বাজারে নকল ইলিশের ছড়াছড়ি! খাঁটি ইলিশ চেনার ১০টি অব্যর্থ উপায় জেনে নিন

বাংলার গৌরব, রসরাজ ইলিশ। কিন্তু বাজারে এখন নকল ইলিশের বাড়বাড়ন্ত। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁর মালিকরাও প্রায়ই ঠকে যাচ্ছেন। তাই আজ আমরা জানব, কীভাবে খাঁটি ইলিশ চিনে কিনবেন।ইলিশ মাছের…

Laboni Das

 

বাংলার গৌরব, রসরাজ ইলিশ। কিন্তু বাজারে এখন নকল ইলিশের বাড়বাড়ন্ত। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁর মালিকরাও প্রায়ই ঠকে যাচ্ছেন। তাই আজ আমরা জানব, কীভাবে খাঁটি ইলিশ চিনে কিনবেন।ইলিশ মাছের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বাজারে নকল ইলিশের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা বুঝতেই পারছেন না যে তাঁরা আসল ইলিশের বদলে অন্য কোনো মাছ কিনছেন। এই পরিস্থিতিতে, খাঁটি ইলিশ চেনার কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি।

খাঁটি ইলিশ চেনার ১০টি নির্ভরযোগ্য উপায়

১. আকৃতি ও আকার:

খাঁটি ইলিশের পেট এবং পিঠ উভয় অংশই সমানভাবে বাঁকানো থাকে। অন্যদিকে, সার্ডিন বা অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে পেটের অংশ পিঠের তুলনায় বেশি বাঁকানো থাকে। ইলিশের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০-৫০ সেন্টিমিটার হয়।

২. রঙ ও চকচকে ভাব:
খাঁটি ইলিশের গায়ে রূপালি আভা থাকে। মাছটি সতেজ ও চকচকে দেখায়। পুরনো বা বাসি ইলিশের রঙ ম্যাট হয়ে যায়।

৩. আঁশের বিন্যাস:
ইলিশের আঁশগুলি খুব সূক্ষ্ম ও নিয়মিত বিন্যাসে সাজানো থাকে। এগুলি সহজেই খসে পড়ে।

৪. গন্ধ:
তাজা ইলিশের একটি বিশেষ সুগন্ধ থাকে। কোনো দুর্গন্ধ বা অস্বাভাবিক গন্ধ থাকলে সেটি খাঁটি ইলিশ নয়।

৫. চোখের অবস্থান:
ইলিশের চোখ উজ্জ্বল ও স্পষ্ট হয়। চোখ ঘোলাটে বা ডুবে থাকলে সেটি তাজা নয়।

৬. ফুলকার রঙ:
তাজা ইলিশের ফুলকা লালচে রঙের হয়। ফুলকা ধূসর বা অন্য রঙের হলে সেটি সন্দেহজনক।

৭. মাংসের গঠন:
ইলিশের মাংস নরম কিন্তু দৃঢ় হয়। আঙুল দিয়ে চাপ দিলে স্থিতিস্থাপক হওয়া উচিত।

৮. তেলের পরিমাণ:
খাঁটি ইলিশ তেলযুক্ত হয়। মাছটি কাটলে তেল বের হওয়া উচিত।

৯. পাখনার অবস্থা:
ইলিশের পাখনাগুলি সুস্পষ্ট ও সুগঠিত হয়। ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত পাখনা সতর্কতার ইঙ্গিত।

১০. দাম:
খাঁটি ইলিশের দাম সাধারণত বেশি হয়। অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রি হলে সন্দেহ করা উচিত।

আপনার গাড়ির দীর্ঘায়ু এবং নিরাপত্তার চাবিকাঠি: ১০টি অপরিহার্য রক্ষণাবেক্ষণ কৌশল

বাজারে প্রচলিত নকল ইলিশের ধরন

বাজারে বিভিন্ন ধরনের নকল ইলিশ দেখা যায়। এগুলির মধ্যে রয়েছে:

নকল ইলিশের ধরন বৈশিষ্ট্য
সার্ডিন আকারে ছোট, পেট বেশি বাঁকানো
চাপা আকৃতিতে ইলিশের মতো, কিন্তু স্বাদ ও গন্ধ আলাদা
কৈ রূপালি রঙ দেওয়া হয়, কিন্তু আঁশ মোটা
রূপচাঁদা আকার ছোট, তেল কম

