Impact Mujib Statue Vandalism Bangladesh: বাংলাদেশে মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙার ঘটনা: জাতির পিতার প্রতি অবমাননাবাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা ঢাকার একটি এলাকায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভেঙে ফেলে। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা হাতুড়ি দিয়ে মূর্তিটি ভাঙতে থাকে এবং একজন ব্যক্তি মূর্তির উপর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে দেখা যায়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরেও আগুন লাগানো হয়। এই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।ভারতীয় বায়োটেক কোম্পানি বায়োকনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন কিরণ মজুমদার-শ বলেছেন, “জাতির পিতার মূর্তি ধ্বংস করা? তারা কি তাদের ইতিহাস জানে না? বাংলাদেশের জন্য এটা একটি দুঃখজনক দিন।”
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ধ্বংস: ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে চলা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ৩০০ এরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবেন, পালাচ্ছেন না
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলনের পেছনে অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। করোনা মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ১৭-২০% পর্যন্ত বেড়েছে। এসব কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে হিংসাত্মক রূপ দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ও ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এদিকে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ৫২টি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর কমপক্ষে ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। তারা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাবেন।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।”
বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯১.০৪% মুসলিম, ৭.৯৫% হিন্দু, ০.৬১% বৌদ্ধ এবং ০.৩০% খ্রিস্টান। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি একটি আঘাত। তবে এর মাধ্যমে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
বরং এই ঘটনা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন করে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। একই সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বাংলাদেশের এই সংকট দ্রুত নিরসন হওয়া প্রয়োজন।
অন্যথায় দেশের অর্থনীতি, সামাজিক সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে।বাংলাদেশের জনগণকে মনে রাখতে হবে, একটি মূর্তি ভেঙে ফেললেও ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি একটি জাতির স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
তাই তাঁর আদর্শ ও মূল্যবোধকে সম্মান করা প্রতিটি বাঙালির কর্তব্য।বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সুদৃঢ় করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ আবার তার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
মন্তব্য করুন