ভারতের সামরিক শক্তি বাংলাদেশের ১০ গুণ বেশি: তুলনামূলক বিশ্লেষণ

India military capabilities 2024: ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক শক্তির মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৪র্থ, অন্যদিকে বাংলাদেশের স্থান ৩৭তম। এই…

Chanchal Sen

 

India military capabilities 2024: ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক শক্তির মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৪র্থ, অন্যদিকে বাংলাদেশের স্থান ৩৭তম। এই পার্থক্য শুধু সংখ্যাগত নয়, বরং সামরিক সরঞ্জাম, প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদের ক্ষেত্রেও প্রকট। ভারতের কাছে ৬০৬টি যুদ্ধবিমান রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৪৪টি। এই তুলনামূলক বিশ্লেষণে আমরা দুই দেশের সামরিক শক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।

সামরিক বাজেট ও মানবসম্পদ

ভারত ও বাংলাদেশের সামরিক শক্তির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য দেখা যায় তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি। এই বিশাল পার্থক্য দুই দেশের সামরিক সক্ষমতার মধ্যে একটি বড় ব্যবধান তৈরি করেছে।মানবসম্পদের দিক থেকেও ভারতের অবস্থান অনেক শক্তিশালী:

  • ভারতের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা: ১৪,৫৫,৫৫০ জন
  • বাংলাদেশের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা: ১,৬৩,০০০ জন

এছাড়া ভারতের ১১,৫৫,০০০ জন রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের কোনো রিজার্ভ বাহিনী নেই। তবে বাংলাদেশের ৬৮ লাখ প্যারামিলিটারি বাহিনী রয়েছে, যা ভারতের ২৫,২৭,০০০ এর তুলনায় বেশি।

Indian Historical Event: ২ রা জুলাই ভারতের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন

বিমান বাহিনী

ভারতের বিমান বাহিনী বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও সুসজ্জিত:

  • ভারতের মোট যুদ্ধবিমান: ২,২৯৬টি
  • বাংলাদেশের মোট যুদ্ধবিমান: ২১৬টি

ভারতের কাছে ৬০৬টি ফাইটার জেট রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৪৪টি। এছাড়া ভারতের ১৩০টি অ্যাটাক এয়ারক্রাফট রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের একটিও নেই। পরিবহন বিমান, প্রশিক্ষণ বিমান এবং হেলিকপ্টারের সংখ্যাতেও ভারত অনেক এগিয়ে।

স্থল বাহিনী

স্থল বাহিনীর ক্ষেত্রেও ভারতের শক্তি অনেক বেশি:

  • ভারতের ট্যাংক: ৪,৬১৪টি
  • বাংলাদেশের ট্যাংক: ৩২০টি

ভারতের কাছে ১,৫১,২৪৮টি বর্মবাহী যানবাহন রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের সংখ্যা মাত্র ১৩,১০০টি। কামান ও রকেট লঞ্চারের সংখ্যাতেও ভারত অনেক এগিয়ে।

নৌবাহিনী

নৌবাহিনীর ক্ষেত্রেও ভারতের শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি:

  • ভারতের যুদ্ধজাহাজ: ২৯৫টি
  • বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ: ১১৭টি

ভারতের কাছে ২টি বিমানবাহী জাহাজ, ১২টি ডেস্ট্রয়ার এবং ১২টি ফ্রিগেট রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছে কোনো বিমানবাহী জাহাজ বা ডেস্ট্রয়ার নেই, শুধুমাত্র ৭টি ফ্রিগেট রয়েছে।

পারমাণবিক সক্ষমতা

ভারত একটি পারমাণবিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে বাংলাদেশের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। ভারতের কাছে স্থল, জল ও আকাশপথে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা রয়েছে, যা তাকে একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ

ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে অনেক সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করছে, যেমন তেজস যুদ্ধবিমান, অর্জুন ট্যাংক, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি। বাংলাদেশ এখনো এই ধরনের জটিল সামরিক সরঞ্জাম নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করতে পারছে না।

Paris Olympic 2024: প্যারিসের অলিম্পিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে ভারতীয় K9 বাহিনী

সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে, ভারতের সামরিক শক্তি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। তবে এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা একে অপরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। বাংলাদেশ তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করলেও, তার মূল লক্ষ্য হলো নিজের সীমান্ত ও স্বার্থ রক্ষা করা, কোনো আগ্রাসী উদ্দেশ্য নয়।ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। তবে ভারতের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বেশি হওয়ায় তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী দশকে এই পার্থক্য আরও বাড়তে পারে। তবে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতা বজায় থাকলে এই সামরিক শক্তির পার্থক্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না বলে আশা করা যায়।

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।