India vs Zimbabwe 2nd T20I: ভারতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ তারকারা জিম্বাবোয়েকে একহাত নিয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১০০ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নিল। হারারে স্পোর্টস ক্লাবে রবিবার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিল। সেই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয় যখন অভিষেক শর্মার ঝড়ো সেঞ্চুরির সৌজন্যে ভারত ৪ উইকেটে ২৩৭ রান তোলে। জবাবে জিম্বাবোয়ে মাত্র ১৩৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।
প্রথম ম্যাচে ১৩ রানে হেরে যাওয়া ভারত এই জয়ের মাধ্যমে ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়ে আনল। অভিষেক শর্মার অসাধারণ সেঞ্চুরি ছাড়াও রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও রিঙ্কু সিংয়ের অর্ধশতরান ভারতীয় ইনিংসকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছিল। পরে বোলাররাও দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে জিম্বাবোয়ে ব্যাটসম্যানদের ধোঁয়া পাকিয়ে দেন।
অভিষেকের ঝড়ো সেঞ্চুরি
মাত্র দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলতে নেমে অভিষেক শর্মা ৪৬ বলে ১০০ রান করে ইতিহাস গড়লেন। এর আগে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যান এত কম বলে সেঞ্চুরি করেননি। তাঁর ইনিংসে ছিল ১১টি চौকা ও ৯টি ছক্কা। অভিষেক শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন। প্রথম ওভারেই তিনি দুটি ছক্কা মেরে নিজের অভিপ্রায় স্পষ্ট করে দেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
অভিষেক বললেন, “আমি শুধু নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলার চেষ্টা করেছি। প্রথম ম্যাচে আউট হয়ে গিয়েছিলাম, তাই আজ নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে গেলাম। দলের জন্য যোগ্য অবদান রাখতে পেরে খুব খুশি।”
গায়কোয়াড় ও রিঙ্কুর সহায়তা
রুতুরাজ গায়কোয়াড় ৩৪ বলে ৫৭ রান করে অভিষেককে দারুণ সঙ্গ দিলেন। তাঁদের জুটিতে ১১৫ রান এল মাত্র ৫৮ বলে। পরে রিঙ্কু সিং ২২ বলে ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ভারতকে ২০০ রানের বেশি নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। এই দুজনের অবদান ছাড়া ভারত হয়তো এত বড় স্কোর করতে পারত না।
বোলারদের দাপট
ব্যাটসম্যানদের পর বোলাররাও দাপট দেখালেন। অভিষেক শর্মা ব্যাটের পর বল হাতেও চমক দেখালেন। তিনি ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিলেন। মুকেশ কুমার ও অভেশ খান দুজনেই ২টি করে উইকেট পেলেন। রবি বিষ্ণোই ও ওয়াশিংটন সুন্দরও ১টি করে উইকেট তুলে নিলেন।
জিম্বাবোয়ের পক্ষে লুক জংওয়ে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন। কিন্তু তা দলকে হারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি।
অধিনায়কদের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিল বললেন, “প্রথম ম্যাচের হারের পর আমরা জানতাম যে আজ জিততেই হবে। অভিষেক, রুতুরাজ ও রিঙ্কু দারুণ খেলেছে। বোলাররাও চমৎকার পারফরম্যান্স দিয়েছে। এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।”
জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা স্বীকার করলেন, “আজ আমরা সব দিক থেকেই পিছিয়ে ছিলাম। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা দারুণ খেলেছে। আমাদের বোলিং ও ফিল্ডিং উন্নতি করতে হবে।”
পরবর্তী ম্যাচের দিকে নজর
এই জয়ের পর ভারত সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরে এসেছে। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৯ জুলাই। সেই ম্যাচে জয়ী দল সিরিজে এগিয়ে যাবে। ভারতীয় দল এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে চাইবে, অন্যদিকে জিম্বাবোয়ে ঘরের মাঠে পুনরায় লড়াই করে জয়ের পথে ফিরতে চাইবে।
ভারতের এই দাপুটে জয় দেখিয়ে দিল যে দলের তরুণ খেলোয়াড়রা কতটা প্রতিভাবান। অভিষেক শর্মার মতো নতুন তারকাদের আবির্ভাব ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এই সিরিজ ভারতের কাছে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করার সুযোগ। প্রথম ম্যাচের হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে এমন দাপট দেখানো প্রমাণ করে যে এই দল চাপের মুহূর্তেও কীভাবে নিজেদের সেরাটা দিতে পারে।
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ কেমন ছিল দ্বিতীয় ম্যাচে
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ নিম্নরূপ ছিল:
১. অভিষেক শর্মা
২. শুভমান গিল (অধিনায়ক)
৩. ঋতুরাজ গায়কোয়াড়
৪. সাই সুধারসন (অভিষেক)
৫. রিয়ান পারাগ
৬. রিঙ্কু সিং
৭. ধ্রুব জুরেল (উইকেটরক্ষক)
৮. ওয়াশিংটন সুন্দর
৯. রবি বিষ্ণোই
১০. আবেশ খান
১১. মুকেশ কুমার
প্রথম ম্যাচের তুলনায় একটি পরিবর্তন করা হয়েছিল। বাঁহাতি পেসার খালিল আহমেদের জায়গায় ব্যাটসম্যান সাই সুধারসনকে দলে নেওয়া হয়। সুধারসন এই ম্যাচে তাঁর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক অভিষেক করেন।
পরবর্তী তিনটি ম্যাচে আরও রোমাঞ্চকর লড়াই দেখার অপেক্ষায় থাকল ক্রিকেট প্রেমীরা। ভারত ও জিম্বাবোয়ে উভয় দলই নিজেদের সেরাটা দিয়ে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। এই সিরিজ শেষে দুই দলেরই অনেক কিছু শেখার সুযোগ থাকবে, যা ভবিষ্যতে তাদের উপকারে আসবে।