Ways to reduce Dementia Risk:স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ যা বয়স্ক মানুষদের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এই রোগের ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। তবে সুসংবাদ হল, কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
স্মৃতিভ্রংশ রোগের কারণ ও লক্ষণ
স্মৃতিভ্রংশ রোগের সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলিতে ক্ষতি হওয়া এবং মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। স্মৃতিভ্রংশ রোগের প্রধান লক্ষণগুলি হল:
- সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া
- পরিচিত জায়গায় পথ হারিয়ে ফেলা
- সহজ কাজ করতে অসুবিধা হওয়া
- কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া
- আচরণ ও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমানোর উপায়
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক সক্রিয়তা বজায় রাখা
নিয়মিত পড়াশোনা, ধাঁধা সমাধান, নতুন ভাষা শেখা ইত্যাদি মানসিক কার্যকলাপ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা এবং নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা উচিত।
রাতের আতঙ্ক: আপনার ভয়ের স্বপ্ন কি আসলে একটি গুরুতর রোগের লক্ষণ?
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ঔষধ সেবন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলি ত্যাগ করলে স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমে।
মাথায় আঘাত এড়ানো
মাথায় আঘাত পাওয়া স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যানবাহন চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করা এবং পড়ে যাওয়া এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
স্মৃতিভ্রংশ রোগের পরিসংখ্যান
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৬০-৭০% রোগী আলজাইমার্স ডিজিজে আক্রান্ত।যুক্তরাজ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষের স্মৃতিভ্রংশ রোগ রয়েছে। সেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি।
স্মৃতিভ্রংশ রোগের সম্ভাব্য প্রভাব
স্মৃতিভ্রংশ রোগ রোগীর জীবনমানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে:
- দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়
- পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে
- আর্থিক সমস্যা দেখা দিতে পারে
- মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে
- পরিচর্যাকারীদের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে
স্মৃতিভ্রংশ রোগের চিকিৎসা
বর্তমানে স্মৃতিভ্রংশ রোগের কোনো নিশ্চিত প্রতিকার নেই। তবে কিছু ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি রোগের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ঔষধ চিকিৎসা
কোলিনেস্টারেজ ইনহিবিটর জাতীয় ঔষধ যেমন ডোনেপেজিল, রিভাস্টিগমিন ইত্যাদি স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে এগুলির সুবিধা সীমিত।
অ-ঔষধ চিকিৎসা
বিভিন্ন ধরনের থেরাপি যেমন কগনিটিভ স্টিমুলেশন থেরাপি, রিমিনিসেন্স থেরাপি ইত্যাদি রোগীর মানসিক অবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করে।
Dengue: ৫টি অবাক করা ঘরোয়া কৌশলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়াকে দিন
সরকারি উদ্যোগ
ভারত সরকার স্মৃতিভ্রংশ রোগসহ বিভিন্ন মানসিক রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি
- আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্র
- টেলি-MANAS উদ্যোগ
স্মৃতিভ্রংশ রোগ একটি জটিল সমস্যা হলেও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক সক্রিয়তা বজায় রাখা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর ও সুখী বার্ধক্য নিশ্চিত করতে পারি।