আইপিএল ধারাভাষ্যকারদের অবিশ্বাস্য আয়: কে পান সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক?

আইপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য কমেন্টেটররা অবিশ্বাস্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন। ২০২৫ সালের আইপিএল মৌসুমে শীর্ষ ধারাভাষ্যকারদের দৈনিক আয় ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত, যেখানে নবীন কমেন্টেটররা প্রতিদিন…

Srijita Chattopadhay

 

আইপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য কমেন্টেটররা অবিশ্বাস্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন। ২০২৫ সালের আইপিএল মৌসুমে শীর্ষ ধারাভাষ্যকারদের দৈনিক আয় ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত, যেখানে নবীন কমেন্টেটররা প্রতিদিন প্রায় ৩৫,০০০ টাকা আয় করেন। ইংরেজি ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে সুনীল গাভাস্কার ও হর্ষ ভোগলে বার্ষিক প্রায় ৬ কোটি টাকা উপার্জন করেন, যা এই পেশাটির আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধি করেছে।

আইপিএল-এ কমেন্টেটররা তিনটি প্রধান ক্যাটেগরিতে বিভক্ত: ডাগআউট প্যানেল, ইংরেজি প্যানেল এবং হিন্দি প্যানেল। ডাগআউট প্যানেলের কমেন্টেটররা সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান, বার্ষিক ৫০০,০০০ থেকে ৭০০,০০০ ডলার পর্যন্ত। ইংরেজি প্যানেলের সদস্যরা ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ ডলার এবং হিন্দি প্যানেলের সদস্যরা ৮০,০০০ থেকে ৩৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত বার্ষিক আয় করেন।

প্রতি ম্যাচে কমেন্টেটরদের আয়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, সুনীল গাভাস্কার প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ১০-১৫ লাখ টাকা আয় করেন। হর্ষ ভোগলে প্রতি ম্যাচে ৮-১২ লাখ টাকা এবং ইয়ান বিশপ ৯-১৩ লাখ টাকা পান। সঞ্জয় মঞ্জরেকর ৬-১০ লাখ টাকা, মাইকেল স্লেটার ৭-১১ লাখ টাকা এবং লিসা স্থালেকার ৫-৮ লাখ টাকা প্রতি ম্যাচে উপার্জন করেন।

হিন্দি ধারাভাষ্যের ক্ষেত্রে আকাশ চোপড়া সবচেয়ে বেশি আয় করেন, বার্ষিক প্রায় ৩৫০,০০০ ডলার। তাঁর পরেই রয়েছেন আশিস নেহরা, গৌতম গম্ভীর, ইরফান পাঠান এবং অজিত আগারকার, যাঁরা প্রত্যেকে বার্ষিক ২০০,০০০ ডলার আয় করেন। নবীনতর কমেন্টেটররা যেমন সঞ্জয় বংশার এবং নিখিল চোপড়া বার্ষিক ৮০,০০০ ডলার পান।

মজার বিষয় হলো, হিন্দি ধারাভাষ্যকারদের প্রতি ম্যাচে ৮-১০ লাখ টাকা আয় থাকে, যা বার্ষিক হিসাবে ৮-১০ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে যদি তাঁরা নিয়মিত কমেন্টরি করেন। এই পরিসংখ্যান দেখায় যে আইপিএল কমেন্টেটরদের জন্য আর্থিক দিক থেকে কতটা লাভজনক একটি পেশা হয়ে উঠেছে।

অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা এবং কোন ভাষায় কমেন্টারি করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে বেতন ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি, হিন্দি এবং তামিল ভাষায় অভিজ্ঞ কমেন্টেটররা প্রতিদিন ৬-১০ লাখ টাকা আয় করেন। অপরদিকে, নবীন কমেন্টেটররা প্রতিদিন মাত্র ৩৫,০০০ টাকা পান, যা তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং মিডিয়া জগতে প্রথম পদক্ষেপের জন্য খারাপ পারিশ্রমিক নয়।

আইপিএল-এর উচ্চ জনপ্রিয়তা ও বিশ্বব্যাপী দর্শকসংখ্যা হওয়ার কারণে কমেন্টেটরদের বেতন অন্যান্য স্পোর্টস লীগের তুলনায় অনেক বেশি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ এবং মেজর লীগ বেসবলের কমেন্টেটরদের তুলনায় আইপিএল কমেন্টেটররা প্রায় দ্বিগুণ পারিশ্রমিক পান।

টপ ইন্ডিয়ান আইপিএল কমেন্টেটরদের বার্ষিক আয়ের দিকে তাকালে, সুনীল গাভাস্কার এবং সঞ্জয় মঞ্জরেকর বার্ষিক প্রায় ৬ কোটি টাকা আয় করেন। অনিল কুম্বলে এবং হর্ষ ভোগলে প্রায় ৫.৫ কোটি টাকা, আকাশ চোপড়া ৪ কোটি টাকা এবং রবি শাস্ত্রী ৪ কোটি টাকা আয় করেন। অ-ক্রিকেটার জাতিন সাপ্রু বার্ষিক ১.৭৫ কোটি টাকা উপার্জন করেন।

এছাড়াও আইপিএল আয়োজক স্টার ইন্ডিয়া বিভিন্ন ভাষায় ম্যাচ প্রচারের জন্য ৩০ জনেরও বেশি কমেন্টেটর নিয়োগ করে। এসব ম্যাচ হিন্দি, ইংরেজি এবং আঞ্চলিক ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচার করা হয়, যা কমেন্টেটরদের জন্য আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে।

আইপিএল কমেন্টেটর ছাড়াও অ্যাঙ্করদের আয়ও উল্লেখযোগ্য। একজন আইপিএল অ্যাঙ্করের গড় বার্ষিক বেতন প্রায় ৫০,০০০ ডলার, যা অন্যান্য স্পোর্টস লীগের অ্যাঙ্করদের তুলনায় বেশি। সারা বিশ্বে আইপিএল-এর বিপুল জনপ্রিয়তা এবং দর্শকদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কমেন্টেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এই উচ্চ পারিশ্রমিক খুবই যৌক্তিক।

প্ল্যাটিনাম ক্যাটেগরির কমেন্টেটররা, যেমন সুনীল গাভাস্কার, হর্ষ ভোগলে এবং ইয়ান বিশপ, সর্বোচ্চ বেতন পান। গোল্ড ক্যাটেগরিতে আছেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর, লিসা স্থালেকার এবং মাইকেল স্লেটারের মতো কমেন্টেটররা। সিলভার ক্যাটেগরিতে রয়েছেন আকাশ চোপড়া, মায়ান্তি লাঙ্গার এবং দীপ দাসগুপ্তার মতো কমেন্টেটররা।

উচ্চ বেতন ছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়াতে বড় ফলোইং থাকা কমেন্টেটররা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে অংশীদারিত্ব করে আরও আয় করতে পারেন। এইভাবে তারা নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে এবং আর্থিক দিক থেকে আরও উন্নতি করতে সক্ষম হন।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।