India health officials new Chinese virus concerns: চীনে নতুন ধরনের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে দেশে এখনও পর্যন্ত কোনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নেই। হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) নামে পরিচিত এই ভাইরাসটি নিয়ে চীনে যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তা নিয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
HMPV সম্পর্কে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা মহাপরিচালক (DGHS) ডাঃ অতুল গোয়েল জানিয়েছেন, “চীনে HMPV প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর ছড়াচ্ছে। তবে আমরা দেশের (ভারতের) শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করেছি এবং ডিসেম্বর ২০২৪-এর তথ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়নি। আমাদের কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে বড় সংখ্যায় কেস রিপোর্ট করা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই”।তিনি আরও যোগ করেন, “শীতকালে সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়, যার জন্য আমাদের হাসপাতালগুলি সাধারণত প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও শয্যা নিয়ে প্রস্তুত থাকে”।
HMPV সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
HMPV সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি নিম্নরূপ:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
ভাইরাসের নাম | হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (HMPV) |
লক্ষণ | সাধারণ ঠান্ডা ও ফ্লু-এর মতো লক্ষণ |
প্রভাবিত গোষ্ঠী | প্রধানত শিশু ও বয়স্করা |
ছড়ানোর মাধ্যম | ড্রপলেট, প্রত্যক্ষ যোগাযোগ, সম্ভবত বায়ুবাহিত কণা |
মৌসুম | শীতের শেষ ও বসন্তের শুরুতে সবচেয়ে সংক্রামক |
চিকিৎসা | কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, লক্ষণ নিরাময়ের ব্যবস্থা করা হয় |
ভারতের পরিস্থিতি
ভারতের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (NCDC) শ্বাসতন্ত্রের ও মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ভারতে এই ভাইরাস নতুন নয়। অমৃতা হাসপাতাল, ফরিদাবাদের পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের বরিষ্ঠ পরামর্শদাতা ডাঃ সৌরভ পাহুজা জানিয়েছেন, “HMPV বহু বছর ধরে দেশে রয়েছে এবং নিয়মিতভাবে শিশুদের প্রভাবিত করে আসছে। এটি সাধারণত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের আক্রমণ করে”।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে:
- কাশি বা সর্দি থাকলে ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলুন।
- হাঁচি-কাশির সময় আলাদা রুমাল বা তোয়ালে ব্যবহার করুন।
- ঠান্ডা বা জ্বরের জন্য সাধারণ ওষুধ নিন।
- হাত পরিষ্কার রাখুন ও মাস্ক পরুন।
চীনের পরিস্থিতি
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, “উত্তর গোলার্ধে শীতকালে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছায়। এই বছরের রোগগুলি গত বছরের তুলনায় কম তীব্র এবং কম বিস্তৃত”। তিনি আরও বলেন, “চীনে বিদেশিদের ভ্রমণ নিরাপদ”।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ডাঃ তুষার তায়াল, সিকে বিড়লা হাসপাতাল, গুরুগ্রামের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিভাগের পরামর্শদাতা জানিয়েছেন, “HMPV সবচেয়ে বেশি সংক্রামক হয় শীতের শেষে ও বসন্তের শুরুতে, যদিও সারা বছরই সংক্রমণ হতে পারে”।চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে HMPV-এর জন্য এখনও কোনও নির্দিষ্ট বা অনুমোদিত চিকিৎসা নেই। রোগের লক্ষণ উপশমের জন্যই শুধুমাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”জ্বরের জন্য অ্যান্টিপাইরেটিক, নাকের লক্ষণের জন্য ডিকনজেস্ট্যান্ট, এবং পর্যাপ্ত জলীয় ও পুষ্টি বজায় রাখা – এই ধরনের লক্ষণ নিরাময়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়,” ডাঃ পাহুজা জানিয়েছেন।
ভারতের প্রস্তুতি
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (NCDC) শ্বাসতন্ত্রের ও মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়াও, ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (ICMR) নিশ্চিত করেছে যে দেশের কোথাও ব্যাপক প্রাদুর্ভাব নেই।
যদিও চীনে HMPV-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছে যে দেশে এখনও পর্যন্ত কোনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নেই। তবে তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে, জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সবাইকে সচেতন থাকা এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামগ্রিকভাবে, ভারত সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম বলে মনে হচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর কোনও কারণ নেই।