খালিদ জামিল যুগের শুরুতেই ভারতের ঐতিহাসিক জয়। সিএএফএ নেশনস কাপে তাজিকিস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করেছে ভারতীয় ফুটবল দল। গত ১৭ বছরের মধ্যে প্রথমবার তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতেছে ভারত। নতুন কোচ খালিদ জামিলের পরিচালনায় এই জয় এনে দিয়েছে অনন্য গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু। পেনাল্টি বাঁচিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রকৃত নায়ক।
হিসোর সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ভারত প্রথমার্ধেই ২-০ এ এগিয়ে যায়। পঞ্চম মিনিটে আনোয়ার আলী এবং ১৩তম মিনিটে সান্দেশ ঝিঙ্গান গোল করে দল এগিয়ে নিয়ে যান। তবে ২৩তম মিনিটে শাহরোম সামিয়েভের গোলে তাজিকিস্তান একটি গোল ফিরিয়ে আনে।
ভারতের দুটি গোলই এসেছিল থ্রো-ইন থেকে। প্রথম গোলে মুহাম্মদ উভাইসের লং থ্রো-ইনের পর গোলমুখে ভিড়ের মধ্যে আনোয়ার আলী হেডারে বল জালে পাঠান। দ্বিতীয় গোলটিও একই কৌশলের ফসল। উভাইসের ক্রস থেকে রাহুল ভেকের হেডার গোলকিপার বাঁচালেও সেকেন্ড বলে সান্দেশ ঝিঙ্গান সফল হন।
দ্বিতীয়ার্ধে তাজিকিস্তান ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। ৭৩তম মিনিটে বিক্রম প্রতাপ সিংয়ের ফাউলে পেনাল্টি পায় স্বাগতিক দল। রুস্তাম সইরোভ পেনাল্টি নিলেও গুরপ্রীত সিং সান্ধুর অসাধারণ সেভে ব্যর্থ হন। ডান দিকে ছুটে পেনাল্টি থামিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন এই গোলরক্ষক।
গুরপ্রীত দ্বিতীয়ার্ধে মোট পাঁচটি কঠিন সেভ করেছেন। তার মধ্যে পেনাল্টি সেভটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাপ্টেন হিসেবে ফিরে এসে তিনি দল জেতাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। আগের কোচ মানোলো মারকেজের আমলে বাদ পড়লেও খালিদ জামিল তাকে দলে ফিরিয়ে এনেছেন।
খালিদ জামিলের প্রথম ম্যাচেই এমন জয় তার কোচিং ক্যারিয়ারের জন্য স্বপ্নের মতো শুরু। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৩৩তম ভারত ১০৬তম তাজিকিস্তানকে হারিয়ে অপ্রত্যাশিত ফলাফল উপহার দিয়েছে। এই জয়ের মাধ্যমে ভারত গ্রুপ বি তে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
ম্যাচের পর সান্দেশ ঝিঙ্গান বলেছেন, “ভারতীয় ভক্তরা দীর্ঘদিন ধরে এরকম ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা মাঝে মাঝে গভীর ডিফেন্স খেলেছি, কিন্তু এখনও আমরা মরিচা ঝাড়ছি। এই জয়ের উপর ভিত্তি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইরানের বিরুদ্ধে আরও চরিত্র দেখাতে হবে”।
খালিদ জামিল তার কোচিং ক্যারিয়ারে এর আগেও ছোট দলগুলোকে নিয়ে বড় সাফল্য পেয়েছেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে আইজোল এফসিকে নিয়ে আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, যা ছিল উত্তর-পূর্বের প্রথম জাতীয় শিরোপা। মুম্বাই এফসি থেকে শুরু করে জামশেদপুর এফসি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবে তার সাফল্যের ইতিহাস রয়েছে।
ভারতীয় ফুটবলের জন্য এই জয় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। গত মার্চ মাসের পর প্রথম জয় পেয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিন ম্যাচের গোলশূন্যতা শেষ করে ভারত নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলেছে।
সিএএফএ নেশনস কাপে ভারত গ্রুপ বি তে রয়েছে। এই গ্রুপে আরও রয়েছে ইরান, আফগানিস্তান এবং তাজিকিস্তান। পরবর্তী ম্যাচ ১ সেপ্টেম্বর ইরানের বিরুদ্ধে এবং ৪ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের সাথে। ইরান এই টুর্নামেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন এবং ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৮তম অবস্থানে রয়েছে।
