India-Poland Social Security Agreement: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন যে ভারত এবং পোল্যান্ড একটি সামাজিক সুরক্ষা চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই ঘোষণাটি তিনি ২০২৪ সালের ২১শে আগস্ট পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে করেন। এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলি নিয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা, যা উভয় দেশের প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করবে।সামাজিক সুরক্ষা চুক্তি বা Social Security Agreement (SSA) হল দুটি দেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি যা ক্রস-বর্ডার কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করে। এই ধরনের চুক্তি বিশ্বায়নের যুগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করে এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলি নিশ্চিত করে।ভারত-পোল্যান্ড SSA-র মূল উদ্দেশ্য হল ‘দ্বৈত কভারেজ’ এড়ানো এবং উভয় দেশের কর্মীদের সমানভাবে আচরণ করা, বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে।
এই চুক্তির অধীনে সাধারণত তিন ধরনের সুবিধা প্রদান করা হয়:
১. Detachment: এর মাধ্যমে দ্বৈত অবদান এড়ানো যায়। অর্থাৎ, যে কর্মীরা SSA থাকা কোনো দেশে কাজের জন্য যাচ্ছেন, তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হোস্ট দেশে সামাজিক সুরক্ষা অবদান করা থেকে মুক্ত থাকবেন, যদি তারা তাদের নিজ দেশে সামাজিক সুরক্ষা অবদান চালিয়ে যান।
২. Exportability: এর মাধ্যমে একজন কর্মী তার হোস্ট দেশে বা নিজ দেশে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাওয়ার বিকল্প বেছে নিতে পারেন, সুবিধাগুলিতে কোনো কমতি ছাড়াই।
৩. Totalisation: এর অধীনে, একজন কর্মীর বিদেশে প্রদত্ত সেবার সময়কাল সুবিধার যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য গণনা করা হয়, তবে প্রদানের পরিমাণ সেবার দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে সীমিত থাকে।এই চুক্তির ফলে ভারতীয় কর্মীরা পোল্যান্ডে কাজ করার সময় তাদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলি হারাবেন না। একইভাবে, পোলিশ কর্মীরাও ভারতে কাজ করার সময় তাদের সুবিধাগুলি বজায় রাখতে পারবেন। এটি উভয় দেশের মধ্যে শ্রম গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
ভারত ইতিমধ্যে ১৯টি দেশের সাথে SSA স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, জাপান, কোরিয়া, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, কুইবেক, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড। পোল্যান্ডের সাথে এই নতুন চুক্তি ভারতের SSA নেটওয়ার্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।ভারতের প্রথম SSA ছিল বেলজিয়ামের সাথে, যা ২০০৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০০৯ সালে কার্যকর হয়। এই চুক্তিগুলি ভারতীয় প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিদেশী কর্মীরা ভারতে প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) স্কিমের আওতায় ছিলেন না।২০০৮ সালে, ভারত সরকার প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং পেনশন স্কিমে বিশেষ ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, যাতে ‘আন্তর্জাতিক কর্মী’ (IW) নামে একটি নতুন শ্রেণীর কর্মী সংজ্ঞায়িত করা হয়। এর ফলে, প্রতিটি যোগ্য IW-কে ১ নভেম্বর ২০০৮ থেকে স্কিমগুলিতে তালিকাভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হয়। এটি ভারতকে অন্যান্য দেশগুলির সাথে SSA আলোচনা করার সুযোগ দেয়, যেখানে ভারতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী কর্মী রয়েছে।
ভারত-পোল্যান্ড SSA-র সম্ভাব্য প্রভাব:
১. শ্রম গতিশীলতা বৃদ্ধি: এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে শ্রম গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে, যা উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে।
২. সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা নিশ্চিতকরণ: প্রবাসী কর্মীরা তাদের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলি হারাবেন না, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়াবে।
৩. দ্বৈত করারোপণ এড়ানো: কর্মীদের আর উভয় দেশে সামাজিক সুরক্ষা অবদান করতে হবে না, যা তাদের আর্থিক বোঝা কমাবে।
৪. পেনশন সুবিধা: কর্মীরা তাদের পেনশন সুবিধাগুলি রপ্তানি করতে পারবেন, যা তাদের অবসরকালীন আয় নিশ্চিত করবে।
৫. দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সম্পর্ক: এই চুক্তি ভারত এবং পোল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
৬. দক্ষতা বিনিময়: দুই দেশের মধ্যে দক্ষতা ও জ্ঞানের বিনিময় বাড়বে, যা উভয় দেশের উন্নয়নে সহায়ক হবে।৭. বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ: এই চুক্তি উভয় দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে।ভারতে, সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলি বিভিন্ন আইন ও প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদান করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে কর্মচারী রাজ্য বীমা আইন, ১৯৪৮ (ESI Act)। এই আইনগুলি কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা প্রদান করে, যেমন স্বাস্থ্য বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা ইত্যাদি।ভারত-পোল্যান্ড SSA-র বিশদ বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে, অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের SSA-র ধরন অনুসরণ করে,
এই চুক্তিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
১. সংজ্ঞা: চুক্তিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ ও পরিভাষার সংজ্ঞা।
২. ব্যক্তিগত ক্ষেত্র: চুক্তিটি কোন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তার বিবরণ।
৩. বস্তুগত ক্ষেত্র: কোন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাগুলি এই চুক্তির আওতায় পড়বে।
৪. সমান আচরণ: উভয় দেশের নাগরিকদের সাথে সমান আচরণের নিশ্চয়তা।
৫. সুবিধা রপ্তানি: একজন ব্যক্তি কীভাবে তার সুবিধাগুলি অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারবেন।
৬. বীমা সময়কাল একত্রীকরণ: কীভাবে একজন ব্যক্তির উভয় দেশে কাজ করার সময়কাল গণনা করা হবে।
৭. প্রশাসনিক সহযোগিতা: দুই দেশের কর্তৃপক্ষ কীভাবে একে অপরের সাথে সহযোগিতা করবে।
৮. বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া: চুক্তিটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার বিবরণ।
মন্তব্য করুন