ভারতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। গত ২৮শে জুন, ২০২৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) অবস্থানরত ভারতীয় নভোচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলেছেন। এই ঐতিহাসিক কথোপকথনে শুভাংশু শুক্লা জানিয়েছেন যে তিনি প্রতিদিন 16 sunrises 16 sunsets দেখতে পান, যা পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি অকল্পনীয় অভিজ্ঞতা। ৪১ বছর পর একজন ভারতীয় মহাকাশে গিয়েছেন এবং প্রথমবারের মতো কোনো ভারতীয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রেখেছেন। Axiom-4 মিশনের অংশ হিসেবে এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং সমগ্র ভারতবর্ষের গর্বের বিষয়।
ISS-এ জীবনযাত্রার অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে জীবনযাত্রা পৃথিবীর জীবনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। শুভাংশু শুক্লা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে সেখানে প্রতিদিন 16 sunrises 16 sunsets দেখা যায়। এর কারণ হলো ISS প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবীর চারপাশে একবার পূর্ণ কক্ষপথ সম্পন্ন করে। ২৮,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে ছুটে চলা এই মহাকাশ স্টেশনটি ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীকে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে।
মাইক্রো-গ্র্যাভিটির চ্যালেঞ্জ
মহাকাশে জীবনযাত্রার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মাইক্রো-গ্র্যাভিটি বা অণুমাধ্যাকর্ষণ। শুভাংশু শুক্লা বলেছেন, “এখানে ঘুমানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ মেঝেতে ঘুমাতে পারে, ছাদেও যেতে পারে কিন্তু এখানে এমন কিছুই নেই।” তিনি আরও জানান যে কথা বলার সময়ও তার পা বাঁধা থাকে, নইলে তিনি ভেসে উঠে যেতেন।
ঐতিহাসিক মিশনের পূর্ণ বিবরণ
গত ২৬শে জুন Axiom-4 মিশনের অংশ হিসেবে Dragon ক্যাপসুলে চড়ে শুভাংশু শুক্লা ISS-এ পৌঁছেছেন। NASA-র কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণের পর ২৮ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ISS-এর সাথে সফল ডকিং সম্পন্ন হয়। বিকেল ৪টা ২ মিনিটে সফট ডকিং এবং ৪টা ১৬ মিনিটে সম্পূর্ণ ডকিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
গ্রেস কল সাইনের তাৎপর্য
শুভাংশু শুক্লার কল সাইন হলো “Grace”। এই মিশনে তিনি Mission Pilot হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সাথে আরো তিনজন আন্তর্জাতিক নভোচারী রয়েছেন।
পৃথিবী থেকে দেখা মহাকাশের দৃশ্য
প্রতিদিন 16 sunrises 16 sunsets এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
ISS যখন পৃথিবীর আলোকিত অংশ থেকে ছায়া অংশে প্রবেশ করে, তখন নভোচারীরা সূর্যাস্ত দেখতে পান। আবার ছায়া থেকে আলোকিত অংশে ফিরে এলে সূর্যোদয় দেখা যায়। প্রতিটি চক্রে ৪৫ মিনিট সূর্যালোক এবং ৪৫ মিনিট অন্ধকার থাকে। এভাবে একদিনে ১৬ বার এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখার সুযোগ পান নভোচারীরা।
পৃথিবীর অপরূপ দৃশ্য
শুভাংশু শুক্লা জানিয়েছেন যে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে সম্পূর্ণ এক দেখায়, কোনো সীমানা চোখে পড়ে না। তিনি বলেছেন, “ভারতকে সত্যিই খুব জমকালো, খুব বড় দেখায়, মানচিত্রে যতটা দেখি তার চেয়ে অনেক বেশি বড়।” হাওয়াইয়ের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তিনি এই অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করেছেন।
মহাকাশে ভারতীয় খাবারের স্বাদ
প্রধানমন্ত্রী যখন জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি সাথে নিয়ে যাওয়া গাজরের হালুয়া খেয়েছেন কিনা, শুভাংশু শুক্লা জানান যে তিনি গাজরের হালুয়া, মুগ ডালের হালুয়া এবং আমরস নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্যান্য দেশের সহযোগী নভোচারীরাও ভারতের সমৃদ্ধ রন্ধনশিল্পের স্বাদ নিক। সবাই একসাথে এই খাবার খেয়েছেন এবং সকলেই তা পছন্দ করেছেন।
ISS-এর জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জসমূহ
শারীরিক অভিযোজনের সমস্যা
মাইক্রো-গ্র্যাভিটিতে মানবদেহের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। পেশীর ভর কমে যায়, হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পায়। এজন্য নভোচারীদের প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হয়। শুভাংশু শুক্লা জানিয়েছেন যে এক বছর ধরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরও মহাকাশে গিয়ে সবকিছু আলাদা মনে হয়েছে।
ঘুমের সমস্যা
মহাকাশে ঘুমানো একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীতে মানুষ গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমায়, কিন্তু ISS-এ নভোচারীরা গড়ে ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমাতে পারেন। প্রতিদিন 16 sunrises 16 sunsets দেখার কারণে প্রাকৃতিক ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়।
গগনযান মিশন ২০২৪: ভারতের মহাকাশ অভিযানের অজানা রহস্য ফাঁস!
ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির নতুন দিগন্ত
গগনযান মিশনের প্রস্তুতি
প্রধানমন্ত্রী শুভাংশু শুক্লাকে “বাড়ির কাজ” দিয়েছেন। গগনযান মিশন এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ভারতের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরি করতে হবে এবং চাঁদে ভারতীয় নভোচারী অবতরণের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। শুভাংশু শুক্লার মহাকাশের অভিজ্ঞতা এই ভবিষ্যৎ মিশনগুলোর জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হবে।
যুবসমাজের জন্য অনুপ্রেরণা
শুভাংশু শুক্লা দেশের যুবসমাজকে বার্তা দিয়েছেন, “আকাশ কখনোই সীমা নয়, আমার জন্য নয়, তোমাদের জন্য নয়, ভারতের জন্যও নয়।” তিনি বলেছেন যে নিজের ভবিষ্যৎ সঠিকভাবে গড়লে দেশের ভবিষ্যৎও ভালো হবে।
ISS-এর প্রযুক্তিগত বিস্ময়
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি একটি ছয় শোবার ঘরের বাড়ির চেয়েও বড়, যেখানে ছয়টি ঘুমানোর কক্ষ, দুটি বাথরুম, একটি জিম এবং ৩৬০ ডিগ্রি দর্শনীয় জানালা রয়েছে। সৌর প্যানেলের বিস্তৃতি ৩৫৬ ফুট, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমান এয়ারবাস A380 এর চেয়েও লম্বা।
গবেষণা কার্যক্রম
ISS-এর ক্রুরা সপ্তাহে ১৬০ ম্যান-আওয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যয় করেন। বাকি সময় রক্ষণাবেক্ষণ, স্টেশন নিয়ন্ত্রণ এবং স্পেসওয়াকে কাটে। রবিবার সাধারণত বিশ্রামের দিন হলেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু থাকে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
শুভাংশু শুক্লার এই ঐতিহাসিক যাত্রা ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এটি গগনযান মিশনের সাফল্যের প্রথম অধ্যায়। ভারত এখন শুধু উড়বে না, ভবিষ্যতের ফ্লাইটের জন্য লঞ্চপ্যাডও তৈরি করবে।
ISS-এ ভারতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে একটি গর্বের মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে। শুভাংশু শুক্লা জানিয়েছেন যে তার পিছনে দৃশ্যমান ভারতীয় জাতীয় পতাকা তার আগমনের পরেই উত্তোলন করা হয়েছে, যা তাকে অপার গর্বে ভরিয়ে দিয়েছে।
মহাকাশে প্রতিদিন 16 sunrises 16 sunsets দেখার এই অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা শুধু শুভাংশু শুক্লার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং পুরো ভারতবর্ষের অগ্রগতির প্রতীক। তার এই যাত্রা দেশের প্রতিটি শিশু ও যুবকের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে আকাশই সীমা নয়, সীমা অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে ভারতের নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন এবং চাঁদে মানুষ পাঠানোর স্বপ্ন এখন আর অধরা নয়, বরং বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।