India Population Data 2024: ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ভারতে শুরু হতে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত জনগণনা। গত ১৩ বছর ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্মসূচি স্থগিত ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের পর এই বৃহৎ প্রকল্প শুরু হবে। জনগণনার মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যা, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
জনগণনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জনগণনা হল একটি দেশের জনসংখ্যা ও জীবনযাত্রার মানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিত্র। এর মাধ্যমে সরকার জানতে পারে:
- দেশের মোট জনসংখ্যা
- শিক্ষার হার
- লিঙ্গ অনুপাত
- শহর ও গ্রামের জনসংখ্যার অনুপাত
- বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির জনসংখ্যা
- অর্থনৈতিক অবস্থা
এই তথ্যগুলি সরকারের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্প ও বরাদ্দ নির্ধারণে জনগণনার তথ্য ব্যবহৃত হয়।
কেন এতদিন স্থগিত ছিল?
২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে বারবার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত প্রশাসনিক সীমানা স্থির রাখার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল।এছাড়া জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (NPR) হালনাগাদ করার বিষয়টিও জনগণনার সাথে যুক্ত হওয়ায় বিলম্ব হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল NPR নিয়ে আপত্তি তুলেছিল।
কবে শুরু হবে জনগণনা?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি জানিয়েছেন, “উপযুক্ত সময়ে জনগণনা করা হবে। যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তখন আমরা ঘোষণা করব।”সূত্র অনুযায়ী, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর অক্টোবর মাস থেকে জনগণনা শুরু হতে পারে। এর আগে প্রশাসনিক প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
India current population 2024: জনসংখ্যার নিরিখে চীনকে ছাড়িয়ে
জনগণনায় কী কী তথ্য সংগ্রহ করা হবে?
জনগণনায় দুটি পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়:
হাউস লিস্টিং পর্যায়:
- বাড়ির ধরন ও অবস্থা
- পানীয় জলের উৎস
- বিদ্যুৎ সংযোগ
- শৌচাগারের ব্যবস্থা
- রান্নার জ্বালানি
- যানবাহন, টেলিভিশন, কম্পিউটার ইত্যাদির মালিকানা
জনসংখ্যা গণনা পর্যায়:
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- লিঙ্গ ও বয়স
- জাতি ও ধর্ম
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশা
- প্রতিবন্ধিতা
- বৈবাহিক অবস্থা
- ভাষা
- অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য
এছাড়া এবারের জনগণনায় প্রথমবারের মতো “ধর্মহীন” বিকল্পও থাকবে।
জনগণনার পদ্ধতি
এবারের জনগণনা সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হবে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। নাগরিকরা নিজেরাও অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।প্রায় ৩ লক্ষ সরকারি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে জনগণনার কাজে নিয়োগ করা হবে। সারা দেশে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ১২ মাস সময় লাগবে।
জনগণনার প্রভাব
রাজনৈতিক প্রভাব:
- লোকসভা ও বিধানসভা আসন বণ্টন পুনর্নির্ধারণ করা হবে
- মহিলা সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নের পথ খুলবে
অর্থনৈতিক প্রভাব:
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে
- বিভিন্ন প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ পুনর্নির্ধারণ করা হবে
সামাজিক প্রভাব:
- জাতি ভিত্তিক জনগণনার দাবি উঠতে পারে
- ধর্মীয় জনসংখ্যার হার নিয়ে বিতর্ক হতে পারে
Indian Railway: হারানো লাগেজের হদিশ এখন আপনার হাতের মুঠোয়
চ্যালেঞ্জ
- বিশাল জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ
- ডিজিটাল পদ্ধতিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
- তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা
- সময়মত সম্পন্ন করা
১৩ বছর পর ভারতে আবার জনগণনা শুরু হতে যাচ্ছে। এটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জনগণনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ভারতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এত বড় প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ও নাগরিক সকলের সহযোগিতায় এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।