How to improve luck scientifically: আমরা প্রায়শই শুনি যে ভাগ্য একটি অনির্ধারিত বিষয় যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু গবেষণা দেখাচ্ছে যে আমরা নিজেরাই আমাদের ভাগ্য তৈরি করতে পারি। হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান দীর্ঘদিন ধরে ভাগ্যবান ও দুর্ভাগা মানুষদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেছেন যে ভাগ্যবান মানুষেরা কিছু নির্দিষ্ট আচরণ ও মানসিকতা অনুসরণ করে যা তাদের জীবনে ভালো সুযোগ আনতে সাহায্য করে।
ওয়াইজম্যানের গবেষণা অনুযায়ী, ভাগ্যবান মানুষেরা সাধারণত বহির্মুখী, কম উদ্বিগ্ন এবং নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি উন্মুক্ত হয়। তারা সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকে, বেশি মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। এর ফলে তাদের জীবনে নতুন সুযোগ আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।ভাগ্য উন্নত করার জন্য ওয়াইজম্যান চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন:
১. সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা:
ভাগ্যবান মানুষেরা তাদের জীবনে আসা সুযোগগুলি সৃষ্টি করে, লক্ষ্য করে এবং সেগুলির উপর কাজ করে। তারা নিয়মিত নতুন মানুষের সাথে দেখা করে, নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় এবং নিজেদের comfort zone থেকে বেরিয়ে আসে।
২. অন্তর্জ্ঞানের কথা শোনা:
ভাগ্যবান মানুষেরা তাদের অন্তর্জ্ঞান বা intuition-কে গুরুত্ব দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০% ভাগ্যবান মানুষ ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্জ্ঞানকে বিশ্বাস করে। তারা মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে নিজেদের অন্তর্জ্ঞানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে।
৩. ভালো ভাগ্যের প্রত্যাশা করা:
ভাগ্যবান মানুষেরা আশাবাদী হয়। তারা বিশ্বাস করে যে তাদের প্রচেষ্টা সফল হবে এবং জীবনে ভালো কিছু ঘটবে। এই ইতিবাচক মনোভাব তাদেরকে নতুন সুযোগ গ্রহণ করতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
৪. খারাপ ভাগ্যকে ভালোয় পরিণত করা:
ওয়াইজম্যান এই নীতিগুলি ব্যবহার করে একটি “লাক স্কুল” পরিচালনা করেছিলেন। এক মাসের মধ্যে, অংশগ্রহণকারীদের ৮০% জানিয়েছিল যে তারা আগের চেয়ে বেশি সুখী, সন্তুষ্ট এবং ভাগ্যবান অনুভব করছে। এটি প্রমাণ করে যে আমরা নিজেদের আচরণ ও মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি।ভাগ্য উন্নত করার জন্য আপনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারেন:
১. নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি উন্মুক্ত থাকুন:
প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটি নতুন জিনিস করার চেষ্টা করুন। এটি হতে পারে একটি নতুন রেস্তোরাঁয় খাওয়া, নতুন হবি শেখা বা নতুন জায়গায় ভ্রমণ করা।
২. সামাজিক নেটওয়ার্ক বাড়ান:
নিয়মিত নতুন মানুষের সাথে দেখা করুন। সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিন, স্বেচ্ছাসেবী কাজ করুন বা অনলাইন কমিউনিটিতে যুক্ত হোন।
৩. ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন:
প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা অনুশীলন করুন। আপনার জীবনের ভালো দিকগুলির উপর ফোকাস করুন এবং নিজেকে ইতিবাচক কথা বলুন।
৪. অন্তর্জ্ঞান শক্তিশালী করুন:
নিয়মিত ধ্যান করুন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের অনুভূতি শুনুন।
৫. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
আপনার জীবনের জন্য স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলি অর্জনের জন্য পরিকল্পনা করুন। এটি আপনাকে সুযোগ চিনতে এবং গ্রহণ করতে সাহায্য করবে।
৬. ব্যর্থতাকে শিক্ষা হিসেবে দেখুন:
প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
৭. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
শারীরিক ব্যায়াম আপনার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যা আপনাকে নতুন সুযোগ গ্রহণে সাহায্য করে।
৮. পড়াশোনা অব্যাহত রাখুন:
নিয়মিত নতুন দক্ষতা অর্জন করুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং নতুন সুযোগের দরজা খুলে দেয়।
৯. রিস্ক নিতে ভয় পাবেন না:
সুযোগ এলে তা গ্রহণ করুন, এমনকি যদি এটি আপনার comfort zone-এর বাইরেও হয়। মনে রাখবেন, বড় পুরস্কার পেতে হলে কিছুটা ঝুঁকি নিতেই হয়।
১০. মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন:
মনে রাখবেন, ভাগ্য পরিবর্তন একটি ধীর প্রক্রিয়া। এটি রাতারাতি ঘটে না। ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিত এই অভ্যাসগুলি অনুশীলন করুন। ধীরে ধীরে আপনি দেখবেন যে আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে।একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করলেই হবে না, বাস্তব পদক্ষেপও নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি লটারি জিততে চান, তাহলে টিকিট কিনতে হবে। সুতরাং, আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলি করতে ভুলবেন না।
শেষ পর্যন্ত, মনে রাখবেন যে প্রত্যেকের জীবনেই ভালো-মন্দ সময় আসে। ভাগ্যবান মানুষেরাও সবসময় ভাগ্যবান হন না। পার্থক্য হল, তারা প্রতিকূলতাকে কীভাবে মোকাবেলা করে। তারা নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকেও শিক্ষা নেয় এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য ব্যবহার করে।সারসংক্ষেপে বলা যায়, ভাগ্য পরিবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া যা আপনার চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন দাবি করে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে, আপনি ধীরে ধীরে নিজের ভাগ্যকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে। সুতরাং, আজ থেকেই শুরু করুন এবং নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ুন।