Income Tax Return 2025: আয়কর রিটার্ন দাখিল করা প্রত্যেক করদাতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব। ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই হল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬) আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির প্রয়োজন হয়, যেগুলি আগে থেকেই প্রস্তুত রাখলে ITR দাখিল প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। প্রত্যেক করদাতার আয় এবং আর্থিক লেনদেনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন নথির প্রয়োজন হতে পারে, তবে কিছু নথি আছে যা বেশিরভাগ করদাতার জন্যই অপরিহার্য।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য অপরিহার্য নথিপত্র
পান কার্ড ও আধার কার্ড
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হল আপনার PAN কার্ড। পান কার্ড হল একটি প্রধান পরিচয় নথি যা আয়কর বিভাগ দ্বারা জারি করা হয়, এবং সমস্ত আর্থিক লেনদেনের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আধার কার্ডও একটি অপরিহার্য দলিল, কারণ আয়কর আইনের সেকশন 139AA অনুসারে, করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় আধার নম্বর দিতে হয়। কেবল তাই নয়, আপনার পান এবং আধার লিঙ্ক করাও বাধ্যতামূলক।
ফর্ম ১৬
বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্য ফর্ম ১৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ফর্মে আপনার বেতন, কর্তনকৃত টিডিএস এবং আয়করের বিস্তারিত তথ্য থাকে। আপনার নিয়োগকর্তা এই ফর্ম প্রদান করে থাকেন, যা আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি প্রাথমিক দলিল হিসেবে কাজ করে। এই ফর্মে কর্মচারীর প্যান, নিয়োগকর্তার প্যান ও টান (TAN), এবং মোট বেতনের বিশদ বিবরণ থাকে।
মিউচুয়াল ফান্ডে বেশি রিটার্ন চাই? জানুন ৭-৫-৩-১ ম্যাজিক ফর্মুলা!
বেতনের স্লিপ
আপনার মাসিক বেতনের স্লিপগুলিও গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই স্লিপগুলি আপনার বার্ষিক আয়ের একটি সম্পূর্ণ চিত্র প্রদান করে, যা আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় আপনার আয়ের বিবরণ সঠিকভাবে প্রদর্শন করতে সাহায্য করে।
ফর্ম ২৬এএস ও আনুয়াল ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট (AIS)
ফর্ম ২৬এএস হল আয়কর বিভাগ দ্বারা প্রদত্ত একটি বার্ষিক কর বিবৃতি, যা ট্যাক্স পাসবুকের মতো কাজ করে। এতে আপনার প্যান নম্বরের অধীনে জমা করা বা কাটা যাওয়া সমস্ত করের বিবরণ থাকে। আনুয়াল ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট (AIS) আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা আপনার সমস্ত আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য প্রদান করে। এতে TDS, TCS, সুদ, লভ্যাংশ এবং শেয়ার বাজারের কার্যকলাপ সহ আপনার সমস্ত আর্থিক লেনদেনের একটি সামগ্রিক সারাংশ থাকে।
আয়কর ছাড় দাবি করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
ট্যাক্স-সেভিং ইনভেস্টমেন্ট প্রুফ
কর সঞ্চয়ী বিনিয়োগগুলির প্রমাণপত্র আপনার কর দায়বদ্ধতা কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ড, জীবন বীমা প্রিমিয়াম রসিদ, স্ট্যাম্প-ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন চার্জ, হোম লোনের মূল পরিশোধ, ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ELSS) এবং ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (NPS) এ নিজের অবদানের প্রমাণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই নথিগুলি সেকশন 80C, 80CCC, এবং 80CCD এর অধীনে ছাড় দাবি করতে সাহায্য করে। আইটি আইনের অনুযায়ী, এই সেকশনগুলির অধীনে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় দাবি করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়াম রসিদ
স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়াম রসিদগুলি সেকশন 80D এর অধীনে কর ছাড় দাবি করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি নিজের, স্ত্রী/স্বামী এবং সন্তানদের জন্য ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দাবি করতে পারেন। যদি আপনি ৬০ বছরের কম বয়সী বাবা-মায়ের জন্যও স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়াম প্রদান করেন, তাহলে এই ছাড় ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস থেকে সুদের সার্টিফিকেট
