how to know baby is getting enough breast milk: নতুন মা হওয়ার পর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাচ্চা ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা। বোতলে দুধ খাওয়ালে মাপ দেখা যায়, কিন্তু কিভাবে বুঝব বাচ্চা বুকের দুধ পাচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে? এই প্রশ্নটি প্রতিটি নতুন মায়ের মনে ঘুরপাক খায়। আসলে বাচ্চার শরীর নিজেই সুস্পষ্ট সংকেত দেয় যে সে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে কি না ।
আজকের এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানব কিভাবে নিশ্চিত হবেন যে আপনার সোনামণি ঠিকমতো বুকের দুধ খেয়ে বেড়ে উঠছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, এমন কিছু নির্ভরযোগ্য লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন ।
দুধ খাওয়ানোর সময় যে লক্ষণগুলো দেখবেন
সঠিক লেচিং এর চিহ্ন
বাচ্চা সঠিকভাবে স্তনে লেগে আছে কিনা, সেটাই সবার আগে বুঝতে হবে। সঠিক লেচিং হলে বাচ্চার মুখ প্রশস্ত হয়ে স্তনবৃন্তের চারপাশের কালো অংশের (অ্যারোলা) বেশিরভাগ অংশ ঢেকে থাকবে । বাচ্চার ঠোঁট দুটি বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে, অনেকটা মাছের মুখের মতো। চিবুক স্তনের সাথে লেগে থাকবে, কিন্তু নাক চাপা পড়বে না ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার কোনো ব্যথা হবে না। প্রথম কয়েক চুষে একটু টান লাগতে পারে, কিন্তু তারপর স্বাভাবিক লাগবে ।
গিলে ফেলার শব্দ শুনতে পাওয়া
বাচ্চা যদি ঠিকমতো দুধ পায়, তাহলে আপনি তার গিলে ফেলার শব্দ শুনতে পাবেন। দেখবেন বাচ্চার চোয়াল নিয়মিত নড়ছে এবং গলগল শব্দ হচ্ছে । প্রথমে বাচ্চা দ্রুত দ্রুত চুষবে, তারপর ধীর এবং গভীরভাবে দুধ টানতে থাকবে। এই ছন্দবদ্ধ চুষে ফেলা এবং গিলে ফেলার প্রক্রিয়া দেখতে পেলে বুঝবেন দুধ ঠিকমতো যাচ্ছে ।
বাচ্চার গাল দুটি ভর্তি এবং গোলাকার থাকবে, ভেতরের দিকে দেবে যাবে না। এটি একটি ভালো লক্ষণ যে বাচ্চা কার্যকরভাবে দুধ পান করছে ।
দুধ খাওয়ানোর পরে যা লক্ষ্য করবেন
বাচ্চার আচরণ এবং মেজাজ
যে বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পায়, সে দুধ খাওয়ার পর শান্ত এবং সন্তুষ্ট থাকে। বাচ্চা নিজে থেকেই স্তন ছেড়ে দেবে এবং ঘুমিয়ে পড়বে অথবা চারপাশ দেখে আনন্দিত থাকবে । মুখ ভেজা এবং সন্তুষ্ট দেখাবে।
যদি বাচ্চা দুধ খাওয়ার পরেও কাঁদতে থাকে, অস্থির হয়ে থাকে বা খুব তাড়াতাড়ি আবার খেতে চায়, তাহলে হয়তো সে যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে না ।
মায়ের শরীরের পরিবর্তন
দুধ খাওয়ানোর পর আপনার স্তন নরম হয়ে যাবে। এটি একটি ভালো লক্ষণ যে বাচ্চা দুধ খালি করেছে । স্তনবৃন্ত দেখতে স্বাভাবিক থাকবে, চ্যাপ্টা বা সাদা হয়ে যাবে না। দুধ খাওয়ানোর পর অনেক মা ঘুম ঘুম ভাব এবং শিথিলতা অনুভব করেন, এটিও স্বাভাবিক ।
দৈনিক খাওয়ার ধরন এবং ফ্রিকোয়েন্সি
কতবার দুধ খাওয়াবেন
নবজাতক শিশুর ২৪ ঘণ্টায় ৮-১২ বার দুধ খাওয়া স্বাভাবিক। প্রথম দুই মাসে এই সংখ্যা ১০-১২ বার পর্যন্ত হতে পারে । প্রতিবার দুধ খাওয়ানো ২০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হতে পারে। যদি আপনার বাচ্চা দিনে ৮ বারের কম দুধ খায়, তাহলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন ।
বাচ্চা প্রথমে একটি স্তন ভালো করে খালি করবে, তারপর অন্যটিতে যাবে। এভাবে সে পূর্ণ পুষ্টিসমৃদ্ধ শেষের দুধ (হাইন্ড মিল্ক) পায় ।
ক্লাস্টার ফিডিং
অনেক সময় বাচ্চা দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বারবার দুধ খেতে চাইবে। একে ক্লাস্টার ফিডিং বলে। এটি স্বাভাবিক এবং দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বাচ্চার প্রাকৃতিক উপায় । সাধারণত সন্ধ্যার দিকে এমনটা বেশি হয়।
