আজকের ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করে টাইপিং করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু গবেষণা দেখাচ্ছে যে হাতে লেখার গুরুত্ব এখনও অপরিসীম। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে হাতে লেখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, যা শেখার প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা ৩৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন যে হাতে লেখার সময় মস্তিষ্কের প্রায় সব অংশই সক্রিয় হয়, কিন্তু টাইপিংয়ের সময় খুব কম অংশই সক্রিয় থাকে।হাতে লেখার সময় মস্তিষ্কের দৃশ্যগত, সংবেদনশীল এবং মোটর কর্টেক্সের মধ্যে যোগাযোগ প্রয়োজন হয়। অক্ষর গঠনের জন্য সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতা ব্যবহার করতে হয়। এর ফলে মস্তিষ্কে শক্তিশালী নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, যা পড়া, ভাষা শেখা এবং তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়।অন্যদিকে টাইপিংয়ের সময় সব কী-বোর্ড বোতাম একই রকম দেখতে, তাই মস্তিষ্কের খুব কম অংশই সক্রিয় থাকে। ফলে শেখার প্রক্রিয়া তত কার্যকর হয় না।গবেষণায় দেখা গেছে যে হাতে নোট নেওয়া শিক্ষার্থীরা কীবোর্ডে টাইপ করে নোট নেওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় তথ্য বেশি মনে রাখতে পারে। হাতে লেখার সময় তথ্যগুলি প্রক্রিয়া করতে এবং পুনর্গঠন করতে হয়, যা গভীর শিখন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে।
High-Paying Career: এই চাকরিগুলো পেলে আপনিও হতে পারেন দেশের ধনকুবেরদের একজন!
হাতে লেখার আরও কিছু সুবিধা রয়েছে:
- এটি সৃজনশীলতা বাড়ায়। অনেক বিখ্যাত লেখক তাদের প্রথম খসড়া হাতে লেখেন, কারণ এটি ভাবনা-চিন্তার জন্য বেশি সময় দেয়।
- এটি পঠন দক্ষতা উন্নত করে। অক্ষর গঠন ও স্থান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে, যা পড়ার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এটি সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতা উন্নত করে এবং শরীরের ভাল অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- এটি ভাষা দক্ষতা বাড়ায়। অক্ষর ও শব্দ গঠনের সময় ধ্বনি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে।
- এটি মনোযোগ বাড়ায়। স্ক্রিনের বিভ্রান্তি ছাড়া শুধু কাগজ-কলমে মনোনিবেশ করা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে?
তবে এর মানে এই নয় যে টাইপিং শেখা উচিত নয়। বরং দুটি দক্ষতাই শেখা উচিত। শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে প্রাথমিক স্তরে হাতে লেখার উপর জোর দেওয়া উচিত, তারপর ধীরে ধীরে টাইপিং শেখানো যেতে পারে।সারকথা, ডিজিটাল যুগেও হাতে লেখার গুরুত্ব কমেনি। এটি মস্তিষ্কের বিকাশ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং গভীর শিখনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় হাতে লেখার অনুশীলন বজায় রাখা জরুরি। পাশাপাশি টাইপিং দক্ষতাও অর্জন করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা উভয় মাধ্যমে দক্ষ হয়ে ওঠে।