Winter geyser usage tips: শীতকাল এসে গেছে, আর তাই গরম পানির প্রয়োজন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে আপনার গিজার ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করলে তা বিপদজনক হতে পারে? শীতকালে গিজার ফেটে যাওয়া বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে যা আপনার জীবনে বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই গিজার ব্যবহারের আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
শীতকালে গিজারের ব্যবহার বেড়ে যায়, ফলে এর ক্ষয়-ক্ষতিও বাড়ে। সাধারণত গিজারের ট্যাংক গরম পানি বের হয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি ঢোকার সময় প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ঠান্ডা পানি আরও ঠান্ডা হয়ে যায়, ফলে গরম ও ঠান্ডা পানির মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য বেড়ে যায়। এর ফলে ট্যাংকের প্রসারণ ও সংকোচন আরও বেশি হয়, যা ধাতব ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
গিজারের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপ হল এটি নিয়মিত পরিদর্শন করা। লিক বা ক্ষতির চিহ্ন আছে কিনা তা খুঁটিয়ে দেখুন। পাইপ, ভালভ এবং ট্যাংকে মরিচা, ক্ষয় বা লিকের লক্ষণ আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন। ছোট একটি লিকও গিজারের দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে তা বড় সমস্যার রূপ নিতে পারে।
গিজারে পলি জমা হলে তা কঠিন পরিশ্রম করে, যার ফলে দক্ষতা কমে যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। তাই গিজার ফ্লাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি করার জন্য, গিজারের নীচের ভালভ খুলে কিছুটা পানি বের করে দিন। এতে করে জমা থাকা পলি বের হয়ে যাবে।
থার্মোস্ট্যাট হল গিজারের অপারেটিং সিস্টেম যা পানি কখন গরম করা শুরু করবে এবং কখন বন্ধ করবে তা নির্ধারণ করে। সাধারণত এটি 60°C-এ সেট করা থাকে। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় সেট করলে স্টিম জমা হয়ে ট্যাংকে চাপ তৈরি হতে পারে, যা বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা জল খেলে হতে পারে মারাত্মক – বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন
গিজার ব্ল্যাংকেট ব্যবহার করে গিজারকে ইনসুলেট করা যায়। এটি তাপ ক্ষয় কমায়, বিশেষ করে ঠান্ডা আবহাওয়ায়। এর ফলে বিদ্যুৎ খরচ কমে এবং আপনি অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন।
গিজার ফেটে গেলে ড্রিপ ট্রে সাহায্য করতে পারে। ড্রিপ ট্রেতে একটি আউটলেট পাইপ থাকে যা বের হওয়া পানি বের করে দেয়, যা আসবাবপত্র, অবকাঠামো এবং মানুষকে রক্ষা করে।
বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকার সময় গিজার বন্ধ রাখা সহায়ক, তবে এটি খুব বেশিক্ষণ ঠান্ডা হতে দেওয়া উচিত নয়। পানি সম্পূর্ণ ঠান্ডা হয়ে গেলে সিস্টেমে প্রসারণ-সংকোচন চক্র বেড়ে যায়, যা যন্ত্রের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে।
সবশেষে, একজন পেশাদার প্লাম্বারের সাহায্য নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গিজার ফেটে গেলে বা ট্যাংকের কোনো অংশ খারাপ হয়ে গেলে অবিলম্বে একজন বিশ্বস্ত প্লাম্বারের সাথে যোগাযোগ করুন।
যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে যান, তাহলে গিজারের ট্যাংক খালি করে রাখুন। স্থির পানিতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে।
গিজারের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুত প্রতিস্থাপন করুন। বিশেষ করে, চুনাপাথরের জমা গিজারের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি ভালভ এবং অন্যান্য হিটিং উপাদান নষ্ট করে দেয়।
ফ্রিজ বা টেলিভিশনের মতো, গিজারেরও চালু থাকার সময় স্থির বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হয়। ভোল্টেজ উঠানামা করলে তা গিজারের সুষ্ঠু কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বাড়ির পানির গুণমান গিজারের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি পানি সরবরাহে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে এটি কঠিন পানি হতে পারে। কঠিন পানি গিজারের নীচে খনিজ জমা করে, যা পরিষ্কার না করলে গিজারের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে।
শীতকালে গিজার ব্যবহারের আগে এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখলে আপনি নিশ্চিতভাবে নিরাপদে এবং আরামে গরম পানি ব্যবহার করতে পারবেন। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক সেটিংস, এবং পেশাদার সাহায্য নিয়ে আপনি আপনার গিজারের আয়ু বাড়াতে পারেন এবং অপ্রত্যাশিত বিপদ এড়াতে পারেন। মনে রাখবেন, একটি ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা গিজার শুধু আপনার শীতকালকে আরামদায়ক করবে না, বরং আপনার নিরাপত্তা ও অর্থ সাশ্রয়েও সাহায্য করবে।