India to Establish Cyber Commandos 2029: ভারত সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫,০০০ ‘Cyber Commando’ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাটি করা হয়েছে Indian Cyber Crime Coordination Centre (I4C)-এর প্রথম প্রতিষ্ঠা দিবসে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন যে সাইবার নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার একটি অপরিহার্য অংশ।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাইবার অপরাধ ও হামলার ঝুঁকি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। র্যানসমওয়্যার আক্রমণ, ফিশিং প্রতারণা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাইবার হামলার মতো হুমকি মোকাবেলায় শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার Cyber Commando বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা হবেন অত্যন্ত দক্ষ পুলিশ অফিসার যারা দ্রুত সাইবার হামলা ও অপরাধের মোকাবেলা করতে পারবেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে সাইবার হামলা প্রতিরোধ করা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামোকে সুরক্ষিত রাখা।
Paris Olympic 2024: প্যারিসের অলিম্পিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে ভারতীয় K9 বাহিনী
অমিত শাহ বলেছেন, “সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। প্রযুক্তি মানবজাতির জন্য একটি বরদান, যা অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে, কিন্তু এটি অনেক হুমকিও নিয়ে আসে। সাইবার নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা এটা ছাড়া আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে পারব না।”
Cyber Commando বাহিনী ছাড়াও সরকার আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. Suspect Registry: এটি একটি জাতীয় স্তরের ডাটাবেস যেখানে সাইবার ও আর্থিক অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এই তথ্য ব্যবহার করতে পারবে।
২. Cyber Fraud Mitigation Centre (CFMC): এটি একটি কেন্দ্র যেখানে ব্যাংক, আইটি মধ্যস্থতাকারী, টেলিকম প্রদানকারী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি একসাথে কাজ করবে অনলাইন আর্থিক অপরাধ মোকাবেলায়।
৩. Samanvaya Platform: এটি একটি ওয়েব-ভিত্তিক পোর্টাল যা সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ, অপরাধ ম্যাপিং এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতার জন্য ব্যবহৃত হবে।
সাইবার অপরাধের পরিসংখ্যান দেখলে এই উদ্যোগের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়। ২০২৩ সালে ভারতে Citizen Financial Cyber Fraud Reporting Management System (CFCFMS)-এ মোট ১,১২৮,২৫৬টি সাইবার অপরাধের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশে সর্বোচ্চ ১৯৭,৫৪৭টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল, আর মহারাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ৯.৯ বিলিয়ন রুপির প্রতারণা হয়েছিল।
Cyber Commando বাহিনী গঠনের ফলে ভারতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বিশেষ বাহিনী শুধু সাইবার হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে না, বরং সম্ভাব্য হুমকি চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা Cyber Commando উদ্যোগের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হল উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীদের একটি মূল দল তৈরি করা যারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (ICT) অবকাঠামো নিরাপত্তা, ঘটনার প্রতিক্রিয়া এবং ডিজিটাল ফরেনসিক্সের জন্য দায়ী থাকবে তাদের নিজস্ব সংস্থা এবং সারা দেশে।”
Cyber Commando কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ হওয়ার কথা রয়েছে। সেদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচিত প্রথম ব্যাচের Cyber Commando-দের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত সরকার স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে তারা সাইবার নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতি ও অনলাইন লেনদেনের যুগে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী।
ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩১ মার্চ ২০১৪ সালে যেখানে ২৫ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৯৫ কোটিতে পৌঁছেছে। ডেটা ব্যবহারও বেড়েছে। আগে গড় ব্যবহার ছিল ০.২৬ জিবি, যা এখন ৭৮ গুণ বেড়ে ২০.২৭ জিবি হয়েছে। বিশ্বের ডিজিটাল লেনদেনের ৪৬% এখন ভারতে হচ্ছে।
অমিত শাহ বলেছেন, “যখন ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট ও লেনদেন বাড়ে, তখন ডিজিটাল প্রতারণা থেকে সুরক্ষার প্রয়োজনও অনেক বেড়ে যায়।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে ২০১৪ সালে দেশের মাত্র ৬০০টি পঞ্চায়েত ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ছিল, আজ সেই সংখ্যা বেড়ে ২,১৩,০০০ হয়েছে।
I4C-এর সবচেয়ে বড় সাফল্য হল ১৯৩০ জাতীয় হেল্পলাইন নম্বর চালু করা। অমিত শাহ সব রাজ্য সরকার ও স্টেকহোল্ডারদের এই নম্বরটি জনপ্রিয় করার দায়িত্ব দিয়েছেন। I4C এ পর্যন্ত ৬০০-এরও বেশি পরামর্শ জারি করেছে এবং সাইবার অপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, মোবাইল অ্যাপ ও অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে।
