গ্রীষ্মের শুরুতে বাজারে ভিড় জমেছে রসালো আমে। কিন্তু এই আম কি প্রকৃতির নিয়মে নাকি কেমিক্যালের সাহায্যে পাকানো? স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে জেনে নিন কৃত্রিমভাবে পাকানো আম চেনার ১০টি কৌশল।
১. রঙের সমতা (Color Uniformity)
কেমিক্যালে পাকানো আমের রঙ হয় অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল ও সমান। পুরো আমজুড়ে একই রং (হলুদ বা কমলা) দেখতে পাবেন, যা প্রাকৃতিকভাবে পাকার ক্ষেত্রে বিরল। প্রাকৃতিক আমের রঙে থাকে অনিয়মিত দাগ, সবুজ আভা এবং ধীরে ধীরে রং পরিবর্তনের ছাপ।
২. গন্ধের পরীক্ষা (Smell Test)
প্রাকৃতিক আমে থাকবে মিষ্টি ও ফলের সুগন্ধ, বিশেষ করে ডাঁটার কাছাকাছি। অন্যদিকে, কেমিক্যালযুক্ত আমে গন্ধ থাকবে না অথবা রাসায়নিকের তীক্ষ্ণ গন্ধ ভাসবে।
৩. স্পর্শে নরমতা (Texture & Softness)
কৃত্রিম আমের গায়ে চাপ দিলে তা অতিরিক্ত নরম বা পচা অনুভূত হবে, বিশেষ করে নিচের অংশে। প্রাকৃতিক আমে সামান্য নরম ভাব থাকলেও সেগুলো দৃঢ় ও টানটান হবে।
৪. স্বাদের পার্থক্য (Taste Difference)
প্রাকৃতিক আমের স্বাদ হবে মিষ্টি ও সমৃদ্ধ। কেমিক্যালযুক্ত আমের স্বাদ হবে টক, নিস্তেজ বা ধাতব স্বাদের মতো। কিছু ক্ষেত্রে গলায় জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হতে পারে।
৫. পাকার গতি (Ripening Speed)
প্রাকৃতিকভাবে আম পাকতে ৩-৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু কেমিক্যালে পাকানো আম একইসাথে দ্রুত এবং সমস্তটা পেকে যায়। বাজারে হঠাৎ করে প্রচুর পাকা আম দেখলে সতর্ক হোন!
৬. ত্বকের গঠন (Skin Texture)
কেমিক্যালের প্রভাবে আমের ত্বকে দেখা দেবে কুচকে যাওয়া, ভাঁজ বা ফাটল। প্রাকৃতিক আমের ত্বক হবে মসৃণ ও টানটান।
৭. ভাসা-ডুবে পরীক্ষা (Float Test)
এক বালতি পানিতে আম দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম ডুবে যাবে, আর কৃত্রিমভাবে পাকানো আম ভেসে উঠবে। এটি সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া পরীক্ষা!
৮. ভেতরের রং (Internal Color)
কেটে দেখুন! কেমিক্যালযুক্ত আমের ভেতরের অংশে রংয়ের অসামঞ্জস্যতা (কোথাও ফ্যাকাশে, কোথাও গাঢ়) দেখা যাবে। প্রাকৃতিক আমের শাঁস হবে সমান হলুদ ও রসালো।
৯. পাউডারের ছাপ (Chemical Residue)
ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করলে আমের গায়ে সাদা বা ধূসর পাউডারের স্তর জমবে, বিশেষ করে ডাঁটা বা খাঁজে। প্রাকৃতিক আমে এমন দাগ থাকবে না।
১০. উৎসের বিশ্বস্ততা (Trusted Source)
বাজারের অপরিচিত দোকানদের বদলে সরকারি প্রত্যয়িত বিক্রেতা বা জৈব ফার্ম থেকে আম কিনুন। প্লাস্টিকের ব্যাগে বন্ধ অবস্থায় রাখা আম এড়িয়ে চলুন—এটি কৃত্রিম পাকানোর লক্ষণ।
কেন ক্ষতিকর কেমিক্যালে পাকানো আম?
ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে নির্গত আর্সেনিক ও ফসফরাস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এটি খেলে বমি, মাথাব্যথা, ত্বকে জ্বালা থেকে শুরু করে কিডনি ক্ষতি এমনকি ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
সতর্কতা
-
আম কিনে আনার পর ভালো করে ধুয়ে নিন।
-
সবুজ দাগ বা কালো ছোপযুক্ত আম এড়িয়ে চলুন।
-
অতিরিক্ত নরম আম না কেনাই ভালো।
গ্রীষ্মের এই মৌসুমে সচেতন হয়ে আম খান, সুস্থ থাকুন!