India elected Global Anti-Corruption Steering Panel 2024: ভারত সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী প্ল্যাটফর্ম GlobE নেটওয়ার্কের ১৫ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছে। চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বহুপর্যায়ের ভোটাভুটির মাধ্যমে এই নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
এটি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।GlobE নেটওয়ার্ক হলো জাতিসংঘের অপরাধ ও মাদকদ্রব্য দপ্তর (UNODC) এর অধীনে একটি বৈশ্বিক অপারেশনাল নেটওয়ার্ক যা দুর্নীতি বিরোধী কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে দ্রুত, সময়োপযোগী এবং কার্যকর সহযোগিতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে ভারত এখন বৈশ্বিক দুর্নীতি বিরোধী এজেন্ডা প্রণয়ন এবং সম্পদ পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অবাক করা ট্রিক! মোবাইল দিয়েই চালান স্মার্ট টিভি, বাড়িতে বসেই উপভোগ করুন প্রিমিয়াম কনটেন্ট!
এই কমিটি GlobE নেটওয়ার্কের কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং এর কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভারতের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশটির প্রভাব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে ভারত দুর্নীতি ও সম্পদ পুনরুদ্ধারের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক এজেন্ডা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি বড় সুযোগ যা আমরা কাজে লাগাতে চাই।”GlobE নেটওয়ার্কের মহাসচিব জানান, “ভারতের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আমাদের নেটওয়ার্কের জন্য মূল্যবান সম্পদ হবে। আমরা তাদের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নির্বাচন ভারতের জন্য কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
১. এটি প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতকে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
২. ভারত এখন বৈশ্বিক দুর্নীতি বিরোধী নীতি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারবে।
৩. এটি ভারতকে অন্যান্য দেশের সাথে দুর্নীতি বিরোধী সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ দেবে।
৪. দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সহায়ক হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা করবে।
তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি ভারতের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২৩ সালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান ৯৩তম, যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।একজন দুর্নীতি বিরোধী বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই অবস্থান অর্জন করা ভালো, কিন্তু দেশের ভেতরে দুর্নীতি কমানোর জন্য আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”
GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের এই নির্বাচন দেশটির জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এখন দেখার বিষয়, ভারত কীভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের এবং বিশ্বের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করে। আগামী দিনগুলোতে ভারতের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।বিশ্ব ব্যাংকের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়া হয়। এছাড়া দুর্নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি প্রতি বছর প্রায় ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
সুতরাং দুর্নীতি শুধু নৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি বড় অর্থনৈতিক সমস্যাও বটে।ভারতের ক্ষেত্রে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় ৩,০০০ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্নীতি দমনে সরকার বিভিন্ন আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনও অনেক কিছু করার আছে।
GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি দেশটির জন্য কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছে:
১. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
ভারত এখন বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে পারবে।
২. জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়:
অন্যান্য দেশের সফল পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবে এবং নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবে।
৩. নীতি প্রণয়নে প্রভাব:
বৈশ্বিক দুর্নীতি বিরোধী নীতিমালা প্রণয়নে ভারতের মতামত গুরুত্ব পাবে।
৪. সম্পদ পুনরুদ্ধার:
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদ ফেরত আনতে সহজ হবে।
৫. প্রযুক্তিগত সহায়তা:
দুর্নীতি শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
তবে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে ভারতকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে:
১. আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ:
দুর্নীতি বিরোধী আইন ও নীতিমালা আরও কঠোর ও যুগোপযোগী করতে হবে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি:
দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
৩. ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার:
দুর্নীতি শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
৪. নাগরিক সচেতনতা:
দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
অন্যান্য দেশের সাথে তথ্য বিনিময় ও যৌথ তদন্ত বাড়াতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি দেশটির জন্য একটি বড় সুযোগ। এখন দেখার বিষয়, ভারত কতটা দক্ষতার সাথে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। সফল হলে এটি শুধু ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
তৃণমূলে দুর্নীতি: তবুও সাধারণ মানুষের আস্থা কেন অবিচল?
তবে এর জন্য এর জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি, সুশাসন এবং সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।ভারতের এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশটির প্রতি আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা ও অভিজ্ঞতাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিচ্ছে। তবে এই স্বীকৃতির সাথে সাথে দায়িত্বও বেড়েছে। এখন ভারতকে নিজের দেশে দুর্নীতি কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে।একজন অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেন, “দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কোনো একক দেশ একা এর মোকাবেলা করতে পারে না। GlobE নেটওয়ার্কের মতো প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে। ভারতের মতো বড় অর্থনীতির দেশের অংশগ্রহণ এই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।”
ভারতের এই নির্বাচন দেশটির কূটনৈতিক সাফল্যেরও নিদর্শন। চীনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ভারতের জয়লাভ প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশটির গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বাড়ছে। এটি ভারতের সফ্ট পাওয়ার বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।তবে এই সাফল্যের পাশাপাশি ভারতের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:
১. অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি:
দেশের ভেতরে দুর্নীতি এখনও একটি বড় সমস্যা।
এটি মোকাবেলা না করতে পারলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
২. আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার:
দুর্নীতি দমনে আরও কার্যকর আইন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।
৩. রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি:
দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা সফল করতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা জরুরি।
৪. জনসচেতনতা:
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
৫. প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ:
ক্রিপ্টোকারেন্সি, ডার্ক ওয়েব ইত্যাদির মাধ্যমে নতুন ধরনের দুর্নীতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি দেশটির জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারত যদি নিজের দেশে দুর্নীতি কমাতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে পারে, তাহলে তা শুধু দেশটির ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল করবে না, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য কল্যাণকর হবে।
একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, “GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি দেশটির জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। এখন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতকে নিজের দেশে দুর্নীতি কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে। এটি ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি করবে এবং দেশটিকে একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।”ভারতের এই নির্বাচন শুধু দেশটির জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। ভারতের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও উপকৃত করতে পারে। এছাড়া ভারত এখন এই অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে দক্ষিণ এশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে।সামগ্রিকভাবে, GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের নির্বাচন দেশটির জন্য একটি বড় সুযোগ। এখন দেখার বিষয়, ভারত কীভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের এবং বিশ্বের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করে। আগামী দিনগুলোতে ভারতের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
দুর্নীতি একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। এর মোকাবেলায় শুধু সরকারি প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সমাজের সকল স্তরের সম্মিলিত প্রয়াস। GlobE নেটওয়ার্কের স্টিয়ারিং কমিটিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তি এই লড়াইয়ে একটি নতুন মাইলফলক। এখন দেখার বিষয়, ভারত কতটা দক্ষতার সাথে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টায় কতটা অবদান রাখতে পারে।