ভারতের এই সাফল্য এসেছে অনেক বাধা পেরিয়ে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট তাদের খেলোয়াড়দের টুর্নামেন্টে পাঠাতে অস্বীকার করায় ভারত পূর্ণাঙ্গ দল নিয়ে খেলতে পারেনি। ফিফা উইন্ডোর বাইরে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ায় ক্লাবগুলো খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য নয়।
খালিদ জামিলের কৌশলগত পরিকল্পনা এই জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। শুরুতেই গোল করে রক্ষণাত্মক খেলার কৌশল অবলম্বন করেছে ভারত। সেট পিস থেকে গোল করার জন্য তিনি দলকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। রাহুল ভেকে এবং মুহাম্মদ উভাইসের মতো খেলোয়াড়দের লং থ্রো-ইনের দক্ষতা কাজে লাগিয়েছেন।
তাজিকিস্তান দ্বিতীয়ার্ধে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করলেও ভারতের রক্ষণভাগ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছে। আনোয়ার আলী এবং সান্দেশ ঝিঙ্গানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় রক্ষণ শক্তিশালী ছিল। পাশের রক্ষকদের মধ্যে রাহুল ভেকে এবং উভাইস ময়িক্কাল দুর্দান্ত খেলেছেন।
ভারতের আক্রমণভাগে এখনও সমস্যা রয়েছে। বিক্রম প্রতাপ সিং এবং ইরফান ইয়াদওয়াদ তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। কেন্দ্রীয় মিডফিল্ডেও সুরেশ সিং ওয়াংজাম এবং লাল্লিয়ানজুয়ালা ছাংতে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দিতে পারেননি। তবে রক্ষণের শক্তি এবং গুরপ্রীতের অসাধারণ পারফরম্যান্স এই ঘাটতি পূরণ করেছে।
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে গ্রুপে সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা ভারতের জন্য অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচগুলোতে জয় পেতে হলে এশিয়ান কাপে যাওয়ার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।
গুরপ্রীত সিং সান্ধুর পেনাল্টি সেভ এই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। দীর্ঘ পা বাড়িয়ে ডান দিকে ছুটে পেনাল্টি থামানো তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সেভ হিসেবে বিবেচিত হবে। ভারতীয় ফুটবলে গোলরক্ষকদের মধ্যে তার অবস্থান আরও শক্ত হলো।
খালিদ জামিলের কোচিং পদ্ধতি ভারতীয় ফুটবলের সাথে বেশি মানানসই বলে মনে হচ্ছে। দেশীয় কোচ হিসেবে তিনি খেলোয়াড়দের মানসিকতা এবং সীমাবদ্ধতা ভালো বুঝতে পারেন। প্রতিরক্ষামূলক কৌশল এবং সেট পিসের উপর জোর দিয়ে তিনি ভারতের শক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন।
এই টুর্নামেন্টে ভারতের লক্ষ্য হবে গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা। ইরান প্রথম স্থান পাবে বলে আশা করা যায়, তাই তাজিকিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হবে। তাজিকিস্তানের বিরুুদ্ধে জয় পেয়ে ভারত এই লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।
ভারতীয় ফুটবল ভক্তদের জন্য এই জয় একটি বড় স্বস্তির খবর। দীর্ঘদিনের হতাশার পর নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তারা। খালিদ জামিলের নেতৃত্বে ভারতীয় ফুটবল নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে কিনা তা আগামী ম্যাচগুলোতেই প্রমাণিত হবে।
Title (English): India Beats Tajikistan 2-1 in CAFA Nations Cup Under New Coach Khalid Jamil
URL (English): india-beats-tajikistan-cafa-nations-cup-khalid-jamil-gurpreet-penalty-save
Focus Keyword (English): India CAFA Nations Cup Khalid Jamil