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট, রিকারিং ডিপোজিট বা পোস্ট অফিস স্কিম থেকে প্রাপ্ত সুদের সার্টিফিকেট আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় প্রয়োজন হয়। এই সার্টিফিকেটগুলি আপনার ‘অন্যান্য উৎস থেকে আয়’ বিভাগে উল্লেখ করা সুদের আয়ের হিসাব করতে সাহায্য করে।
মূলধনী লাভের প্রমাণপত্র
যদি আপনি বিগত অর্থবছরে কোনো সম্পত্তি, জমি, বাড়ি, স্টক বা মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করে থাকেন, তাহলে আপনাকে মূলধনী লাভের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এর মধ্যে নিম্নলিখিত নথিগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
- সম্পত্তি, জমি বা বাড়ির ক্রয়/বিক্রয় দলিল
- মিউচুয়াল ফান্ড হাউস বা ব্রোকারের বিবৃতি
ভাড়া চুক্তি
যদি আপনার কোনো ধরনের ভাড়া আয় থাকে, তাহলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় ভাড়া চুক্তিও একটি প্রয়োজনীয় নথি। এই চুক্তি প্রমাণ করে যে আপনি একটি সম্পত্তি থেকে ভাড়া আয় করছেন, যা ‘সম্পত্তি থেকে আয়’ বিভাগে উল্লেখ করতে হবে।
ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টও একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। আপনার আয়কর রিটার্নে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ যেমন অ্যাকাউন্ট ধারকের নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর, এবং IFSC কোড উল্লেখ করতে হয়। আয়কর বিভাগ কর ফেরত প্রক্রিয়া করার জন্য এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বিবরণ ব্যবহার করে।
ফর্ম ১৬A, ১৬B, ১৬C
ফর্ম ১৬A, ১৬B, এবং ১৬C নিয়োগকর্তাদের দ্বারা প্রদত্ত TDS সার্টিফিকেটগুলির অংশ। যদি আপনি কোনো সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয় করেন, অথবা ভাড়া আয় পান, তাহলে এই ফর্মগুলি প্রয়োজন হতে পারে। সম্পত্তি ক্রেতাকে ফর্ম ১৬B প্রদান করতে হয়, আর ভাড়া প্রদানকারী ব্যক্তিকে ফর্ম ১৬C প্রদান করতে হয়।
ITR ফাইলিং পদ্ধতি ও সময়সীমা
অনলাইন vs অফলাইন ফাইলিং
২০২৪-২৫ অর্থবছরের (মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬) জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করার প্রক্রিয়া ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে শুরু হবে। করদাতাদের কাছে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বিকল্প থাকবে, তবে অনলাইন পদ্ধতি অনেক দ্রুত ও সহজ
অনলাইন পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করতে, আপনাকে আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টালে আপনার PAN/আধার এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে হবে। তারপর ‘ই-ফাইল’ এবং ‘ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নস’ এর অধীনে ‘ফাইল ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন’ নির্বাচন করতে হবে। উপযুক্ত মূল্যায়ন বছর এবং ITR ফর্ম নির্বাচন করার পর, আয়, কর ছাড় এবং ব্যতিক্রমের মতো বিবরণ দিতে হবে।
আয়কর রিটার্নের সময়সীমা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের (মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬) জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা হল:
- ব্যক্তি, HUF, AOP, এবং BOI (অডিট প্রয়োজন নেই): ৩১ জুলাই, ২০২৫
- অডিট প্রয়োজন হয় এমন ব্যবসা: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
- ট্রান্সফার প্রাইসিং রিপোর্ট প্রয়োজন এমন ব্যবসা: ৩০ নভেম্বর, ২০২৫
- সংশোধিত রিটার্ন: ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
- বিলম্বিত রিটার্ন: ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
- আপডেটেড রিটার্ন: ৩১ মার্চ, ২০৩০ (প্রাসঙ্গিক মূল্যায়ন বর্ষ থেকে ৪ বছর)
২০২৫ সালে আয়কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন
