বাংলাদেশে পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার জন্য এখন আর পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অনলাইনে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন করা যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। ই-পাসপোর্ট হলো একটি আইসিএও সঙ্গতিপূর্ণ, মেশিন রিডেবল এবং বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যা পাসপোর্টধারী কর্তৃক বিদেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে জারি করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু করেছে।
১. অনলাইনে চেক করা
২. এসএমএসের মাধ্যমে চেক করা
১. প্রথমে epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২. মেনুতে থাকা “CHECK STATUS” অপশনটি নির্বাচন করুন।
৩. আপনার ই-পাসপোর্টের আবেদন নম্বর বা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি এবং জন্ম তারিখ প্রদান করুন।
৪. ক্যাপচা পূরণ করে “Check” বাটনে ক্লিক করুন।
১. আপনার মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে যান।
২. EPP <space> Application-ID লিখে 16445 নম্বরে পাঠিয়ে দিন।
৩. কিছুক্ষণের মধ্যে আপনি একটি ফিরতি মেসেজ পাবেন যেখানে আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানানো হবে[1]।
১. অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি (OID) অথবা Application ID
২. জন্ম তারিখ
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি (OID) আপনি পাবেন যখন আপনি অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন। এটি সাধারণত OID1000001234 এর মতো একটি অনন্য সনাক্তকারী, যা আপনার আবেদন রসিদ বা নিশ্চিতকরণে পাওয়া যাবে।
Application ID পাওয়া যায় পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রাপ্ত ভোটার স্লিপে। এটি সাধারণত ভোটার স্লিপের উপরের ডান পাশে থাকে।
পাসপোর্ট চেক করার সময় আপনি বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দেখতে পারেন। এগুলির অর্থ এবং করণীয় নিম্নরূপ:
১. অর্থপ্রদান যাচাইয়ের ফলাফল – নামের অমিল: এক্ষেত্রে আপনার অর্থপ্রদানের নামের সাথে একটি সমস্যা আছে। আপনার পেমেন্ট স্লিপ এবং আবেদন চেক করুন এবং নামের ভুল সংশোধনের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
২. ব্যাকএন্ড যাচাইকরণের জন্য মুলতুবি: আপনার তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে দুবার চেক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার কিছু করার নেই, শুধু অপেক্ষা করুন।
৩. পাসপোর্ট ব্যক্তিগতকরণের জন্য মুলতুবি: আপনার পাসপোর্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আপনার পাসপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।
৪. প্রিন্টার সারিতে: আপনার পাসপোর্ট প্রিন্ট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
৫. মুদ্রণ সফল হয়েছে: আপনার পাসপোর্ট সফলভাবে মুদ্রিত হয়েছে। শীঘ্রই, এটি পাঠানোর আগে একটি শেষ পরীক্ষা করা হবে।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করা যায়। এর জন্য প্রথমে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে যেতে হবে। সেখানে ‘ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন’–এ ক্লিক করে ‘অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু’ বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
১. জাতীয় পরিচয়পত্র
২. জন্মনিবন্ধন সনদ
৩. পুরাতন পাসপোর্ট (যদি থাকে)
৪. সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রশাসনিক অনাপত্তি (NOC)
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র
৬. বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগের প্রমাণপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে:
– সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি: ৪ হাজার ২৫ টাকা
– জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি: ৬ হাজার ৩২৫ টাকা
– অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি: ৮ হাজার ৬২৫ টাক
বর্তমানে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কোনও সরকারী দ্রুত পরিষেবা নেই। আবেদনকারীদের কোনও পরিকল্পিত ভ্রমণের আগে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা নিকটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সরবরাহ করতে হবে এবং দূতাবাস দ্বারা বর্ণিত আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
ই-পাসপোর্টের প্রবর্তন আন্তর্জাতিক ভ্রমণের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি সুরক্ষা বাড়ায় এবং পাসপোর্ট জালিয়াতির সম্ভাবনা হ্রাস করে। ই-পাসপোর্টে একটি বৈদ্যুতিন চিপ থাকে যা পাসপোর্টের ডেটা পৃষ্ঠায় মুদ্রিত একই তথ্য ধারণ করে: ধারকের নাম, জন্ম তারিখ এবং অন্যান্য বায়োগ্রাফিক তথ্য।
যদিও বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে, তবে পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও তলানির দিকে। বর্তমানে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বিশ্বের অষ্টম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে স্থান পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, মালদ্বীপ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা এগিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালে এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
