ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে যে এবছর অক্টোবর মাস ১৯০১ সাল থেকে সবচেয়ে গরম ছিল এবং নভেম্বর মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে শীতের আগমন বিলম্বিত হতে পারে।
আইএমডির মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন যে অক্টোবর মাসে গড় তাপমাত্রা ছিল ২৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫.৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় ১.২৩ ডিগ্রি বেশি। এটি ১৯০১ সাল থেকে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে নভেম্বর মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৫ ডিগ্রি বেশি থাকতে পারে। এর ফলে শীতের আগমন বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মহাপাত্র বলেছেন যে পশ্চিমী বিক্ষোভের অনুপস্থিতি এবং বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় নিম্নচাপের কারণে পূর্বদিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা বেশি থাকছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা কমানোর জন্য উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হওয়া প্রয়োজন।
Weather Forecast 30 August 2024: ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা! আগামীকাল কেমন থাকবে আবহাওয়া?
আইএমডি নভেম্বরকে শীতকালের মাস হিসেবে গণ্য করে না। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে শীতকালের মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আর ডিসেম্বর মাসে শীতের আভাস পাওয়া যায়।
দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে, নভেম্বর মাসে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কারাইকাল, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, য়ানাম, রায়ালসীমা, কেরালা, মাহে এবং দক্ষিণ অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে স্বাভাবিক থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে, তবে উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং মধ্য ভারতের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হতে পারে।
শীতকালের আগমন বিলম্বিত হওয়ার একটি কারণ হতে পারে ভূমধ্যসাগরীয় প্রশান্ত মহাসাগরে নিরপেক্ষ এল নিনো অবস্থার অব্যাহত উপস্থিতি। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ধীরে ধীরে লা নিনা অবস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মহাপাত্র বলেছেন যে এনসো (এল নিনো-দক্ষিণী দোলন) অবস্থা ধীরে ধীরে নেতিবাচক দিকে এগোচ্ছে এবং ডিসেম্বরে লা নিনা শুরু হতে পারে। তিনি স্বীকার করেছেন যে এবছর বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থাগুলি এল নিনো পূর্বাভাস ভুল করেছে।
শীতকালে লা নিনার প্রভাবে আফগানিস্তান, ইরান এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালার উপর দিয়ে একটি অত্যন্ত ঠান্ডা জেট স্ট্রিম প্রবাহিত হয়। এই শক্তিশালী ও ঠান্ডা বাতাস ভারতে শীতের তীব্রতা প্রভাবিত করে।
দিল্লিতে সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে বা ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শীত শুরু হয় এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়। কিন্তু এবছর শীতের আগমন বিলম্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইএমডির তথ্য অনুযায়ী, ১৯০১ সাল থেকে অক্টোবর মাসের সর্বোচ্চ গড় দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৫১ সালে, যা ছিল ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ গড় রাতের তাপমাত্রা ছিল ২২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯১৫ এবং ১৯৫১ সালে।
গত দশকের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতে অক্টোবর মাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর। গত বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৮ অক্টোবর), ২০২২ সালে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৫ অক্টোবর), ২০২১ সালে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৯ অক্টোবর) এবং ২০১৯ সালে ১৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৩ অক্টোবর)।
এবছর অক্টোবর মাস শেষ হয়েছে স্বাভাবিক ঠান্ডা ছাড়াই। এটি ৭৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গরম অক্টোবর মাস হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এটি ১৯০১ সাল থেকে রেকর্ড করা চতুর্থ সর্বোচ্চ মাসিক দিনের তাপমাত্রা এবং ষষ্ঠ সর্বোচ্চ মাসিক রাতের তাপমাত্রা।
আইএমডি জানিয়েছে যে আগামী দুই সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম সমভূমি অঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৫ ডিগ্রি বেশি থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, শীতের আগমন বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে ডিসেম্বর মাসে শীতের আভাস পাওয়া যেতে পারে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণ শীতের প্রভাব অনুভূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে, এবছর শীতের আগমন বিলম্বিত হলেও শীতকালীন মাসগুলিতে স্বাভাবিক শীতের প্রভাব অনুভূত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তনশীল প্রকৃতির কারণে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে। তাই আবহাওয়া দপ্তরের পরবর্তী আপডেট অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।