IMF report India GDP growth 2027: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রথম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ গীতা গোপীনাথ সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেছেন যে ভারত ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। এই ঘোষণাটি ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিফলন।গীতা গোপীনাথ ইন্ডিয়া টুডে নিউজ ডিরেক্টর এবং বিজনেস টুডে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাহুল কানওয়ালের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “ভারতের বৃদ্ধি গত অর্থবছরে আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো ছিল এবং সেই ক্যারিওভার প্রভাব এই বছরের জন্য আমাদের পূর্বাভাসকে প্রভাবিত করছে।”
তিনি আরও যোগ করেন যে বেসরকারি খরচ পুনরুদ্ধার হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির একটি ইতিবাচক লক্ষণ।আইএমএফ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭% এ উন্নীত করেছে। এই পূর্বাভাস ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) সাম্প্রতিক পূর্বাভাসের সাথে প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে আরবিআই ২০২৪-২৫ সালের জন্য ৭.২% বাস্তব জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।গোপীনাথ বলেন, “গত বছর, যদি আপনি বেসরকারি খরচের বৃদ্ধি দেখেন, তা ছিল প্রায় ৪%। আমরা আশা করছি যে তা বাড়বে, যা মূলত গ্রামীণ খরচের পুনরুদ্ধার দ্বারা চালিত হবে। আমরা ইতিমধ্যেই দেখছি যে দুই চাকার যানবাহন বিক্রি এবং দ্রুত বিক্রয়যোগ্য ভোগ্যপণ্যের বিক্রি বেড়ে যাচ্ছে।”
Economics as a Subject: অর্থনীতির শিক্ষা সুযোগ, ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ভালো মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভালো ফসল উৎপাদনে সহায়তা করবে, যা কৃষি আয় বৃদ্ধি করবে এবং গ্রামীণ খরচ বাড়াবে।এই পূর্বাভাস ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। বর্তমানে, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারত ২০২৫ সালের মধ্যে জাপানকে অতিক্রম করে চতুর্থ স্থানে উন্নীত হবে। এরপর, ২০২৭ সালে জার্মানিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় স্থানে পৌঁছাবে।
এই অগ্রগতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ভারতের জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়নের বেশি এবং দেশটি দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালে ভারতের বাস্তব জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮%, যেখানে জাপানের ছিল মাত্র ১.৯%। এছাড়াও, ভারত সরকার বিশ্বব্যাপী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের উৎপাদন ভারতে স্থানান্তর করতে উৎসাহিত করছে, যা শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।আইএমএফের এই পূর্বাভাস ভারতের অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারকদের জন্য একটি বড় উৎসাহ। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, তেলের মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানো এবং সরকারি ঋণ গ্রহণকে বুদ্ধিমান স্তরে রাখার কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এগুলি ভারতের বাইরের অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রতিকূল প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।
India current population 2024: জনসংখ্যার নিরিখে চীনকে ছাড়িয়ে
এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ স্তরের বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে, রাজকোষীয় দায়িত্ব ও বাজেট ব্যবস্থাপনা (এফআরবিএম) নিয়মগুলি পুনর্নির্ধারণ করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে, উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বা মন্দার মুখোমুখি হলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির সম্মিলিত হিসাবে জিডিপির তুলনায় রাজকোষীয় ঘাটতি বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত নমনীয়তা প্রদান করা প্রয়োজন।ভারতের এই সম্ভাব্য অর্থনৈতিক উত্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলে ভারতের প্রভাব বাড়াতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে দেশটির ভূমিকা বৃদ্ধি করতে পারে।
এছাড়াও, এটি ভারতের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে, যা আরও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে সহায়তা করবে।তবে, এই পূর্বাভাস বাস্তবায়নের জন্য ভারতকে তার অর্থনৈতিক সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালনার সহজতা বৃদ্ধি এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের মতো ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া।
সামগ্রিকভাবে, আইএমএফের এই পূর্বাভাস ভারতের জন্য একটি উত্সাহব্যঞ্জক সংবাদ। এটি দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তার বর্ধমান গুরুত্বের প্রতিফলন। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সতর্ক পরিকল্পনা, কঠোর বাস্তবায়ন এবং নিরন্তর প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। ভারতের নীতি নির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং নাগরিকদের একসাথে কাজ করতে হবে যাতে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করা যায় এবং দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করা যায়।