“Iconic Indian food brands: ভারতের খাদ্য শিল্পে কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা দশকের পর দশক ধরে সাফল্যের সাথে টিকে আছে এবং বর্তমানে কোটি কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই ৬টি প্রতিষ্ঠান ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন জেনে নেই এই সফল প্রতিষ্ঠানগুলির গল্প:
১. Haldiram’s:
১৯৩৭ সালে বিকানেরের একটি ছোট্ট দোকান থেকে শুরু করে Haldiram’s আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি স্ন্যাক্স ব্র্যান্ড। গঙ্গা বিশন আগরওয়াল প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি বর্তমানে বার্ষিক ৯,২১৫ কোটি টাকার বিক্রয় করে। ভারতের স্ন্যাক্স বাজারের ২১% শেয়ার নিয়ে Haldiram’s বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড। দেশি স্ন্যাক্সের পাশাপাশি পাশ্চাত্য স্ন্যাক্সেও তারা সফল হয়েছে। বর্তমানে Haldiram’s এর পণ্য ১০০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
২. Amul:
১৯৪৬ সালে গুজরাটের একটি দুগ্ধ সমবায় সমিতি হিসেবে যাত্রা শুরু করে Amul আজ ভারতের সবচেয়ে বড় দুগ্ধ ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। “White Revolution” এর পুরোধা হিসেবে Amul ভারতকে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বনির্ভর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে Amul এর বার্ষিক টার্নওভার ৬১,০০০ কোটি টাকার বেশি। দুধ, মাখন, আইসক্রিম সহ বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্যে Amul শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড।
Secrets of Dropshipping: ভারতীয় ই-কমার্স বাজারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার ড্রপশিপিং
Secrets of Dropshipping: ভারতীয় ই-কমার্স বাজারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার ড্রপশিপিং
৩. MTR Foods:
১৯২৪ সালে বেঙ্গালুরুতে একটি রেস্তোরাঁ হিসেবে যাত্রা শুরু করে MTR Foods বর্তমানে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় প্রস্তুত খাবারের ব্র্যান্ড। ১৯৭৬ সালে তারা প্যাকেজড ফুড বিক্রি শুরু করে। বর্তমানে MTR Foods এর বার্ষিক বিক্রয় ১,০০০ কোটি টাকার বেশি। দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের ইনস্ট্যান্ট মিক্স, রেডি টু ইট খাবার ইত্যাদিতে MTR Foods শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড।
৪. Parle Products:
১৯২৯ সালে মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লেতে প্রতিষ্ঠিত Parle Products বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় বিস্কুট উৎপাদনকারী কোম্পানি। তাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট Parle-G বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বিস্কুট ব্র্যান্ড। Parle Products এর বার্ষিক টার্নওভার ১৪,০০০ কোটি টাকার বেশি। বিস্কুট ছাড়াও ক্যান্ডি, চকলেট, কেক ইত্যাদি পণ্যেও তারা সফল।
৫. Britannia Industries:
১৮৯২ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত Britannia Industries ভারতের অন্যতম পুরনো খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি। বিস্কুট, কেক, ব্রেড সহ বিভিন্ন বেকারি পণ্যে Britannia শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড। ২০২২-২৩ অর্থবছরে Britannia Industries এর বার্ষিক রাজস্ব ছিল ১৫,৯৮৬ কোটি টাকা। Good Day, Marie Gold, Tiger ইত্যাদি তাদের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
৬. Dabur:
১৮৮৪ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত Dabur ভারতের অন্যতম পুরনো FMCG কোম্পানি। আয়ুর্বেদিক ওষুধ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে Dabur খাদ্য পণ্য, পানীয়, প্রসাধনী ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে Dabur India এর বার্ষিক রাজস্ব ছিল ১১,৫৩০ কোটি টাকা। Real জুস, Dabur Honey ইত্যাদি তাদের জনপ্রিয় খাদ্য ব্র্যান্ড।
এই ৬টি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পিছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
১. গুণগত মান বজায় রাখা:
দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে এই প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে।
২. ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি:
বিজ্ঞাপন ও প্রচারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলি শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করেছে।
৩. পণ্য বৈচিত্র্য:
সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন পণ্য বাজারে এনে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেছে।
৪. বিতরণ নেটওয়ার্ক:
দেশব্যাপী শক্তিশালী বিতরণ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে যার ফলে তাদের পণ্য সহজেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায়।
৫. আধুনিকায়ন:
প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করেছে।
৬. সামাজিক দায়বদ্ধতা:
বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।
শীর্ষ ৫টি স্মার্টফোন: ২৫,০০০ টাকার নিচে ভারতের সেরা মোবাইল
শীর্ষ ৫টি স্মার্টফোন: ২৫,০০০ টাকার নিচে ভারতের সেরা মোবাইল
