India docking technology space news: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) একটি ঐতিহাসিক মিশনের মাধ্যমে মহাকাশে দুটি স্যাটেলাইট ডকিং করার প্রযুক্তি পরীক্ষা করতে চলেছে। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে Space Docking Experiment বা সংক্ষেপে SpaDeX। আগামী ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে এই পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাকাশে দুটি যানকে সংযুক্ত করার ক্ষমতা অর্জন করতে চলেছে।
SpaDeX মিশনের মূল উদ্দেশ্য
SpaDeX মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো মহাকাশে দুটি স্যাটেলাইটকে একত্রিত করার প্রযুক্তি পরীক্ষা করা। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ভারতের মহাকাশ স্টেশন স্থাপন, চন্দ্রযান-৪ মিশন এবং মানবসহ মহাকাশযান পাঠানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মিশনের প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. দুটি ছোট স্যাটেলাইট: মিশনে দুটি ২২০ কেজি ওজনের স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হচ্ছে – SDX01 (চেজার) এবং SDX02 (টার্গেট)।
৪. উন্নত নেভিগেশন প্রযুক্তি: নির্ভুল অবস্থান নির্ধারণের জন্য GNSS-ভিত্তিক স্যাটেলাইট পজিশনিং সিস্টেম (SPS) ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিশনের পটভূমি
ভারতের মহাকাশ গবেষণায় SpaDeX মিশন একটি মাইলফলক। এই প্রযুক্তি অর্জনের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের অগ্রণী মহাকাশ গবেষণাকারী দেশগুলোর সঙ্গে একই সারিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছে।
ঐতিহাসিক তাৎপর্য
- ১৯৮৯ সালে প্রথম ধারণা: SpaDeX মিশনের ধারণা প্রথম আসে ১৯৮৯ সালে।
- ২০১৬ সালে প্রকল্প অনুমোদন: দীর্ঘ প্রস্তুতির পর ২০১৬ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
- ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪: PSLV-C60 রকেটের মাধ্যমে দুটি স্যাটেলাইট সফলভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়।
মিশনের পর্যায়ক্রম
SpaDeX মিশন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হবে:
৫. শক্তি স্থানান্তর: সফল ডকিংয়ের পর, একটি স্যাটেলাইট থেকে অন্যটিতে বিদ্যুৎ স্থানান্তর করা হবে।
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ
SpaDeX মিশন বেশ কয়েকটি জটিল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে:
নির্ভুল অবস্থান নির্ধারণ
- GNSS-ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করে স্যাটেলাইটের আপেক্ষিক অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে।
- লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার (LRF) এবং কর্নার কিউব রেট্রো রিফ্লেক্টর ব্যবহার করা হবে।
নিম্ন প্রভাব ডকিং
- স্বদেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কম প্রভাবযুক্ত ডকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে।
- ডকিংয়ের সময় আনুমানিক গতি হবে ১০ মিলিমিটার প্রতি সেকেন্ডে।
তিনটি গাইডেন্স অ্যালগরিদম
- ডকিং প্রক্রিয়ায় তিনটি ভিন্ন গাইডেন্স অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হবে।
- এই অ্যালগরিদমগুলি ISRO-এর ল্যাবরেটরি ফর ইলেক্ট্রো অপটিক্স সিস্টেমস (LEOS) দ্বারা বিকশিত।
মিশনের গুরুত্ব
SpaDeX মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর সাফল্য ভারতকে বিশ্বের অগ্রণী মহাকাশ গবেষণাকারী দেশগুলোর সঙ্গে সমকক্ষ করে তুলবে।
ভবিষ্যৎ মিশনের ভিত্তি
মিশন | সম্ভাব্য সময় | গুরুত্ব |
---|---|---|
চন্দ্রযান-৪ | ২০২৭-২০২৮ | চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে নমুনা সংগ্রহ
6
|
ভারতীয় মহাকাশ স্টেশন | ২০৩৫ | স্বাধীন মহাকাশ স্টেশন স্থাপন
7
|
গগনযান | ২০২৬ | প্রথম মানবসহ মহাকাশযান
6
|
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা
SpaDeX মিশনের সাফল্য ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পাশাপাশি চতুর্থ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে যারা স্বাধীনভাবে মহাকাশে ডকিং প্রযুক্তি অর্জন করেছে।SpaDeX মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। এই মিশনের সাফল্য শুধু ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে যখন দুটি স্যাটেলাইট মহাশূন্যে একত্রিত হবে, তখন তা শুধু একটি প্রযুক্তিগত সাফল্যই নয়, বরং ভারতের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণেরও একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের জীবন: অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