সারাংশে, পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার প্রক্রিয়াটি এখন অনেক সহজ এবং দ্রুত। অনলাইন বা এসএমএসের মাধ্যমে আপনি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। তবে, পাসপোর্টের মান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে আরও কাজ করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে দেশের অবস্থান উন্নত হয়। এটি দেশের নাগরিকদের জন্য আরও সহজ ও বাধাহীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করবে।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. পাসপোর্টের মেয়াদ: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বা ১০ বছর। ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৫ বছর হতে হবে। ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
২. পাসপোর্ট নবায়ন: পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস আগে নবায়নের জন্য আবেদন করা উচিত। নবায়নের জন্য পুরাতন পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে হবে।
৩. হারানো পাসপোর্ট: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অবিলম্বে নিকটস্থ থানায় জিডি (General Diary) করতে হবে। এরপর পাসপোর্ট অফিসে যথাযথ আবেদন করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
৪. পাসপোর্টে নাম পরিবর্তন: বিয়ের পর নাম পরিবর্তন বা অন্য কোনো কারণে পাসপোর্টে নাম পরিবর্তন করতে চাইলে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে যেমন বিয়ের সনদ, নাম পরিবর্তনের গেজেট ইত্যাদি।
৫. শিশুদের পাসপোর্ট: ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য পাসপোর্ট আবেদন করতে অভিভাবকের উপস্থিতি প্রয়োজন। শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ এবং অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে।
৬. দ্বৈত নাগরিকত্ব: বাংলাদেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে। তবে দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন।
৭. ভিসা-ফ্রি ভ্রমণ: বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধারীরা বর্তমানে ৪১টি দেশে ভিসা-ফ্রি বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভুটান, হাইতি, ডোমিনিকা, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিনস, ফিজি, ভানুয়াতু ইত্যাদি দেশ।
৮. পাসপোর্ট ডেলিভারি: সাধারণত পাসপোর্ট তৈরি হওয়ার পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আবেদনকারীর ঠিকানায় পাঠানো হয়। তবে কোনো কারণে ডেলিভারি ব্যর্থ হলে পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
৯. পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা: বাংলাদেশে সাধারণত ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। তবে ঘন ঘন ভ্রমণকারীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে।
১০. জরুরি পাসপোর্ট: জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি প্রযোজ্য।
১১. অনলাইন আবেদন সহায়তা: যারা অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে অসুবিধা বোধ করেন, তাদের জন্য পাসপোর্ট অফিসে সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে।
১২. পাসপোর্ট অফিসের সময়সূচি: সাধারণত পাসপোর্ট অফিস রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
১৩. পাসপোর্টের রং: বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য পাসপোর্টের রং সবুজ। কূটনৈতিক পাসপোর্ট লাল রঙের এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নীল রঙের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
১৪. পাসপোর্ট ট্র্যাকিং: পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা ট্র্যাক করতে পারেন।
১৫. পাসপোর্টের ভাষা: বাংলাদেশের পাসপোর্টে তথ্য দুটি ভাষায় লেখা থাকে – বাংলা ও ইংরেজি।
১৬. বায়োমেট্রিক তথ্য: ই-পাসপোর্টে আঙুলের ছাপ, মুখের ছবি এবং আইরিস স্ক্যান সহ বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
১৭. পাসপোর্ট আবেদনের বয়স সীমা: বাংলাদেশে যে কোনো বয়সের নাগরিক পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। নবজাতকের জন্যও পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
১৮. পাসপোর্ট হস্তান্তরযোগ্য নয়: পাসপোর্ট ব্যক্তিগত দলিল, এটি অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করা যায় না।
১৯. পাসপোর্টের ছবি: পাসপোর্টের জন্য সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা ৫০ মিমি x ৫০ মিমি আকারের রঙিন ছবি প্রয়োজন।
২০. অভিযোগ ব্যবস্থাপনা: পাসপোর্ট সেবা সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করা যায়।পাসপোর্ট সংক্রান্ত এই বিস্তারিত তথ্যগুলি জানা থাকলে আপনি সহজেই পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, পাসপোর্ট আপনার পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। তাই এটি সংরক্ষণে সতর্ক থাকুন এবং প্রয়োজনীয় সময়ে নবায়ন করুন।বাংলাদেশ সরকার ক্রমাগত পাসপোর্ট সেবার মান উন্নয়নের চেষ্টা করছে। ই-পাসপোর্টের প্রবর্তন এই প্রচেষ্টারই একটি অংশ। ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাসপোর্ট সেবা আরও সহজ ও নিরাপদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি নাগরিকদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আরও সহজ হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি উন্নত হবে।