গরমে তালের শাঁস খেলে যে ১০টি অবিশ্বাস্য উপকার পাবেন

Tal shash health benefits: গ্রীষ্মকালে তালের শাঁস একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল। এই সময়ে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীরকে শীতল রাখতে তালের শাঁস অত্যন্ত কার্যকরী। তালের শাঁসে রয়েছে প্রচুর…

Debolina Roy

 

Tal shash health benefits: গ্রীষ্মকালে তালের শাঁস একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল। এই সময়ে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীরকে শীতল রাখতে তালের শাঁস অত্যন্ত কার্যকরী। তালের শাঁসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আসুন জেনে নেই তালের শাঁস খাওয়ার ১০টি অবিশ্বাস্য উপকারিতা:

১. দেহের পানিশূন্যতা দূর করে

তালের শাঁসের প্রায় ৮০% অংশই পানি। গরমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, যা পূরণ করতে তালের শাঁস খুবই কার্যকরী। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম ও সোডিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২. পাকস্থলীর সমস্যা দূর করে

তালের শাঁস পাকস্থলীর নানা সমস্যা যেমন – অম্বলতা, গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং মল ত্যাগে সহায়তা করে।
ভেজানো ছোলার এই গুণ জানলে আপনি প্রতিদিন খাবেন

৩. রক্তশূন্যতা দূর করে

কচি তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত তালের শাঁস খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করা যায়।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ফ্রি র্যাডিকেলস প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

৫. হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করে

তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। নিয়মিত তালের শাঁস খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।

৬. চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে

তালের শাঁসে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।

৭. ত্বকের যত্ন নেয়

তালের শাঁসে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে যা ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখে। এছাড়া এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে বয়সের ছাপ থেকে রক্ষা করে।
প্রতিদিন দই খেলে কী হয় জানেন? এই ১০টি চমকপ্রদ উপকারিতা

৮. হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

তালের শাঁসে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

৯. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

তালের শাঁসে ক্যালরির পরিমাণ কম কিন্তু ফাইবারের পরিমাণ বেশি। এটি খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধা কম লাগে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

১০. লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে

তালের শাঁস লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি লিভার থেকে ক্ষতিকারক ও দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং লিভারকে সুস্থ রাখে।

তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ

নিচের টেবিলে তালের শাঁসের পুষ্টিগুণ দেখানো হলো:

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)
ক্যালরি ৪৩ kcal
কার্বোহাইড্রেট ১০.৯ g
ফাইবার ১.৩ g
প্রোটিন ০.৮ g
ফ্যাট ০.১ g
ভিটামিন সি ১৪.৮ mg
ক্যালসিয়াম ৩৮ mg
আয়রন ০.৬ mg
পটাসিয়াম ১৭৯ mg

সতর্কতা

যদিও তালের শাঁস অত্যন্ত উপকারী, তবে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • অতিরিক্ত পরিমাণে তালের শাঁস খেলে পেট গরম হতে পারে। তাই মাত্রা মেনে খাওয়া উচিত।
  • যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তালের শাঁস খাওয়া উচিত।
  • কিছু মানুষের তালের শাঁস খেয়ে অ্যালার্জি হতে পারে। এক্ষেত্রে খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

তালের শাঁস গ্রীষ্মকালের একটি চমৎকার ফল যা শরীরকে শীতল রাখার পাশাপাশি নানাবিধ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এটি খাওয়ার ফলে আমরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারি। তবে সবকিছুর মতোই এটিও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। নিয়মিত তালের শাঁস খেলে আমরা একটি সুস্থ ও সবল শরীর পেতে পারি।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।