ডায়াপার ট্র্যাকিং এর গুরুত্ব
ভেজা ডায়াপারের হিসাব
বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল ডায়াপার গণনা। জন্মের পর থেকে দিন অনুযায়ী ভেজা ডায়াপারের সংখ্যা বাড়তে থাকে ।
-
১ম দিন: কমপক্ষে ১টি ভেজা ডায়াপার
-
২য় দিন: কমপক্ষে ২টি ভেজা ডায়াপার
-
৩য় দিন: কমপক্ষে ৫টি ভেজা ডায়াপার
-
৪র্থ দিন: কমপক্ষে ৬টি ভেজা ডায়াপার
-
৫-৭ দিন: কমপক্ষে ৮টি ভেজা ডায়াপার
পাঁচ দিন বয়সের পর থেকে প্রতিদিন অন্তত ৬টি ভালোভাবে ভেজা ডায়াপার থাকা চাই ।
মলের রং এবং পরিমাণ
প্রথম সপ্তাহে বাচ্চার মলের রং এবং পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। প্রথম দিকে কালো বা গাঢ় সবুজ হয়, তারপর ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যায় । পাঁচ দিন বয়সের পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪টি হলুদ রঙের নরম মল হওয়া উচিত।
প্রথম মাসে প্রতিবার দুধ খাওয়ার পর মল হতে পারে, এটি স্বাভাবিক। ছয় সপ্তাহ পর মলের পরিমাণ কমে যেতে পারে ।
ওজন বৃদ্ধি এবং শারীরিক পরিবর্তন
প্রাথমিক ওজন কমা
জন্মের পরপর সব বাচ্চার ওজন কিছুটা কমে। এটি জন্ম ওজনের ৮-১০% পর্যন্ত কমতে পারে এবং এটি স্বাভাবিক । তবে ১০-১৪ দিনের মধ্যে বাচ্চার ওজন জন্মের সময়ের ওজনে ফিরে আসা উচিত ।
নিয়মিত ওজন বৃদ্ধি
প্রথম মাসে বাচ্চার দৈনিক ১৫-৩০ গ্রাম (০.৫-১ আউন্স) ওজন বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক । মাসিক চেকআপে চিকিৎসক ওজন, উচ্চতা এবং মাথার পরিধি মেপে বাচ্চার বৃদ্ধি ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত করবেন।
যখন সতর্ক হতে হবে
উদ্বেগের লক্ষণ
কিছু লক্ষণ দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে :
-
দিনে ৮ বারের কম দুধ খাওয়া
-
গিলে ফেলার শব্দ শোনা না যাওয়া
-
দুধ খাওয়ার সময় ক্লিক ক্লিক শব্দ হওয়া
-
৫ দিন বয়সের পর প্রতিদিন ৬টির কম ভেজা ডায়াপার
-
৩টির কম মল হওয়া
-
৫ দিন পরও ওজন কমতে থাকা
-
বাচ্চার ত্বক হলুদ দেখানো
দুধের পরিমাণ কম হওয়ার লক্ষণ
যদি মনে হয় দুধের পরিমাণ কম, তাহলে এই লক্ষণগুলো খেয়াল করুন: বাচ্চা খাওয়ার পরেও অস্থির থাকা, খুব তাড়াতাড়ি আবার খেতে চাওয়া, দুধ খাওয়ার সময় ঘুমিয়ে পড়া বা কয়েক মিনিটেই ছেড়ে দেওয়া । পাঁচ দিনের মধ্যে দুধ না আসলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ।
দুধের পরিমাণ বাড়ানোর উপায়
ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো
দুধের উৎপাদন চাহিদার উপর নির্ভর করে। যত বেশি বাচ্চা দুধ খাবে, তত বেশি দুধ তৈরি হবে । প্রথম কয়েক সপ্তাহ প্রতি ১-৩ ঘণ্টা পর পর দুধ খাওয়ান, রাতেও। সঠিক লেচিং নিশ্চিত করুন যাতে বাচ্চা কার্যকরভাবে দুধ পায়।
মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ দুধ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পানি পান করুন। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। প্রয়োজনে ল্যাকটেশন কনসালট্যান্টের পরামর্শ নিন ।
কিভাবে বুঝব বাচ্চা বুকের দুধ পাচ্ছে – এই প্রশ্নের উত্তর আসলে বাচ্চার দৈনন্দিন আচরণ এবং শারীরিক অবস্থার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। নিয়মিত ডায়াপার ট্র্যাকিং, ওজন পর্যবেক্ষণ, এবং খাওয়ানোর সময়কার লক্ষণগুলো খেয়াল রাখলেই আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রতিটি বাচ্চা আলাদা এবং তাদের খাওয়ার ধরনও আলাদা হতে পারে। কোনো সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না। আপনার মাতৃত্বের এই সুন্দর যাত্রায় আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে উপভোগ করুন।