১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে আয়কর ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন কার্যকর হবে। ২০২৫ সালের বাজেটে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ এবং কার্যকর করার জন্য বেশ কয়েকটি পরিবর্তন ঘোষণা করেছেন। প্রধান পরিবর্তনগুলি হল:
- নতুন কর ব্যবস্থায় ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো কর নেই
- ধারা ৮৭A-এর অধীনে ছাড় ২৫,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০,০০০ টাকা করা হয়েছে
- বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সুদের আয়ের উপর TDS সীমা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে
- বিদেশে টাকা পাঠানোর জন্য TCS সীমা ৭ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে
- আপডেটেড ITR দাখিলের সময়সীমা ১২ মাস থেকে বাড়িয়ে ৪৮ মাস (৪ বছর) করা হয়েছে
ITR ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর, এটি যাচাই করা প্রয়োজন। এই যাচাইকরণ দুই উপায়ে করা যেতে পারে:
- অনলাইন: আধার OTP ব্যবহার করে
- অফলাইন: আয়কর বিভাগে ITR-V (ভেরিফিকেশন) এর স্বাক্ষরিত হার্ড কপি পাঠিয়ে
আপনি আপনার ITR দাখিল করার তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ই-ভেরিফাই করতে পারেন। আপনি আপনার নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্ট বা আধার ভিত্তিক OTP ব্যবহার করে ই-ভেরিফাই করতে পারেন। আপনার ITR ই-ভেরিফাই করতে ব্যর্থতা আপনার ITR দাখিলকে অবৈধ করতে পারে।
নতুন ITR ফর্ম-২ এক্সেল ইউটিলিটি
আয়কর বিভাগ সম্প্রতি ITR-2 ফাইল করার জন্য একটি আপগ্রেড করা এক্সেল-ভিত্তিক ইউটিলিটি প্রকাশ করেছে। এটি বিশেষভাবে ব্যবসা বা পেশা থেকে আয় নেই এমন ব্যক্তি ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের (HUF) জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই নতুন ইউটিলিটি (ভার্সন ১.১১) ২৫ মার্চ, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। এটি ধারা 139(8A) এর অধীনে সংশোধিত রিটার্ন দাখিলের সুবিধা প্রদান করে, যা করদাতাদের প্রয়োজনে তাদের রিটার্ন সংশোধন করতে সাহায্য করে।
ITR-2 ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য যাদের বার্ষিক আয় ৫০ লক্ষ টাকার বেশি এবং যারা মূলধনী লাভ, ভাড়া আয় (একাধিক বাড়ি থেকে), বিদেশী আয় ইত্যাদি উৎস থেকে আয় করেন। এছাড়াও, যদি আপনি কোনো কোম্পানির পরিচালক হন বা অতালিকাভুক্ত ইকুইটি শেয়ার ধারণ করেন, তাহলেও আপনাকে ITR-2 দাখিল করতে হবে।
ট্যাক্স স্ল্যাব বদলে দিল মোদি সরকার: মধ্যবিত্তের পকেটে থাকবে আরও টাকা!
উচ্চ আয়কারী করদাতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি
২০২৪-২৫ অর্থবছরে, ১ কোটি টাকার বেশি আয় সহ ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, পূর্ববর্তী সংখ্যা থেকে ৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। ITR দাখিলকারীদের মোট সংখ্যা ৯.০৫ কোটিরও বেশি হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৬.৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি কর ব্যবস্থার মধ্যে উন্নত অনুবর্তিতা ও প্রয়োগের ব্যাপক প্রবণতা প্রতিফলিত করে, ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পাশাপাশি, বিশেষ করে প্রযুক্তি, অর্থ, এবং রিয়েল এস্টেট খাতে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব, যা প্রত্যেক করদাতাকে সঠিকভাবে পালন করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আইটিআর দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ জুলাই, ২০২৫। আপনার রিটার্ন দাখিল করার সময় এই সমস্ত নথিপত্র সঙ্গে রেখে আপনি আপনার ট্যাক্স ফাইলিং প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে পারেন। এই সমস্ত নথিপত্র নিরাপদে রাখুন যাতে প্রয়োজনে পরে কর পরামর্শদাতা বা আয়কর বিভাগকে দেখানো যায়। আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় সঠিক নথিপত্র প্রস্তুত রাখা এবং সময়মতো রিটার্ন দাখিল করা শুধু আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্যই নয়, বরং এটি আপনার আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সুশৃঙ্খল রাখতেও সাহায্য করে।