India current population 2024: ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমলেও, দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র হিসেবে চিনকে ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের নেতৃত্ব কীভাবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে, তা নিয়ে চলছে গভীর উদ্বেগ ও আলোচনা।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৪৪ বিলিয়নে। গত এক বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ০.৯% হারে, যা ১৩ মিলিয়ন মানুষের সমান। যদিও এই বৃদ্ধির হার আগের দশকের তুলনায় কম, তবুও এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
ভারতের জনসংখ্যার বর্তমান চিত্র:
বিবরণ | সংখ্যা/শতাংশ |
---|---|
মোট জনসংখ্যা | ১.৪৪ বিলিয়ন |
বার্ষিক বৃদ্ধির হার | ০.৯% |
০-১৪ বছর বয়সী | ২৫.৬৮% |
১৫-৬৪ বছর বয়সী | ৬৭.৪৯% |
৬৫+ বছর বয়সী | ৬.৮৩% |
গড় বয়স | ২৮.৪ বছর |
দেশের নেতৃত্ব এই বিশাল জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “আমাদের যুব জনসংখ্যা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমরা তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করছি যাতে তারা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
সরকার ২০২০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দক্ষতা-কেন্দ্রিক করে তুলতে চায়। এর মাধ্যমে যুব জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পরিবার পরিকল্পনা ক্ষেত্রেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা প্রচার করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের প্রজনন হার ২০১৩ সালের ২.৩ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২.০ তে নেমে এসেছে।
Shopify Dropshipping Winning Products: ৭ দিনে লক্ষাধিক টাকা আয়, ড্রপশিপিংয়ের গোপন ফর্মুলা ফাঁস!
মিশন পরিবার বিকাশ নামে একটি নতুন উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যা উচ্চ প্রজনন হার সম্পন্ন জেলাগুলিতে পরিবার পরিকল্পনা সেবার একটি ব্যাপক প্যাকেজ প্রদান করছে। এছাড়াও, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের মাধ্যমে কন্যা শিশুদের শিক্ষা ও বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে পরিবারের আকার সম্পর্কে মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করছে।
তবে এই বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া বলেছেন, “আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও সম্পদের উপর চাপ বাড়ছে। আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছি।”
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সম্পদের স্বল্পতাও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জল সংকট বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ। মাথাপিছু জলের প্রাপ্যতা ক্রমশ কমে আসছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় সরকার জল জীবন মিশন চালু করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৪ সালের মধ্যে সব গ্রামীণ পরিবারে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও কম নয়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হল এই বিশাল জনসংখ্যাকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিতে পরিণত করা।” এই লক্ষ্যে সরকার দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে।
পরিবেশগত প্রভাবও উপেক্ষা করার নয়। পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব মনে করেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বাড়ছে। আমরা টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।” ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তবে সব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ভারতের নেতৃত্ব আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “আমাদের জনসংখ্যা আমাদের শক্তি। আমরা এই মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ভারতকে একটি বিশ্ব শক্তিতে পরিণত করব।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের জনসংখ্যা ২০৬০ এর দশকের শুরুতে ১.৭ বিলিয়নে পৌঁছে শীর্ষে পৌঁছাবে, তারপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। তাই এখন থেকেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
শেষ পর্যন্ত, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি জটিল বিষয় যা চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ উভয়ই বয়ে আনছে। দেশের নেতৃত্ব এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করে ও তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়, তার উপরই নির্ভর করবে ভারতের ভবিষ্যৎ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দূরদর্শী নীতি ও সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।
ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ ও প্রভাব কী?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমূহ
- উচ্চ জন্মহার: যদিও জন্মহার কমছে, তবুও এখনও অনেক রাজ্যে জন্মহার উচ্চ রয়েছে।
- মৃত্যুহার হ্রাস: স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, টিকাদান কর্মসূচি ইত্যাদির কারণে মৃত্যুহার কমেছে।
- দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা: দরিদ্র ও নিরক্ষর পরিবারগুলিতে সন্তান সংখ্যা বেশি হয়।
- বাল্যবিবাহ: অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়, যা দীর্ঘ প্রজনন কাল বাড়ায়।
- পুত্র সন্তানের প্রতি অধিক আগ্রহ: অনেক পরিবার পুত্র সন্তান না হওয়া পর্যন্ত সন্তান জন্ম দেয়।
- পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব: অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব
- বেকারত্ব বৃদ্ধি: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা কঠিন হচ্ছে।
- দারিদ্র্য বৃদ্ধি: সম্পদের অসম বণ্টন ও অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার কারণে দারিদ্র্য বাড়ছে।
- পরিকাঠামোর উপর চাপ: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি খাতে চাহিদা বাড়ছে।
- প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার: জল, জমি, বন ইত্যাদির উপর চাপ বাড়ছে।
- পরিবেশ দূষণ: বায়ু, জল ও মাটি দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- খাদ্য নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করা কঠিন হচ্ছে।
- সামাজিক সমস্যা: অপরাধ, বস্তি এলাকা বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা বাড়ছে।
- অর্থনৈতিক চাপ: সরকারের উপর সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে।
সুতরাং, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর জোর দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।