এই প্রতিষ্ঠানগুলির সাফল্য ভারতীয় খাদ্য শিল্পের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। ২০২২ সালে ভারতের প্যাকেজড খাদ্য শিল্পের আকার ছিল ৩৫.৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৭ সাল নাগাদ এটি ৬৫.৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী, নগরায়ন, কর্মজীবী মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণ।তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলির সামনে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের সাথে প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্যসচেতন গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
তবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজের সুবাদে এই প্রতিষ্ঠানগুলি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।এই প্রতিষ্ঠানগুলির সাফল্য ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন উদ্যোক্তারা শিখতে পারেন কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে সফল ব্যবসা গড়ে তোলা যায়। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব প্রদান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করছে।সামগ্রিকভাবে, এই ৬টি প্রতিষ্ঠানের ৫০+ বছরের সফল যাত্রা প্রমাণ করে যে গুণগত মান, গ্রাহক সন্তুষ্টি ও সময়োপযোগী পরিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে সফল ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা আরও সফল হতে পারেন। ভবিষ্যতে এই প্রতি ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানগুলি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
তবে সেজন্য তাদেরকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগী হতে হবে:
১. নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার:
ই-কমার্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লকচেইন ইত্যাদি নতুন প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া আরও দক্ষ করতে হবে।
২. পরিবেশবান্ধব পণ্য:
পরিবেশ সচেতন গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে জৈব পণ্য, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং ইত্যাদির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার:
ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসচেতন গ্রাহকদের জন্য কম চর্বি, কম চিনি, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার উৎপাদন করতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ:
বিদেশী বাজারে আরও বিস্তৃতি ঘটিয়ে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে।
৫. সামাজিক দায়বদ্ধতা:
পরিবেশ সংরক্ষণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আরও বেশি অবদান রাখতে হবে।
৬. গবেষণা ও উন্নয়ন:
নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বিদ্যমান পণ্যের মানোন্নয়নের জন্য গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলির সাফল্য শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, সমগ্র ভারতীয় খাদ্য শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিও নিজেদের উন্নত করতে পারে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে ভারতীয় খাদ্য শিল্পের মান উন্নত হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলির অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে Amul এর মডেল গ্রামীণ দুগ্ধ উৎপাদকদের আর্থিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিও স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এভাবে তারা গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে শহুরে অর্থনীতির যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছে।
তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলির সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন:
১. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা:
বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলি ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করছে যার ফলে প্রতিযোগিতা বাড়ছে।
২. পরিবর্তনশীল গ্রাহক চাহিদা:
দ্রুত পরিবর্তনশীল গ্রাহক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলা চ্যালেঞ্জিং।
৩. কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি উৎপাদন কমার ফলে কাঁচামালের দাম বাড়ছে।
৪. নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ:
খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা।
৫. ডিজিটাল পরিবর্তন:
দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলা।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই প্রতিষ্ঠানগুলি যদি নিজেদের আরও উন্নত করতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে তারা শুধু ভারতীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
উপসংহারে বলা যায়, এই ৬টি প্রতিষ্ঠানের ৫০+ বছরের সফল যাত্রা ভারতীয় ব্যবসায়িক ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তাদের সাফল্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলিও বিশ্বমানের হতে পারে। নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলিও যদি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের আরও উন্নত করতে পারে তাহলে আগামী দশকগুলিতেও তারা ভারতীয় খাদ্য শিল্পের অগ্রদূত হিসেবে থাকবে বলে আশা করা যায়।