INDIAN 2 Movie Review: ২৮ বছর আগে যখন শঙ্কর পরিচালিত ‘ইন্ডিয়ান’ মুক্তি পেয়েছিল, তখন এটি তামিল সিনেমার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। কমল হাসানের অসাধারণ অভিনয়, শঙ্করের দৃষ্টিনন্দন পরিচালনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। এবার, ২০২৪ সালের ১২ জুলাই, সেই কালজয়ী চলচ্চিত্রের সিক্যুয়েল ‘ইন্ডিয়ান ২’ মুক্তি পেল। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এতদিন পর ফিরে আসা সেনাপতি কি আবারও দর্শকদের মন জয় করতে পারলেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক এই বহুপ্রতীক্ষিত সিক্যুয়েলের বিস্তারিত।
‘ইন্ডিয়ান ২’ এর গল্প শুরু হয় চিত্র অরবিন্দন (সিদ্ধার্থ) নামে একজন ইউটিউবারকে কেন্দ্র করে, যিনি ‘বার্কিং ডগস’ নামে একটি চ্যানেল চালান। এই চ্যানেলে তিনি ও তার সহকর্মীরা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ ও আমলাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরি করেন। একদিন একজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পর তারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। এরপর চিত্রের বান্ধবী দিশা (রকুল প্রীত সিং) তাদের জামিন করায় এবং বোঝায় যে এভাবে কিছুই পরিবর্তন হবে না। তখন চিত্র বুঝতে পারেন যে দেশকে বাঁচাতে হলে সেনাপতির ফিরে আসা প্রয়োজন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় #ComeBackIndian ট্রেন্ড করান।
অবশেষে তাইওয়ানে লুকিয়ে থাকা ১০৬ বছর বয়সী সেনাপতি (কমল হাসান) ভারতে ফিরে আসেন। তিনি যুবকদের নিজেদের বাড়ি থেকে দুর্নীতি দূর করার আহ্বান জানান। কিন্তু এর ফলে অনেক পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। এরপর সেনাপতি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্তদের শায়েস্তা করতে শুরু করেন। তিনি বর্ম কলা ব্যবহার করে অপরাধীদের শাস্তি দেন।
চলচ্চিত্রটিতে শঙ্কর তার চিরাচরিত স্টাইলে বড় বড় সেট, বিদেশে শুট করা গান এবং বিশাল অ্যাকশন দৃশ্য ব্যবহার করেছেন। কমল হাসানের মেকআপ ও প্রস্থেটিক্স অসাধারণ, যা তাকে সত্যিকারের ১০০+ বছর বয়সী দেখাচ্ছে। অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্রনের সঙ্গীত পরিচালনা ছবিটিকে আরও মাত্রা যোগ করেছে।
তবে সমালোচকদের মতে, ‘ইন্ডিয়ান ২’ এর গল্প ও চরিত্র চিত্রণ প্রথম ছবির তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। ১৯৯৬ সালের ভারতবর্ষ এবং ২০২৪ সালের ভারতবর্ষের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও চলচ্চিত্রটি সেই একই পুরনো সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরেছে। ঘুষ, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবহেলা, শিক্ষা প্রতারণা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলেও নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো হয়নি।
দ্য হিন্দু পত্রিকার সমালোচনা অনুযায়ী, “শঙ্করের ছবিতে সাধারণত যেসব ধারণা কাজ করে, তার বেশিরভাগই এখানে ব্যর্থ হয়েছে কারণ আগ্রহহীন উপস্থাপনা ছবিটিকে দীর্ঘায়িত করেছে।” ফিল্ম কম্পানিয়নের সমালোচক মন্তব্য করেছেন, “সিক্যুয়েলটি গভীর দ্বৈততার জন্য কোনো জায়গা রাখেনি। এটি ‘সামাজিক মিডিয়া’ এবং ‘বর্ম কলা’র মতো বিপ্লবের ‘অস্ত্র’ এর উপর ফোকাস করেছে বিপ্লবের বদলে।”
তবে অভিনয়ের দিক থেকে কমল হাসান, সিদ্ধার্থ, এসজে সূর্য সহ সকল শিল্পীই প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ইন্ডিয়া টিভি নিউজের সমালোচনায় বলা হয়েছে, “কমল হাসান যেকোনো কিছু করতে পারেন। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা (‘কালকি ২৮৯৮ এডি’তে ইয়াস্কিন এবং ‘ইন্ডিয়ান ২’তে সেনাপতি) অসাধারণ।”
চলচ্চিত্রটির দৈর্ঘ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় ৩ ঘণ্টার এই ছবিটি অনেকেই দীর্ঘ মনে করেছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, পরিচালক শঙ্কর ইতিমধ্যে ছবির দৈর্ঘ্য ২০ মিনিট কমিয়েছেন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে।
উল্লেখযোগ্য যে, ‘ইন্ডিয়ান ২’ একটি ত্রয়ী চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় পর্ব। তৃতীয় পর্ব ‘ইন্ডিয়ান ৩’ আগামী বছর মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এই ছবিতে দেখানো হয়েছে যে সেনাপতি এখনও জীবিত এবং তৃতীয় পর্বে তিনি আবার ফিরে আসবেন।
‘ইন্ডিয়ান ২’ নিঃসন্দেহে একটি মহাকায় প্রযোজনা, যেখানে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অসাধারণ কাজ করা হয়েছে। কিন্তু গল্প ও চরিত্র চিত্রণের দুর্বলতা ছবিটিকে প্রথম পর্বের সাফল্য থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রেখেছে। তবুও কমল হাসানের অনবদ্য অভিনয় এবং শঙ্করের বিশাল ক্যানভাসে তৈরি দৃশ্যগুলো দর্শকদের আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা যায়। এখন দেখার বিষয়, ‘ইন্ডিয়ান ৩’ কতটা উন্নতি করতে পারে এবং ত্রয়ী চলচ্চিত্রের সমাপ্তি ঘটাতে পারে কি না।