খাঁটি ইলিশ কেনার সময় সতর্কতা

১. বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনুন।
২. মাছটি ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।
৩. সন্দেহ হলে বিক্রেতাকে প্রশ্ন করুন।
৪. অত্যধিক কম দামে বিক্রি হলে সতর্ক হোন।
৫. মৌসুম অনুযায়ী কিনুন। ইলিশের প্রধান মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. অনির্বাণ চক্রবর্তী জানান, “খাঁটি ইলিশ চেনার জন্য অভিজ্ঞতা ও সতর্কতা দুটোই প্রয়োজন। বাজারে গিয়ে মাছটি ভালো করে দেখে, স্পর্শ করে, গন্ধ শুঁকে নিশ্চিত হওয়া উচিত।”কলকাতার বিখ্যাত শেফ সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, “রেস্তোরাঁয় ইলিশ পরিবেশন করার আগে আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মাছ বাছাই করি। গ্রাহকদের স্বাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে খাঁটি ইলিশই ব্যবহার করা হয়।”

আসল ইলিশ চেনার সময় সাধারণ ভুল এবং তা এড়ানোর উপায়

১. শুধুমাত্র আকার দেখে কেনা:
অনেকেই মনে করেন যে বড় আকারের ইলিশই ভালো। কিন্তু এটি সবসময় সত্য নয়। আকারের পাশাপাশি অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও খেয়াল করা জরুরি।

এড়ানোর উপায়: আকারের সাথে মাছের রঙ, গন্ধ, চোখের অবস্থা ইত্যাদি একসাথে বিবেচনা করুন।

২. দামের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া:
কম দামে ইলিশ পেলে অনেকেই খুশি হয়ে কিনে ফেলেন। কিন্তু এটি একটি বড় ভুল হতে পারে।

এড়ানোর উপায়: অস্বাভাবিক কম দামে বিক্রি হলে সন্দেহ করুন। খাঁটি ইলিশের দাম সাধারণত বেশি হয়।

৩. মাছের গায়ে হাত না দিয়ে কেনা:
অনেকে মাছের গায়ে হাত দিতে চান না। কিন্তু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

এড়ানোর উপায়: মাছটি স্পর্শ করে দেখুন। খাঁটি ইলিশের মাংস নরম কিন্তু দৃঢ় হওয়া উচিত।

৪. শুধুমাত্র রূপালি রঙ দেখে কেনা:
অনেকে শুধু রূপালি রঙ দেখেই ইলিশ কিনে ফেলেন। কিন্তু অন্য মাছকেও রূপালি রঙ দেওয়া হতে পারে।

এড়ানোর উপায়: রঙের সাথে মাছের আঁশের বিন্যাস, চোখের অবস্থা, ফুলকার রঙ ইত্যাদি একসাথে দেখুন।

৫. গন্ধ না শুঁকে কেনা:
অনেকে মাছের গন্ধ শুঁকতে ভুলে যান বা এড়িয়ে যান।

এড়ানোর উপায়: তাজা ইলিশের একটি বিশেষ সুগন্ধ থাকে। কোনো দুর্গন্ধ বা অস্বাভাবিক গন্ধ থাকলে সেটি খাঁটি ইলিশ নয়।

Smart Phone Charging Port: চার্জিং পোর্ট পরিষ্কারের সহজ উপায়, মাত্র ১০ মিনিটে করে ফেলুন বাড়িতে বসেই

৬. মৌসুম বহির্ভূত সময়ে কেনা:
অনেকে যে কোনো সময় ইলিশ কিনতে চান, যা ভুল হতে পারে।

এড়ানোর উপায়: ইলিশের প্রধান মৌসুম (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) অনুযায়ী কিনুন। এই সময়ে ইলিশের স্বাদ সর্বোত্তম হয়।

৭. অবিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনা:
অনেকে যেখানে সেখানে থেকে ইলিশ কিনে ফেলেন।

এড়ানোর উপায়: বিশ্বস্ত ও পরিচিত দোকান থেকে ইলিশ কিনুন।

ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে খাঁটি ইলিশ চেনা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উপরোক্ত টিপস মেনে চললে আপনিও সহজেই খাঁটি ইলিশ চিনে কিনতে পারবেন। মনে রাখবেন, সচেতনতা ও সতর্কতাই হল খাঁটি ইলিশ পাওয়ার চাবিকাঠি। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই অমূল্য সম্পদকে রক্ষা করি এবং এর স্বাদ ও ঐতিহ্য বজায় রাখি।

About Author
Laboni Das

এখানে লাবনী দাশের জন্য একটি সম্ভাব্য Author Bio প্রস্তাব করছি: লাবনী দাশ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি একজন উদীয়মান লেখিকা এবং সাংবাদিক, যিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমসাময়িক বিষয়ে লিখে থাকেন। তাঁর লেখায় সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ফুটে ওঠে। লাবনী নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে প্রবন্ধ, গল্প ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন।