Potato yield 1 bigha West Bengal: পশ্চিমবঙ্গে আলু চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ক্ষেত্র। রাজ্যের কৃষকরা প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদন করে থাকেন।
সাধারণত ১ বিঘা জমিতে গড়ে ৯০-১০০ প্যাকেট আলু উৎপাদন হয়, যার প্রতিটি প্যাকেটে ৫০ কেজি আলু থাকে। অর্থাৎ ১ বিঘা জমি থেকে মোট ৪৫০০-৫০০০ কেজি বা ৪৫-৫০ মণ আলু পাওয়া যায়।তবে এই উৎপাদন হার বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন জমির উর্বরতা, বীজের গুণগত মান, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, জলসেচের সুবিধা ইত্যাদি। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা এই উৎপাদন আরও বাড়াতে পারেন।পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী রাজ্য। ২০১৬-১৭ সালে রাজ্যে মোট ১.৯ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল।
পকোড়ার ইতিহাস জানলে আপনি চমকে যেতে বাধ্য
২০২২ সালে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১.২ কোটি টনে। এটি একটি রেকর্ড উৎপাদন ছিল।হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাগুলি রাজ্যের প্রধান আলু উৎপাদক অঞ্চল। এছাড়া জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলাতেও প্রচুর আলু চাষ হয়। উত্তরবঙ্গে আলু চাষ একটি লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচিত হয়।কৃষকরা সাধারণত জ্যোতি ও পোখরাজ জাতের আলু চাষ করে থাকেন। এছাড়া কুফরি হিমালিনি ও কুফরি খ্যাতি জাতের আলুও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এই জাতগুলি অধিক ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী।১ বিঘা জমিতে আলু চাষের খরচ প্রায় ২৫,০০০-২৮,০০০ টাকা। এর মধ্যে বীজ, সার, কীটনাশক, জলসেচ ইত্যাদির খরচ অন্তর্ভুক্ত। ২০২০ সালে বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই খরচ আরও বেড়েছিল।তবে দুঃখজনক বিষয় হল, প্রচুর উৎপাদন সত্ত্বেও কৃষকরা প্রায়শই ন্যায্য মূল্য পান না। ২০২৩ সালে বাম্পার ফলনের কারণে কৃষকরা মাত্র ৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতে তাদের প্রায় ৭,০০০ টাকা প্রতি বিঘায় ক্ষতি হয়েছে।এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষকরা সরকারের কাছে নূন্যতম সহায়ক মূল্য (MSP) নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।
PM Kisan: কৃষকদের আর্থিক সহায়তার হাতিয়ার
এছাড়া শীতকালীন সময়ে আলু রপ্তানির সুযোগ বাড়ানোর জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।রাজ্য সরকার কৃষকদের সহায়তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন উন্নত মানের বীজ সরবরাহ, কৃষি ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ইত্যাদি। বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে All India Coordinated Research Project on Potato (AICRP) গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আলুর উন্নত জাত ও চাষ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে।তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, শীতকালীন সংরক্ষণের অপর্যাপ্ত সুবিধা, দূরবর্তী বাজারে পরিবহন সমস্যা ইত্যাদি। মাত্র ৪০-৪৫% আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখা সম্ভব হয়।
বাকিটা কৃষকদের বাড়িতেই রাখতে হয়, যার ফলে পচন ও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
সামগ্রিকভাবে, পশ্চিমবঙ্গে আলু চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি, সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে এই খাতকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। ১ বিঘা জমি থেকে ৪৫-৫০ মণ আলু উৎপাদন একটি ভাল ফলন, তবে এর চেয়েও বেশি উৎপাদন করার সুযোগ রয়েছে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই খাতের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।