India Sixth Generation Fighter Jet: আধুনিক যুগের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর খবরটি এসেছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে। দেশটি এখন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির দিকে এগিয়ে চলেছে, যা পাকিস্তান ও চীনের জন্য সত্যিকারের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান শুধুমাত্র বর্তমানের সেরা F-35 লাইটনিং II এবং রাফাল যুদ্ধবিমানগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে না, বরং রুশিয়ার অত্যাধুনিক S-500 মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও এটি সনাক্ত করতে হিমশিম খাবে।
ভারতের এই মহাপরিকল্পনা কেবল একটি স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তব প্রযুক্তিগত সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তেজস যুদ্ধবিমানের প্রধান ডিজাইনার ডক্টর কোটা হরিনারায়ণের মতে, ভারত ইতিমধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত রয়েছে এমন একটি উন্নত যুদ্ধবিমান তৈরি করতে যা বিশ্বের বিমান যুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দেবে।
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান: একটি বিপ্লবী প্রযুক্তি
ফ্লাইং উইং ডিজাইনের অভূতপূর্ব সুবিধা
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর ফ্লাইং উইং ডিজাইন। এই বিশেষ নকশায় কোনো উল্লম্ব বা অনুভূমিক স্ট্যাবিলাইজার থাকবে না, যা সাধারণত বিমানের লেজের অংশে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, এই যুদ্ধবিমানের কোনো লেজই থাকবে না, যা এর স্টেলথ ক্ষমতাকে অভূতপূর্ব উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
ডক্টর হরিনারায়ণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, “একটি উইং-অনলি প্ল্যাটফর্ম উড়ানো মোটেই সহজ কাজ নয়—আপনাকে কোনো উল্লম্ব লেজ এবং অনুভূমিক লেজ ছাড়াই একটি উইং উড়াতে হবে—এবং আমরা এটি করতে পেরেছি”। এই অর্জন ভারতীয় বিমান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ
আগামীর এই যুদ্ধবিমানে থাকবে অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক যুদ্ধ ব্যবস্থা। এটি পাইলটকে দ্রুত হুমকির মোকাবেলা করতে, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং এমনকি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কিছু কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, এই বিমানগুলো ড্রোনের সাথে সমন্বয়ে কাজ করতে পারবে এবং একক পাইলট একসাথে একাধিক অপারেশন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। এই বৈশিষ্ট্য যুদ্ধের দক্ষতা ও কার্যকারিতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করবে।
ফ্রান্সের দর কমানোর পর ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত হতে চলেছে!
F-35 ও রাফালের তুলনায় ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব
স্টেলথ প্রযুক্তিতে অগ্রগতি
বর্তমানে বিশ্বের সেরা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে পরিচিত F-35 লাইটনিং II এবং ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধবিমান। কিন্তু ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এই দুটি বিমানকে ছাড়িয়ে যাবে তার উন্নত স্টেলথ ক্ষমতার কারণে।
ফ্লাইং উইং ডিজাইনের কারণে এই বিমানগুলো উন্নত রাডার সিস্টেমের কাছে কার্যত অদৃশ্য থাকবে। এর মানে হলো, শত্রু বাহিনীর রাডার এই বিমানগুলো সনাক্ত করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হবে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতকে অপ্রত্যাশিত সুবিধা দেবে।
পারফরম্যান্স ও ক্ষমতার তুলনা
ভারতীয় বিমান বাহিনীর ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের পরিকল্পিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:
- যুদ্ধ পরিসীমা: 3,000 কিলোমিটার (জ্বালানি পুনর্ভরণ ছাড়াই)
- পেলোড ক্ষমতা: 13 টন
- গতি: হাইপারসনিক (মাক 5 এর চেয়ে দ্রুত)
- উচ্চতা: 180-200 কিলোমিটার পর্যন্ত
এই বৈশিষ্ট্যগুলো চীনের J-20 যুদ্ধবিমানের 2,000 কিলোমিটার পরিসীমা এবং 11 টন পেলোড ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়। ফলে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে গভীর হামলার মিশন পরিচালনা করতে এই বিমান সক্ষম হবে।
S-500 মিসাইল সিস্টেমের বিরুদ্ধে ভারতের অগ্রগতি
S-500 এর ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা
রুশিয়ার S-500 প্রমিথিউস মিসাইল সিস্টেম বর্তমান বিশ্বের অন্যতম উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি 600 কিলোমিটার পর্যন্ত পরিসীমায় ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং 500 কিলোমিটার পর্যন্ত বিমান প্রতিরক্ষার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
S-500 সিস্টেম একসাথে 10টি হাইপারসনিক লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত ও আক্রমণ করতে পারে যেগুলো সেকেন্ডে 7 কিলোমিটার গতিতে চলমান। এর প্রতিক্রিয়ার সময় মাত্র 4 সেকেন্ড, যা S-400 সিস্টেমের 10 সেকেন্ডের তুলনায় অনেক কম।
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের বিশেষ সুবিধা
