আগামী ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনে পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় উদ্বোধন হতে চলেছে একটি নতুন জগন্নাথ মন্দির। এই ঘোষণা এসেছে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই মন্দিরের দরজা ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য খুলে যাবে। পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি এই স্থাপত্য শুধু ধর্মীয় গুরুত্বই বহন করছে না, বরং দিঘার পর্যটন মানচিত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। উদ্বোধনের আগে ২৯ এপ্রিল থেকে মন্দির চত্বরে যজ্ঞ শুরু হবে, যা এই অনুষ্ঠানকে আরও মহিমান্বিত করবে।
এই ঘটনার বিবরণ শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে, যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে সমুদ্রতীরবর্তী পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের জায়গায় এটি তৈরির কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশগত নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। পরে দিঘা স্টেশনের কাছে ২০ একর জমিতে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং হিডকোর তত্ত্বাবধানে এটি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মন্দিরের উচ্চতা ৬৫ মিটার, যা রাজস্থানের বংশী পাহাড়ের বেলেপাথর দিয়ে তৈরি। ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেন যে ২০২৫ সালের এপ্রিলে এটি উদ্বোধন হবে। অবশেষে, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ৩০ এপ্রিল তারিখ চূড়ান্ত করেন।
মন্দিরের উদ্বোধন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি ও পর্যটনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্দিরের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ২৭ সদস্যের এই কমিটিতে ইসকন, পুরীর জগন্নাথ মন্দির, কালীঘাট মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য রয়েছেন। উদ্বোধনের পর থেকে এখানে রথযাত্রাও শুরু হবে, যা পুরীর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে পরিচালিত হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সোনার ঝাঁটা তৈরির পরিকল্পনাও করেছেন, যা রথযাত্রার আগে ঝাঁট দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হবে। এই উদ্যোগ বাংলার আধ্যাত্মিকতা ও ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করবে।
এই মন্দিরের গুরুত্ব শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, পর্যটনের ক্ষেত্রেও অপরিসীম। দিঘা, যিনি ইতিমধ্যেই সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত, এই মন্দিরের মাধ্যমে আরও বেশি পর্যটক আকর্ষণ করবে। প্রশাসন ইতিমধ্যে উদ্বোধনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি, পার্কিং ব্যবস্থা ও নতুন স্নানঘাট তৈরি করা হচ্ছে। হোটেল বুকিংও বেড়েছে, যা থেকে বোঝা যায় এই উদ্বোধন দিঘার অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো এখানেও জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার পূজা হবে, যা ভক্তদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।
সবশেষে, এই মন্দির বাংলার মানুষের জন্য গর্বের বিষয়। অক্ষয় তৃতীয়ার মতো শুভ দিনে এর উদ্বোধন একটি প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে, যা সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যা রাজ্যের উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দিঘার এই জগন্নাথ মন্দির শুধু ভক্তদের জন্যই নয়, সবার জন্য একটি নতুন গন্তব্য হিসেবে উঠে আসবে। ৩০ এপ্রিলের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য প্রতীক্ষা করছে গোটা বাংলা।