Liang Wenfeng net worth: লিয়াং ওয়েনফেং, চীনের AI স্টার্টআপ ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের একজন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডিপসিকের চ্যাটবট “DeepSeek-R1” চালু হওয়ার পর থেকে তাঁর নামটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, লিয়াংয়ের নেট ওয়ার্থ ১ থেকে ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮,৩০০ থেকে ২৬,৫০০ কোটি টাকা) পর্যন্ত অনুমান করা হয়। এই সম্পদের বেশিরভাগই এসেছে তাঁর হেজ ফান্ড হাই-ফ্লায়ার এবং ডিপসিকের মালিকানার মাধ্যমে। চীনের প্রযুক্তি জগতে তাঁর এই উত্থানকে “সিলিকন ভ্যালিকে চ্যালেঞ্জ” হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
লিয়াং ওয়েনফেং ১৯৮৫ সালে চীনের গুয়াংডং প্রদেশের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। গণিতে অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী লিয়াং স্থানীয় স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল AI-ভিত্তিক সুরভিলেন্স সিস্টেম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি অ্যালগরিদম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন, যা পরবর্তীতে তাঁর হেজ ফান্ড ও AI প্রজেক্টের ভিত্তি হয়ে ওঠে।
২০১৫ সালে লিয়াং ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটির দুই সহপাঠীর সাথে যৌথভাবে হাই-ফ্লায়ার নামে একটি কোয়ান্টিটেটিভ হেজ ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফার্মটি AI ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে স্টক মার্কেটের ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করত। ২০২১ নাগাদ হাই-ফ্লায়ারের আওতায় সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন টাকা), যা চীনের অন্যতম বৃহত্তম কোয়ান্ট ফান্ডে পরিণত হয়।
২০২১ সালে লিয়াং এনভিডিয়ার গ্রাফিক্স চিপ সংগ্রহ শুরু করেন, যা পরবর্তীতে ডিপসিকের AI মডেল ট্রেনিংয়ে ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালের জুলাইতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিপসিক চালু করেন। মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার বাজেটে তৈরি করা ডিপসিকের মডেল OpenAI-এর চ্যাটজিপিটির সমপর্যায়ের কর্মক্ষমতা দেখায়, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডিপসিকের R1 মডেল চালু হওয়ার পর এটি অ্যাপল স্টোরের সবচেয়ে ডাউনলোডেড অ্যাপে পরিণত হয়। এর প্রভাবে এনভিডিয়ার শেয়ার মূল্য ১৭% এবং ভারতের AI কোম্পানিগুলোর শেয়ার ১০-২০% পর্যন্ত নেমে যায়। নিচের টেবিলে ডিপসিকের মূল অর্জন তুলে ধরা হলো:
মেট্রিক | ডিপসিকের পরিসংখ্যান |
প্রতিষ্ঠার বছর | ২০২৩ |
R1 মডেলের উন্নয়ন খরচ | ৬ মিলিয়ন ডলার |
অ্যাপ ডাউনলোড (জানুয়ারি ২০২৫) | ২.৬ মিলিয়ন |
বর্তমান ভ্যালুয়েশন | ১ বিলিয়ন ডলার+ |
কর্মী সংখ্যা | ~২০০ জন |
নেট ওয়ার্থ: ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮,৩০০ কোটি টাকা)
হাই-ফ্লায়ারে তাঁর শেয়ার ও ডিপসিকের ৮৪% মালিকানার সমন্বয়।
নেট ওয়ার্থ: ৩.২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৬,৫০০ কোটি টাকা)
ডিপসিকের দ্রুত সাফল্য ও শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুমান: ১-১৫০ বিলিয়ন ডলার (বিতর্কিত)
ডিপসিকের ভবিষ্যৎ ভ্যালুয়েশন এই ব্যাপক ব্যবধানের কারণ।
হাই-ফ্লায়ার: বিলিয়ন-ডলারের হেজ ফান্ড থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ।
ডিপসিকের শেয়ার: কোম্পানির ৮৪% মালিকানা।
বিনিয়োগ: এনভিডিয়া চিপ, রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য স্টার্টআপে বিনিয়োগ।
লিয়াংকে চীনের “স্যাম অল্টম্যান” বলে অভিহিত করা হয়। তবে তাঁর সাফল্য নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে:
কম খরচে AI: ডিপসিকের মডেলের ট্রেনিং পদ্ধতি নিয়ে Intellectual Property চুরির অভিযোগ।
রাজনৈতিক প্রভাব: চীনা সরকারের সাথে নিবিড় সম্পর্ক থাকার গুজব।
লিয়াং তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানের সাথে হ্যাংজৌ শহরে বসবাস করেন।
২০২৫ সালের চীনা নববর্ষে তাঁর গ্রামে একটি ব্যানার টাঙিয়ে লেখা হয়: “স্বদেশের গর্ব লিয়াং ওয়েনফেং”।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাঁকে “সিলিকন ভ্যালির ঘুম হারামকারী” বলে আখ্যায়িত করে।
২০২৫ সালে জনসংখ্যার প্রতিযোগিতায় ভারত বনাম চীন: কে হবে শীর্ষে?
লিয়াংয়ের লক্ষ্য আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (AGI) তৈরি করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্টদের সাথে প্রতিযোগিতা, চিপ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক চাপ তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপসিকের সাফল্য চীনের AI খাতকে বিশ্বে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, লিয়াং ওয়েনফেংয়ের সম্পদ নিয়ে অনুমান চললেও ডিপসিকের ভ্যালুয়েশন বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে তাঁর আসল সাফল্য হলো প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করা।
মন্তব্য করুন