২১ আগস্ট বিকেলে বাংলাদেশ জেনেছিল যে অতিবৃষ্টির কারণে ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধের জলস্তর বাড়ছে। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের কিছু মহল থেকে অভিযোগ করা হয় যে ভারত আগে থেকে কোনো সতর্কতা না দিয়েই বাঁধ খুলে দিয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক একটি বিবৃতি দিয়ে এই অপপ্রচারের জবাব দিয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, ডম্বুর বাঁধটি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। এটি একটি স্বল্প উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে একটি গ্রিডে পাঠায়। এই গ্রিড থেকে বাংলাদেশও ত্রিপুরা থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তি গ্রহণ করে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন অতিরিক্ত গরম হচ্ছে? জেনে নিন ঠাণ্ডা রাখার উপায়
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে যে, সমগ্র ত্রিপুরা এবং এর পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ২১ আগস্ট থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত ছিল। ২১ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশে সরবরাহকৃত তথ্যে জলস্তরের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছিল। তারপর বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটার ফলে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এর বিপরীতে অভিযোগ করেছেন যে, “সতর্কতা না দিয়ে বাঁধ খুলে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ভারতের উঁচু এলাকার জল বাংলাদেশে ধেয়ে এসে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কোনও ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে তারা।”
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
তবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই অভিযোগগুলিকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, আগাম কিছু না জানিয়ে ডম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে বন্যা তৈরি করানো হয়েছে এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদীতে বন্যা একটি যৌথ সমস্যা বলে উল্লেখ করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। তাদের মতে, এটি উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
BBC-র একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার জন্যই বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে বলে যে দাবি করা হচ্ছিল, তা সঠিক নয়। ভারত সরকার আগেই এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।
এই ঘটনার সম্ভাব্য প্রভাব হিসেবে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে। তবে উভয় দেশের সরকারই এই বিষয়ে সতর্কতার সাথে এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত করার জন্য ভারতকে আরও তথ্য প্রদান করতে হতে পারে।
এই ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন দুটি দেশের মধ্যে অভিন্ন নদী রয়েছে, তখন তথ্য আদান-প্রদান ও যৌথ পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।
সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়তি বৃষ্টিপাত ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উপমহাদেশের দেশগুলিকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে।
পরিশেষে বলা যায়, এই ধরনের বিতর্কিত পরিস্থিতিতে সঠিক তথ্য প্রচার ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই ধরনের বিতর্ক এড়ানো যেতে পারে। একই সাথে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি, যাতে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমানো যায়।