Cyber Commando বাহিনী গঠনের এই উদ্যোগ ভারতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিকদেরও সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। তবে এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে কতটা কার্যকরভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হয় তার উপর।
সামগ্রিকভাবে, Cyber Commando বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামো ও নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকির মুখে এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে স্বাগত। তবে এর পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
Cyber Commando বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম
Cyber Commando বাহিনীর সদস্যদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
১. উন্নত সাইবার নিরাপত্তা কৌশল
২. ডিজিটাল ফরেনসিক
৩. ম্যালওয়্যার বিশ্লেষণ
৪. নেটওয়ার্ক সুরক্ষা
৫. ক্রিপ্টোগ্রাফি
৬. সাইবার আইন ও নীতি
এই বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন থাকবেন এবং ২৪/৭ নজরদারি করবেন। তারা সম্ভাব্য সাইবার হামলা চিহ্নিত করবেন, দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাবেন এবং ক্ষতি কমাতে কাজ করবেন।
সম্ভাব্য প্রভাব
Cyber Commando বাহিনী গঠনের ফলে নিম্নলিখিত ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে:
১. সাইবার অপরাধ হ্রাস: উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও তদন্তের ক্ষমতা বাড়বে।
২. দ্রুত প্রতিক্রিয়া: সাইবার হামলার ক্ষেত্রে দ্রুত ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হবে, যা ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে।
৩. গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা: জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামো আরও ভালভাবে সুরক্ষিত থাকবে।
৪. আর্থিক প্রতারণা হ্রাস: অনলাইন আর্থিক প্রতারণা প্রতিরোধে এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৫. সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি: এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে।
ভারতে র্যানসমওয়্যার হামলায় ৩০০টি ছোট ব্যাঙ্কের পেমেন্ট সিস্টেম বন্ধ
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
Cyber Commando বাহিনী গঠন ও পরিচালনায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
১. দক্ষ জনবল: উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল নিয়োগ ও ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সমাধান: সরকার বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে সহযোগিতা করে দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারে। আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে মেধাবী প্রার্থীদের আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
২. দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি: সাইবার অপরাধীরা ক্রমাগত নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
সমাধান: নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে Cyber Commando-দের আপডেট রাখতে হবে। গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
৩. আইনি জটিলতা: সাইবার অপরাধ প্রায়ই আন্তঃসীমান্ত হয়, যা আইনি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
সমাধান: আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। সাইবার আইন আপডেট করতে হবে যাতে নতুন ধরনের অপরাধ মোকাবেলা করা যায়।
৪. গোপনীয়তার উদ্বেগ: অতিরিক্ত নজরদারির ফলে নাগরিকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকে।
সমাধান: স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে যাতে নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
Cyber Commando বাহিনী গঠনের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অনেক দেশই এধরনের বিশেষায়িত সাইবার নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করেছে। উদাহরণস্বরূপ:
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: US Cyber Command
২. চীন: Strategic Support Force
৩. রাশিয়া: Information Operations Forces
৪. ইসরায়েল: Unit 8200
ভারতের Cyber Commando বাহিনী এই দেশগুলির সাথে সহযোগিতা করে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
Cyber Commando বাহিনী গঠনের উদ্যোগ ভারতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। এটি শুধু সাইবার হামলা প্রতিরোধ করবে না, বরং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশেও সহায়ক হবে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে কতটা কার্যকরভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হয় তার উপর।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজকেও এই প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত একটি নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
Cyber Commando বাহিনী গঠনের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে ভারত সাইবার নিরাপত্তাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো, অর্থনীতি ও নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। আগামী দিনগুলিতে এই উদ্যোগের ফলাফল লক্ষ্য করার বিষয় হবে এবং এর সাফল্য ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
