income tax return exemption: প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এলেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—আসলে কাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয় না? ভারতের আয়কর আইনে এমন অনেক বিশেষ ব্যবস্থা আছে যেখানে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলেও চলে। আজকের এই বিস্তারিত গাইডে আমরা জানব কারা কারা এই সুবিধা পেতে পারেন এবং কী কী শর্ত মানতে হবে।
মূল আয়কর অব্যাহতির সীমা অনুযায়ী কারা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না
ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী, যদি আপনার মোট আয় নির্দিষ্ট অব্যাহতি সীমার নিচে থাকে, তাহলে আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। এই সীমা আপনার বয়স এবং কোন কর ব্যবস্থা বেছে নিয়েছেন তার উপর নির্ভর করে।
পুরাতন কর ব্যবস্থায় অব্যাহতির সীমা:
- ৬০ বছরের নিচে: ২.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত
- ৬০-৮০ বছর (সিনিয়র সিটিজেন): ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত
- ৮০ বছরের উপরে (সুপার সিনিয়র সিটিজেন): ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত
নতুন কর ব্যবস্থায় অব্যাহতির সীমা:
- সকল বয়সের জন্য: ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত
- ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে: ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত
উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ৫৯ বছর বয়সী ব্যক্তির বার্ষিক আয় ২.৯০ লাখ টাকা হয় এবং তিনি কোনো কর ছাড় দাবি না করেন, তাহলে তাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না।
মিউচুয়াল ফান্ডে বেশি রিটার্ন চাই? জানুন ৭-৫-৩-১ ম্যাজিক ফর্মুলা!
৭৫+ বয়সী প্রবীণদের জন্য বিশেষ ছাড় – সেকশন ১৯৪পি
আয়কর আইনের ১৯৪পি ধারা অনুযায়ী, ৭৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এই ধারার অধীনে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয় না।
সেকশন ১৯৪পি-র শর্তাবলী:
- প্রবীণ ব্যক্তিকে অবশ্যই ৭৫ বছর বা তার বেশি বয়সী হতে হবে
- তিনি অবশ্যই ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
- তার আয় শুধুমাত্র পেনশন এবং সুদ থেকে আসতে হবে
- সুদের আয় সেই একই ব্যাংক থেকে আসতে হবে যেখানে পেনশন পান
- নির্দিষ্ট ব্যাংকে একটি ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে
- ব্যাংকটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে
উদাহরণ:
মিস্টার শর্মা, ৭৭ বছর বয়সী। তার আয়:
- ৪.৮ লাখ টাকা পেনশন
- ১ লাখ টাকা সুদ একই SBI শাখা থেকে
- SBI-তে ফর্ম ১২BBA জমা দিয়েছেন
এক্ষেত্রে SBI তার কর কেটে নেবে এবং মিস্টার শর্মাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না।
কৃষি আয়ের ভিত্তিতে যারা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না
যদি আপনার আয় শুধুমাত্র কৃষিকাজ থেকে আসে এবং তা ৫,০০০ টাকার নিচে হয়, তাহলে আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। তবে, কৃষি আয় ৫,০০০ টাকার বেশি হলে এবং অন্য কোনো আয় মূল অব্যাহতি সীমা অতিক্রম করলে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
গৃহিণী ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাড়
যেসব গৃহিণী বা ছাত্রছাত্রীদের কোনো করযোগ্য আয় নেই অথবা যারা শুধুমাত্র পারিবারিক উপহার, ভাতা বা পকেট মানি পান (যা করযোগ্য নয়), তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রবাসী ভারতীয়দের (NRI) জন্য ছাড়
যেসব অপ্রবাসী ভারতীয় (NRI) ভারতে কোনো আয় করেন না, অথবা যাদের ভারতীয় আয় ২.৫ লাখ টাকার কম, তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয় না। এটি বিশেষভাবে তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা বিদেশে কাজ করেন কিন্তু ভারতে সামান্য বিনিয়োগ বা সুদের আয় আছে।
সুদ ও লভ্যাংশ থেকে সীমিত আয়ের ক্ষেত্রে
যদি আপনার আয় শুধুমাত্র সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ, ফিক্সড ডিপোজিট বা লভ্যাংশ থেকে আসে এবং তা মূল অব্যাহতি সীমার নিচে থাকে, এবং কোনো TDS কাটা না হয়ে থাকে, তাহলে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
কোন পরিস্থিতিতে আয় কম হলেও রিটার্ন জমা দিতেই হবে
এমন কিছু বিশেষ পরিস্থিতি আছে যেখানে আপনার আয় অব্যাহতি সীমার নিচে হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক:
বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রসমূহ:
- কোনো কোম্পানির ডিরেক্টর বা LLP-র পার্টনার হলে
- বছরে ১ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক একাউন্টে জমা করলে
- বিদেশ ভ্রমণে ২ লাখ টাকার বেশি খরচ করলে
- বার্ষিক বিদ্যুৎ বিল ১ লাখ টাকার বেশি হলে
- TDS কাটা হয়েছে ২৫,০০০ টাকা বা তার বেশি (প্রবীণদের জন্য ৫০,০০০ টাকা)
- ব্যবসার টার্নওভার ৬০ লাখ বা পেশাগত আয় ১০ লাখের বেশি হলে
- বিদেশী সম্পদ থাকলে বা বিদেশী ব্যাংক একাউন্টে সাইনিং অথরিটি থাকলে
- কর রিফান্ড দাবি করতে চাইলে
ট্যাক্স স্ল্যাব বদলে দিল মোদি সরকার: মধ্যবিত্তের পকেটে থাকবে আরও টাকা!
আয়কর রিটার্ন না জমা দিলেও করা যেতে পারে – কিন্তু উপকারী
যদিও উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবুও রিটার্ন জমা দেওয়া অনেক সময় উপকারী হতে পারে:
- ব্যাংক লোনের জন্য আয়ের প্রমাণ হিসেবে
- ভিসা আবেদনের সময় আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ
- ভবিষ্যতে আয়ের তথ্য সংরক্ষণের জন্য
- TDS রিফান্ড পাওয়ার জন্য
- ক্যাপিটাল লস ক্যারি ফরওয়ার্ড করার জন্য
২০২৫ সালের নতুন পরিবর্তনসমূহ
২০২৫ সালের ইউনিয়ন বাজেটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে:
- নতুন কর ব্যবস্থায় মূল অব্যাহতি সীমা ৩ লাখ থেকে বেড়ে ৪ লাখ টাকা
- সেকশন ৮৭এ-র অধীনে কর রিবেট ২৫,০০০ থেকে বেড়ে ৬০,০০০ টাকা
- ফলে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো কর দিতে হবে না
আয় কম থাকলেও সাবধানে থাকুন। আয়কর আইন অনুযায়ী আপনার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখুন আসলেই রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। সন্দেহ থাকলে যোগ্য কর পরামর্শদাতার সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়ার ছাড় পেতে হলে সব শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।