India Brahmastra missile: ভারতের অপারেশন সিঁদুরে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর বিশ্বব্যাপী বেড়েছে এই সুপারসনিক মিসাইলের চাহিদা। চীনের চিরশত্রু ফিলিপাইনসহ ১৭টি দেশ ভারতের কাছ থেকে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিশ্চিত করেছেন যে অপারেশন সিঁদুরে ব্রহ্মোসের চমৎকার পারফরম্যান্সের পর ১৪-১৫টি দেশ এই ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চালানো অপারেশন সিঁদুরে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। এই প্রথমবার ভারত কোনো দেশের উপর ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং এর পরীক্ষা সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। স্বয়ং প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই অস্ত্রের প্রশংসায় বলেছেন, “পাকিস্তানকে দিনেই তারা দেখিয়ে দিয়েছে ব্রহ্মোস”।
চীনের প্রধান শত্রু ফিলিপাইন ইতিমধ্যে ভারতের সাথে ৪০০০ কোটি টাকার ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি সম্পন্ন করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে মোকাবিলা করার জন্য ফিলিপাইন তিনটি ব্যাটারি ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। গত বছর এপ্রিল মাসে ফিলিপাইনের সামরিক বাহিনীর হাতে ব্রহ্মোসের প্রথম ব্যাচ পৌঁছে গেছে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াও ভারত থেকে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়ে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বিবেচনা করছে। প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ভারত সফরে আসা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তোর সাথে এই চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। ইন্দোনেশিয়া হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তৃতীয় দেশ যারা ভারতের সাথে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের চুক্তি করবে।
ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ হয়েছে ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ এবং রাশিয়ার মস্কভা নদীর নাম অনুসারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি স্থল, জল এবং আকাশ-তিন জায়গা থেকেই উৎক্ষেপণ করা যায়। ব্রহ্মোসের পাল্লা ৩০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এবং ওজন প্রায় ২৯০০ কেজি।
বিশেষত্বের দিক থেকে দেখলে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুকে আঘাত করতে পারে। স্টিল্থ প্রযুক্তিতে তৈরি এই মিসাইলের রেঞ্জ ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এটি এমনভাবে তৈরি যাতে শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে গিয়েও এটি পথ হারায় না। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে চীনের এয়ার ডিফেন্সও ব্রহ্মোসকে ট্র্যাক করতে পারেনি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ব্রহ্মোসের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নীতি একটি বড় কারণ। ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোও এই ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিও এতে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে কারণ তারা এটিকে সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান দিয়ে সজ্জিত করতে চায়।
গত মে মাসে রাজনাথ সিং লখনউতে ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার উদ্বোধন করেছেন। তিনি জানান যে এখন ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র লখনউ থেকেও রপ্তানি করা হবে। তার মতে, এই সুবিধাটি প্রতিরক্ষা সেক্টরে ভারতের আত্মনির্ভরতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং কর্মসংস্থানও তৈরি করবে।
অবশ্য ব্রহ্মোস বিক্রির ক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। যেহেতু এটি ভারত ও রাশিয়ার যৌথ প্রকল্প, তাই রাশিয়ার অনুমতি ছাড়া ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্র অন্য কোনো দেশের কাছে বিক্রি করতে পারে না। তবে ভারত ক্রমশ নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মিসাইল তৈরি করতে শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি অনুযায়ী, ব্রহ্মোস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করতে পারলে ভারতীয় অর্থনীতিতে রাতারাতি বড় পরিবর্তন আসবে। ভারত ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির লক্ষ্য রেখেছে এবং এই লক্ষ্য অর্জনে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভারতের নতুন বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সমর-২ এর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ডিসেম্বরে
সামগ্রিকভাবে দেখলে, অপারেশন সিঁদুরে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজারে ভারতের অবস্থানও শক্তিশালী করেছে। বিশেষ করে চীনের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই সুবিধা এনে দিয়েছে।
অপারেশন সিঁদুরের পর ব্রহ্মোস কিনতে ইচ্ছুক ১৭ দেশের বিস্তারিত তালিকা
অপারেশন সিঁদুরে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর বিশ্বের ১৭টি দেশ ভারতের কাছ থেকে এই সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই দেশগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত এবং প্রতিটির নিজস্ব কৌশলগত কারণ রয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ
১. ভিয়েতনাম 🇻🇳
চুক্তির অবস্থা: চূড়ান্ত পর্যায়ে
চুক্তির মূল্য: ৭০০ মিলিয়ন ডলার
বিশেষ তথ্য: দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা জোরদার করতে ভিয়েতনাম সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উভয়েই ব্রহ্মোস কিনবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রিপোর্ট অনুযায়ী কয়েক মাসের মধ্যেই চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে।
২. ইন্দোনেশিয়া 🇮🇩
চুক্তির অবস্থা: আলোচনার পর্যায়ে
চুক্তির মূল্য: ৪৫০ মিলিয়ন ডলার
বিশেষ তথ্য: ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তোর ভারত সফরের সময় চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী প্রধান ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস সদর দপ্তর পরিদর্শন করেছেন।
৩. মালয়েশিয়া 🇲🇾
আগ্রহের ক্ষেত্র: বিমান ও নৌবাহিনীর জন্য
বিশেষ তথ্য: মালয়েশিয়া তাদের সুখোই Su-30MKM যুদ্ধবিমান এবং কেদাহ-শ্রেণির যুদ্ধজাহাজে ব্রহ্মোস সংযুক্ত করতে চায়।
৪. থাইল্যান্ড 🇹🇭
চুক্তির অবস্থা: বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা
বিশেষ তথ্য: উপকূলীয় ও নৌ প্রতিরক্ষার জন্য ব্রহ্মোস কিনতে আগ্রহী।
৫. সিঙ্গাপুর 🇸🇬
চুক্তির অবস্থা: প্রাথমিক আলোচনা
বিশেষ তথ্য: আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ব্রহ্মোস অধিগ্রহণে আগ্রহী।
৬. ব্রুনেই 🇧🇳
চুক্তির অবস্থা: আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়
বিশেষ তথ্য: উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে চায়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ
৭. মিশর 🇪🇬
আগ্রহের ক্ষেত্র: উপকূলীয় ও নৌ প্রতিরক্ষা
বিশেষ তথ্য: সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানে ব্রহ্মোস সংযুক্ত করতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে।
৮. সৌদি আরব 🇸🇦
চুক্তির অবস্থা: অগ্রসর পর্যায়ে আলোচনা
বিশেষ তথ্য: আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্রহ্মোস কিনতে চায়।
৯. সংযুক্ত আরব আমিরাত 🇦🇪
চুক্তির অবস্থা: সক্রিয় আলোচনা
বিশেষ তথ্য: রাশিয়া-ভারত যৌথ উদ্যোগের প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন যে UAE-র সাথে আলোচনা চলমান।
১০. কাতার 🇶🇦
আগ্রহের ক্ষেত্র: নৌ ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষা
বিশেষ তথ্য: মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে ব্রহ্মোসে আগ্রহী।
১১. ওমান 🇴🇲
চুক্তির অবস্থা: আগ্রহ প্রকাশ করেছে
বিশেষ তথ্য: ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেসের CEO নিশ্চিত করেছেন যে ওমান আগ্রহ দেখিয়েছে।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহ
১২. ব্রাজিল 🇧🇷
চুক্তির অবস্থা: আলোচনার পর্যায়ে
বিশেষ তথ্য: ব্রাজিলীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল তোমাস রিবেইরো পাইভা ২০২৩ সালের আগস্টে ভারতের পোখরান ক্ষেত্রে সামরিক মহড়া দেখতে এসেছিলেন। ২০২৪ সালে নতুন প্রতিনিধিদল সমুদ্রভিত্তিক সংস্করণ নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সফর করবে।
১৩. চিলি 🇨🇱
আগ্রহের ক্ষেত্র: নৌ ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষা
বিশেষ তথ্য: প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল রক্ষার জন্য ব্রহ্মোস কিনতে আগ্রহী।
১৪. আর্জেন্টিনা 🇦🇷
আগ্রহের ক্ষেত্র: সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা
বিশেষ তথ্য: দক্ষিণ আটলান্টিক অঞ্চলে নিরাপত্তার জন্য ব্রহ্মোস অধিগ্রহণে আগ্রহী।
১৫. ভেনেজুয়েলা 🇻🇪
আগ্রহের ক্ষেত্র: উপকূলীয় প্রতিরক্ষা
বিশেষ তথ্য: ক্যারিবীয় সাগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়।
ভারত-পোল্যান্ড সামাজিক সুরক্ষা চুক্তি: ঘুম উড়ছে শত্রু দেশগুলোর
ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশসমূহ
১৬. বুলগেরিয়া 🇧🇬
চুক্তির অবস্থা: প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা
বিশেষ তথ্য: ন্যাটো সদস্য হিসেবে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আগ্রহী।
১৭. দক্ষিণ আফ্রিকা 🇿🇦
চুক্তির অবস্থা: প্রাথমিক আলোচনা
বিশেষ তথ্য: আফ্রিকা মহাদেশে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে চায়।
ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ দেশ
ফিলিপাইন 🇵🇭 (প্রথম ক্রেতা)
চুক্তি সম্পন্ন: ২০২২ সালের জানুয়ারি
চুক্তির মূল্য: ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার
বিশেষ তথ্য: তিনটি ব্যাটারি ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রথম ব্যাচ এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় ব্যাচ পৌঁছেছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিশ্চিত করেছেন যে অপারেশন সিঁদুরের পর ১৪-১৫টি দেশ ব্রহ্মোস কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী মোট ১৭টি দেশ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা বা আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এই দেশগুলোর বেশিরভাগই চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে চায়, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। ভারত ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির লক্ষ্য রেখেছে এবং ব্রহ্মোস এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।