Ways to cure children evil eye: শিশুদের নজর দোষ লাগা নিয়ে অনেক মা-বাবা চিন্তিত থাকেন। বিশেষ করে নবজাতক ও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এই উদ্বেগ বেশি দেখা যায়। কারণ তাদের শরীর এখনও পুরোপুরি শক্তিশালী হয়নি, তাই নেতিবাচক শক্তির প্রভাব তাদের উপর সহজেই পড়তে পারে। তবে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে আপনি আপনার সন্তানকে নজর দোষ থেকে রক্ষা করতে পারেন।প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে বুঝবেন যে আপনার শিশুর নজর দোষ লেগেছে। সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:
- হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়া
- বারবার কান্নাকাটি করা
- খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়া
- ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা
- অস্থির আচরণ করা
- জ্বর আসা
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান: কোন পাশে থাকলে সবচেয়ে ভালো?
এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে আপনি নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করতে পারেন:
১. লাল সুতা ব্যবহার করুন:
শিশুর কব্জিতে একটি লাল সুতা বেঁধে দিন। এটি নজর দোষ প্রতিরোধে কার্যকর বলে মনে করা হয়।
২. কালো টিপ দিন:
শিশুর কপালে একটি ছোট কালো টিপ দিয়ে দিন। এটি নজর দোষ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
৩. নিমপাতা ব্যবহার করুন:
শিশুর বিছানায় কয়েকটি নিমপাতা রেখে দিন। নিমের প্রতিরোধী গুণ নজর দোষ দূর করতে সাহায্য করে।
৪. লঙ্কা-নুন দিয়ে নজর উতারুন:
একটি লাল শুকনো লঙ্কা ও একমুঠো নুন নিয়ে শিশুর মাথার চারপাশে সাতবার ঘুরিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিন। এটি নজর দোষ কাটাতে সাহায্য করে।
৫. গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন:
শিশুর ঘরে কিছুটা গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন। এটি পরিবেশ পবিত্র করে এবং নেতিবাচক শক্তি দূর করে।
৬. হনুমান চালিশা পাঠ করুন:
প্রতিদিন হনুমান চালিশা পাঠ করলে তা নজর দোষ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৭. নজর বাটু ঝুলিয়ে রাখুন:
শিশুর ঘরের দরজায় একটি নীল রঙের নজর বাটু ঝুলিয়ে রাখুন। এটি নজর দোষ প্রতিরোধে কার্যকর।
৮. আলুম ব্যবহার করুন:
একটুকরো আলুম নিয়ে শিশুর মাথার চারপাশে সাতবার ঘুরিয়ে গরম তাওয়ায় গলিয়ে ফেলুন। এটি নজর দোষ দূর করতে সাহায্য করে।
৯. তুলসী পাতা ব্যবহার করুন:
শিশুর বিছানার কাছে কিছু তুলসী পাতা রাখুন। তুলসীর পবিত্র গুণ নজর দোষ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১০. কাজল পরান:
শিশুর চোখে একটু কাজল পরিয়ে দিন। এটি নজর দোষ থেকে রক্ষা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
১১. হলুদের টিপ দিন:
শিশুর কপালে একটু হলুদের টিপ দিয়ে দিন। হলুদের পবিত্র গুণ নজর দোষ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১২. গুগ্গুল ধূপ জ্বালান:
শিশুর ঘরে নিয়মিত গুগ্গুল ধূপ জ্বালান। এর সুগন্ধ নেতিবাচক শক্তি দূর করে।
১৩. রুদ্রাক্ষ পরান:
শিশুকে একটি গৌরী শঙ্কর রুদ্রাক্ষের মালা পরিয়ে দিন। এটি নজর দোষ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১৪. লেবু-সুঁই ব্যবহার করুন:
একটি লেবু ও সাতটি সুঁই একসঙ্গে বেঁধে শিশুর বিছানার নিচে রাখুন। এটি নজর দোষ প্রতিরোধে কার্যকর।
১৫. মন্ত্র পাঠ করুন:
নিয়মিত গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করুন। এটি পরিবেশকে পবিত্র করে এবং নেতিবাচক শক্তি দূর করে।
এছাড়াও কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
- শিশুকে অপরিচিত লোকের সামনে বেশিক্ষণ না রাখা
- শিশুর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় কম শেয়ার করা
- শিশুকে নিয়ে অহংকার প্রকাশ না করা
- শিশুর প্রশংসা শুনলে “মাশাআল্লাহ” বলা
শিশুর জ্বর ১০৩ ডিগ্রি? জানুন কী করবেন এবং কখন ডাক্তার দেখাবেন
মনে রাখবেন, এই উপায়গুলি কেবল বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে। কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। তাই শিশু অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।নজর দোষ প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শিশুর যত্ন নেওয়া। তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন, সুষম খাবার দিন, নিয়মিত টিকা দিন এবং ভালোবাসা দিন। এতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং সে সুস্থ থাকবে।তবে মনে রাখবেন, এসব উপায় অবলম্বন করার পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতাকেও নজর দোষের লক্ষণ হিসেবে ভুল বোঝা হয়।
তাই সতর্কতার সাথে এগুতে হবে।পরিশেষে বলা যায়, নজর দোষ প্রতিরোধে এই উপায়গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে এর পাশাপাশি শিশুর সামগ্রিক যত্ন নেওয়া, তার খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে করে আপনার শিশু সুস্থ ও সবল থাকবে এবং নজর দোষের প্রভাব থেকেও মুক্ত থাকবে।