্ব শৈল্পিক মূল্যের অধিকারী হয়।
নোবেল পুরস্কারের টাকার উপর কি কর দিতে হয়?
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নোবেল পুরস্কারের অর্থ করযোগ্য (taxable) হবে কি না, তা নির্ভর করে বিজয়ীর দেশের আইন এবং তার নাগরিকত্বের উপর।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ফোর্বসের একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নোবেল পুরস্কারের অর্থ আয় হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এর উপর ফেডারেল ও রাজ্য স্তরে কর দিতে হয়। তবে, যদি বিজয়ী অর্থ গ্রহণ করার আগেই কোনো যোগ্য দাতব্য সংস্থায় (qualified charity) দান করে দেন, তবে তাকে কর দিতে হয় না। উদাহরণস্বরূপ, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্পূর্ণ অর্থ (তৎকালীন ১.৪ মিলিয়ন ডলার) একাধিক দাতব্য সংস্থায় দান করেছিলেন।
- ভারত: ভারতে, নোবেল পুরস্কারের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থ আয়কর আইনের ধারা ১০(১৭এ) এর অধীনে সাধারণত করমুক্ত থাকে। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হতে পারে।
- অন্যান্য দেশ: অনেক দেশেই এই ধরনের সম্মানজনক পুরস্কারকে করমুক্ত রাখা হয়, তবে কিছু দেশে এটি করযোগ্য হতে পারে। বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আইনের উপর নির্ভরশীল।
পুরস্কারের অর্থ বিজয়ীরা কীভাবে ব্যবহার করেন?
নোবেল বিজয়ীরা তাদের পুরস্কারের অর্থ বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করেন। তাদের পছন্দগুলো প্রায়শই তাদের ব্যক্তিত্ব, প্রেক্ষাপট এবং অগ্রাধিকারের প্রতিফলন ঘটায়।
- গবেষণা ও শিক্ষায় বিনিয়োগ: অনেক বিজ্ঞানী তাদের গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বা একটি নতুন ফাউন্ডেশন তৈরি করতে এই অর্থ ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, মারি কুরি তার দ্বিতীয় নোবেল পুরস্কারের অর্থ নতুন একটি রেডিয়াম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
- দাতব্য কাজে দান: অনেক বিজয়ী, বিশেষ করে শান্তি ও সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা, তাদের পুরস্কারের অর্থ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বা সামাজিক কাজে দান করেন।
- ব্যক্তিগত ব্যবহার: কিছু বিজয়ী এই অর্থ তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও ব্যবহার করেন। ব্রিটিশ বায়োকেমিস্ট স্যার পল নার্স, যিনি ২০০১ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পান, তিনি মজার ছলে বলেছিলেন যে তিনি তার মোটরসাইকেলটি আপগ্রেড করতে এই অর্থ ব্যবহার করেছিলেন।
- পরিবারের জন্য সঞ্চয়: অনেক বিজয়ী তাদের পরিবার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই অর্থ সঞ্চয় করে রাখেন।
শেষ পর্যন্ত, এই পুরস্কার বিজয়ীদের জন্য কেবল আর্থিক স্বাধীনতা নিয়ে আসে না, বরং তাদের কাজকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরে এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করে। এই সম্মান এবং স্বীকৃতিই নোবেল পুরস্কারের সবচেয়ে বড় মূল্য।
উপসংহার
নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্য, যা বর্তমানে ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় অঙ্ক। কিন্তু এই অর্থের পেছনের ইতিহাস, আলফ্রেড নোবেলের মহৎ উদ্দেশ্য এবং নোবেল ফাউন্ডেশনের সতর্ক ব্যবস্থাপনা একে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। এটি শুধু একটি পুরস্কার নয়, এটি একটি দর্শন—যা মানবজাতির জ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং শান্তির অন্বেষণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। অর্থের পরিমাণ হয়তো পরিবর্তিত হবে, কিন্তু নোবেলের সাথে যুক্ত সম্মান এবং গৌরব চিরকাল অমলিন থাকবে।