তবে ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ফ্লাইং উইং ডিজাইন এবং অভূতপূর্ব স্টেলথ ক্ষমতা S-500 এর মতো উন্নত সিস্টেমের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই বিমানগুলোর রাডার ক্রস-সেকশন এতই কম থাকবে যে, এমনকি S-500 এর বহু-ব্যান্ড ট্র্যাকিং রাডারও এগুলো সনাক্ত করতে কঠিন সময় পাবে।
গবেষণা ও উন্নয়নে ভারতের অগ্রগতি
DRDO ও AMCA প্রকল্প
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং এরোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) যৌথভাবে এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে কাজ করছে। অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (AMCA) প্রোগ্রামের আওতায় দুটি ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে: AMCA মার্ক-1 এবং AMCA মার্ক-2।
মার্ক-1 বর্তমান বিমানের অভাব পূরণের জন্য ডিজাইন করা হলেও, আরও উন্নত মার্ক-2 ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করবে এবং সম্পূর্ণভাবে দেশীয় সিস্টেমের উপর নির্ভর করবে।
ঘাতক (Ghatak) প্রকল্প
ভারত ঘাতক প্রোগ্রামের আওতায় ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধ প্রযুক্তি উন্নয়ন করছে, যা একটি মানববিহীন যুদ্ধ বিমান তৈরিতে ফোকাস করছে। এই প্রকল্পটি ADA এবং DRDO এর সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
ঘাতক হবে ভারতের প্রথম যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম যেটিতে স্টেলথ ক্ষমতা এবং ফ্লাইং উইং ডিজাইন রয়েছে। এটি কাভেরি ড্রাই ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে, যদিও ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের জন্য একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইঞ্জিন উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো 150-180 kN শক্তিসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরি করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রাথমিকভাবে, AMCA মার্ক-1 জেনারেল ইলেকট্রিকের F414 ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে। তবে মার্কিন সরবরাহকারীর বিলম্বের কারণে প্রকল্পের সময়সূচী প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেছে।
সময়সূচী ও উৎপাদন পরিকল্পনা
ভারতীয় বিমান বাহিনীর পরিকল্পনা অনুযায়ী, 2030 সালের মধ্যে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা হবে এবং 2040 সালের মধ্যে প্রোটোটাইপ প্রস্তুত হবে। এই সময়সূচী বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রোগ্রামগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেগুলো 2030-এর দশকের মাঝামাঝি কার্যকর মোতায়েনের লক্ষ্য রাখে।
রাফাল-সুখোই-তেজস: ভারতীয় বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে যে মারণাস্ত্র রয়েছে তা আপনাকে অবাক করবে!
পাকিস্তান ও চীনের জন্য কৌশলগত প্রভাব
আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে পরিবর্তন
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান উন্নয়ন দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। চীনের J-20 স্টেলথ ফাইটার এবং পাকিস্তানের J-35A অধিগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের এই উদ্যোগ আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
3,000 কিলোমিটার যুদ্ধ পরিসীমা এবং 13 টন পেলোড ক্ষমতা সহ এই বিমানগুলো ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে গভীর হামলার মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এটি ভারতকে তার সীমানার বাইরেও শক্তি প্রক্ষেপণের ক্ষমতা প্রদান করবে।
প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা
হাইপারসনিক মিসাইল এবং লেজার অস্ত্র সিস্টেমের মতো পরবর্তী প্রজন্মের অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা এই বিমানগুলোকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত সেন্সর ফিউশন এবং 360-ডিগ্রি পরিস্থিতি সচেতনতার মতো উন্নত অ্যাভিওনিক্স এই বিমানগুলোকে হাইপারসনিক মিসাইল এবং সোয়ার্ম ড্রোনের মতো উদীয়মান হুমকি মোকাবেলায় সক্ষম করবে।
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্প কেবলমাত্র একটি প্রতিরক্ষা কর্মসূচি নয়, বরং আগামীর বিমান যুদ্ধে ভারতের নেতৃত্ব নিশ্চিত করার একটি জাতীয় মিশন। এই প্রকল্পের সফলতা DRDO, HAL, বেসরকারি শিল্প এবং একাডেমিয়ার মধ্যে একটি ইকোসিস্টেম-ব্যাপী প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে।
ভারতের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান উন্নয়ন প্রকল্প নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ যা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। এই অত্যাধুনিক বিমানগুলো শুধুমাত্র F-35 এবং রাফালের মতো বর্তমান প্রজন্মের সেরা যুদ্ধবিমানগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে না, বরং S-500 এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ফ্লাইং উইং ডিজাইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং অভূতপূর্ব স্টেলথ ক্ষমতার সমন্বয়ে তৈরি এই যুদ্ধবিমান ভারতকে পরবর্তী দশকগুলোতে আকাশ যুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা দেবে। পাকিস্তান ও চীনের জন্য এটি সত্যিকারের একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে, যা আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে।